• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৭, ২০১৯, ০৯:২৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৮, ২০১৯, ০৩:১০ পিএম

দুদকে গরহাজির

তলব নয়, এবার হাওলাদারকে ‘নোটিশ’ দেবে দুদক

তলব নয়, এবার হাওলাদারকে ‘নোটিশ’ দেবে দুদক
জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার-ফাইল ছবি

● তিনবার তলব করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

● পাঁচ বছরে আরও চারটি ল্যান্ড ক্রুজারের মালিক

● আয় বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা

● নিজের নামে ৭ কোটি ৭০ লাখ ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার বন্ড


আগে কয়েক দফা তলব করলেও তাতে সাড়া না দেয়ায় এবার জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে ‘নোটিশ’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ২৩ মে (বৃহস্পতিবার) কমিশন বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি সপ্তাহেই হাওলাদার বরাবর নোটিশ পাঠানো হতে পারে। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য দৈনিক জাগরণকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, আগে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ‘তলব’ করা হলেও রুহুল আমিন হাওলাদার দুদকে হাজির হননি। তাই এবার আর তাকে তলব না করে সরাসরি সম্পদের বিবরণী দাখিলের জন্য ‘নোটিশ’ দেয়া হবে।

সর্বশেষ গত ২০ মে দুদকের তৃতীয় তলবে গরহাজির থাকেন এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

জানা যায়, তৃতীয় দফায় তলবের পর দুদকে চিঠি পাঠিয়ে জাপার সাবেক মহাসচিব বলেন, ওমরাহ করতে সৌদি আরব যাওয়ার কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারবেন না। এ জন্য ঈদুল ফিতরের পর পর্যন্ত সময় চেয়ে দুদকে আবেদন করেন তিনি।

এর আগে গত ১৪ মে (মঙ্গলবার) শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদের সই করা নোটিশে ২০ মে (সোমবার) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে রুহুল আমিন হাওলাদারকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। এর আগেও দুইবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে তলব করে দুদক। তবে হাওলাদার দুদকের সেই তলবের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে হেরে যান রুহুল আমিন হাওলাদার। এরপর তৃতীয়বারের মতো তাকে সশরীরে কার্যালয়ে হাজির হতে বলে দুদক।

দুদকের উপ-পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, অভিযোগটি আইনি প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তির জন্য অভিযোগ সংশ্লিষ্টকে দুদকের তলবে আসা উচিত। ‘গত (২০ মে) সোমবার তিনি (রুহুল আমিন) দুদকে হাজির না হয়ে চিঠি পাঠিয়ে ঈদের পরে হাজির হবেন বলে জানিয়েছেন। ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।’ 

এর আগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুহুল আমিন হাওলাদারকে প্রথম তলব করে দুদক। কিন্তু ওই সময় নির্বাচনের প্রস্তুতির কারণ দেখিয়ে দুদকে হাজির না হয়ে হাজিরা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি। এরপর তাকে ফের চিঠি পাঠান দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমদ। চিঠিতে হাওলাদারকে গত ২৮ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু ওই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন হাওলাদার। পরে আদালত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে চার সপ্তাহের জন্য তা স্থগিত করে দেন। এরপর ওই স্থগিতাদেশটি গত ২৮ এপ্রিল স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ফলে হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদের আইনি বাধা দূর হয়। 

এদিকে, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দেয়া নির্বাচনি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাঁচ বছরের ব্যবধানে রুহুল আমিন হাওলাদারের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদ বহুগুণ বেড়ে গেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে রুহুল আমিন হাওলাদার ঋণই নিয়েছেন প্রায় ১৯০ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তার ঋণ ছিল মাত্র ৭ কোটি টাকা। ওই সময় রুহুল আমিন হাওলাদারের পরিবারের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ছিল দুটি। পাঁচ বছরে তার আরও চারটি (মোট ছয়টি) ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি হয়েছে। দুটি তার স্ত্রীর এবং চারটি নিজের।

২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে তার বাড়ি-দোকান ভাড়া থেকে আয় বেড়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক বেড়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকের আমানত থেকে নতুন আয় হয়েছে ১১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এই সময়ে তিনি নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পেতে শুরু করেছেন। এই বাবদ তার আয় বেড়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

২০১৪ সালের হলফনামায় তার কোনেও কৃষিজমির উল্লেখ ছিল না। ২০১৮ এর হলফনামায় নিজের নামে ১ একর ৩৩ শতাংশ এবং স্ত্রীর নামে ১ একর ৬৫ শতাংশ জমির উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ এর হলফনামায় রুহুল আমিন হাওলাদার নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন ৬ কোটি ৬৬ লাখের কিছু বেশি। এবার তা প্রায় দ্বিগুণ— অর্থাৎ ১২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। গতবার তার কোনেও এফডিআর ছিল না। এবার আছে ৫ কোটি টাকার। গতবার তিনি দায় দেখিয়েছিলেন প্রায় ২৯ কোটি টাকা। এবার তার তেমন কোনেও দায় নেই বরং গতবার যে পরিমাণ টাকা ঋণ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছিলেন, এবার ঋণ দেয়ার পরিমাণ তার চেয়ে কিছুটা বেশি। 

২০১৪ সালের হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীসহ অন্যদের মোট ঋণ দিয়েছিলেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এবারের হলফনামায় তা ১০ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার। এরমধ্যে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্নাকে। রুহুল আমিন হাওলাদারের অন্যান্য সম্পদ মোটামুটি গতবারের মতোই আছে। যেমন- নিজের নামে গুলশানে ১২ দশমিক ৭ কাঠা অকৃষিজমি। স্ত্রীর নামে পূর্বাচলে সাড়ে ৭ কাঠা জমি ও বাকেরগঞ্জে বসতভিটা। গুলশান ও বাকেরগঞ্জে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন দুটি। ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার। নিজের নামে ৭ কোটি ৭০ লাখ ও স্ত্রীর নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার বন্ড প্রভৃতি। একটি ৯ এমএম পিস্তল, একটি ২২ বোর রাইফেল, একটি দো-নলা বন্দুক, একটি ৩২ বোর রিভলবার ও একটি শটগান। তবে সম্পদের বিস্তার যতই ঘটান না কেন, রুহুল আমিন হাওলাদারের নামে দুর্নীতির মামলা গতবারের মতো এবারও তিনটিই চলমান রয়েছে। এরমধ্যে দুটি ঢাকায়, একটি পটুয়াখালীতে। পটুয়াখালীর বিশেষ জজ আদালতের মামলাটি সম্পর্কে এবারের হলফনামায় বলেছেন, ‘জাতীয় কমিটির ১৭তম সভায় প্রত্যাহৃত, কোর্টে চলমান’।

এইচএস/এমএইউ/এসএমএম