• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:৪১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৪, ২০১৯, ০৭:৪১ পিএম

জামিন পেলেন প্রাণ ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান

জামিন পেলেন প্রাণ ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান

নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের মামলায় প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী এবং সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুর রহমানের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সোমবার (২৪ জুন) ঢাকা সিটি করপোরেশনের স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী পাভেল সুইট এ জামিন মঞ্জুর করেন।

এদিন প্রাণ-এর চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রাণ-এর গুঁড়ো হলুদের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

আহসান খান চৌধুরীর আইনজীবী তানজীম আল ইসলাম ও কাজী আবদুর রহমান বলেন, প্রাণ-এর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গুঁড়ো হলুদের একটি মামলার সমনের জবাব দেয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। অসুস্থজনিত কারণে তিনি আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। আমরা তার পক্ষে সময়ের আবেদন করি। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আজ তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। অপরদিকে নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরের মামলায় সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তীর সরিষার তেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে জারি করা সমনের জবাব দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত বয়স বিবেচনায় তার জামিন মঞ্জুর করেন।

দুই মামলার বাদী নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক কামরুল ইসলাম বলেন, প্রাণ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান সোমবার (২৪ জুন) আত্মসমর্পণ করে আদালতে জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তাদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর আগে হাইকোর্ট থেকে ৫২টি নিম্নমানের পণ্যের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ফুড সেফটি অফিসার স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম।

নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত।

গত রোববার (২৩ জুন) এ পরোয়ানা জারি করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই আদালতের বিচারক বিশেষ মহানগর হাকিম মেহেদী পাভেল সুইট। এর আগে প্রাণের ঘি, লাচ্ছা সেমাই, হলুদগুঁড়াসহ নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের অভিযোগে মামলা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ জুলাই ধার্য করা হয়। সোমবার (২৪ জুন) আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। গত রোববার মামলার শুনানির সময় এমডি আহসান খান উপস্থিত ছিলেন না। তার আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ, তাই আদালতে হাজির হতে পারেননি। তবে আদালত এ বক্তব্য আমলে নেননি। অভিযোগ রয়েছে, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল আমজাদ খান চৌধুরী একজন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় রংপুর ক্যান্টনমেন্টে বিএম-২৩ বিগ্রেডে ছিল তার পোস্টিং। তার নির্দেশে সেই অঞ্চলে অসংখ্য বাঙালি সেনা-মুক্তিযোদ্ধা-সাধারণ মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও অংশ নেন। রংপুরে অবস্থানকালে হত্যা, ধর্ষণ এবং হিন্দুদের ঘর-বাড়ি লুটপাটে নেতৃত্ব দেন আমজাদ। ১৯৮১ সালে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের জমি অধিগ্রহণের টাকা চুরির অভিযোগে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তখন ব্যবসায় নামেন তিনি। গত বছর প্রাণ কোম্পানির জুস (ফ্রুট ড্রিংস) বাজারজাতকরণ ও বিপণন বন্ধে রুল জারি করে হাইকোর্ট। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে প্রাণের ওই সব পণ্যে জুসের কোনও উপাদান নেই। ২০১৪ সালে প্রাণের পণ্যে ইঁদুরের বিষ্ঠা পেয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইতালির সীমান্ত কর্তৃপক্ষ এবং প্রাণের পণ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশকে সতর্ক বার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউই)। এর আগেও দেশে ও বিদেশে কোম্পানিটির খাদ্যপণ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর ভাইরাস পাওয়া যায়। কোম্পানিটির রফতানি পণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ ভাইরাস (খুরারোগ) ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি থাকায় এর আগে কানাডা থেকে খাদ্যপণ্য ফেরত আসে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর প্রাণের পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দি ইন্টারন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটিস নেটওয়ার্ক (আইএনএফওএসএএন)।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের পরও বাজার থেকে নিজেদের পণ্য সরিয়ে না নেয়ায়, গত ২২ মে (বুধবার) প্রাণ গ্রুপসহ আরও বেশ কয়েকটি মানহীন পণ্যের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্তত ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ প্রদান করে কর্তৃপক্ষ।

মানহীন এই ৫২টি পণ্য হলো- প্রাণের হলুদ গুঁড়া, ফ্রেশের হলুদ গুঁড়া, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবণ, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিংয়ের সরিষার তেল, শবনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজানের ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, এসিআইয়ের ধনিয়ার গুঁড়া, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া, মিষ্টিমেলার লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইয়ের লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইয়ের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুঁড়া, মধুমতির আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদ গুঁড়া, গ্রিন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুঁড়া, ডলফিনের হলুদের গুঁড়া, সূযের্র মরিচের গুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিনযুক্ত লবণ, মদিনার আয়োডিনয্ক্তু লবণ ও নূরের আয়োডিনযুক্ত লবণ ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দীঘির ড্রিংকিং ওয়াটার। এরপর গত মঙ্গলবার আরও ২১টি নতুন পণ্যের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে করা মামলায় ২১টি পণ্যের মধ্যে রয়েছে- এসএ সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ ‘মুসকান’, কনফিডেন্ট সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ ‘কনফিডেন্স’, বিসমিল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ ‘উট’, জনতা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ ‘নজরুল’, জেকে ফুডের লাচ্ছা সেমাই ‘মদিনা’, হাসেম ফুডের লাচ্ছা সেমাই ‘কুলসন’, কুইন কাউ ফুডের বাটার অয়েল ‘গ্রিন মাউন্টেন’, জে কেমিক্যাল ওয়ার্কসের ঘি ‘এ-৭’, প্রাণ ডেইরির ঘি ‘প্রাণ প্রিমিয়াম’, অ্যাগ্রো অর্গানিকের ঘি ‘খুশবু’, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের জিরা ও ধনিয়ার গুঁড়া ‘রাঁধুনী’, থ্রি স্টার ফ্লাওয়ার মিলের ধনিয়া ও হলুদের গুঁড়া ‘থ্রি স্টার’, ফস্টার ক্লার্কের সফট ড্রিংক পাউডার ‘ফস্টার ক্লার্ক’, এসএ সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবণ ‘প্রাণ’, সামগ্রী কনজুমারসের কারি পাউডার ও জিরার গুঁড়া ‘সামগ্রী’, ফেমাস ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ঘি ‘ফেমাস’, এসবি এন্টারপ্রাইজের ঘি ‘এসবি’, খাজা তৈয়ারিয়ার ফ্লাওয়ার মিলের ধনিয়ার গুঁড়া ‘ফাস্টার ক্লার্ক।

টিএইচ/এসএমএম