• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০১৯, ১২:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৭, ২০১৯, ১২:৩০ পিএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল   

দানবীর রণদা প্রসাদ হত্যায় মাহবুবুরের ফাঁসির দণ্ড  

দানবীর রণদা প্রসাদ হত্যায় মাহবুবুরের ফাঁসির দণ্ড  

 

মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার দায়ে টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারকের ট্রাইব্যুনাল আজ বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।   

গত ২৪ এপ্রিল বুধবার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইবুনাল। এরপর আজ রায় ঘোষণা করেন আদালত।   

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ বছর বয়সী আসামি মাহবুবুর একাত্তরে মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। মাহবুবুর ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।

অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, হত্যা- গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে মাহবুবুরের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। আসামিপক্ষে ছিলেন গাজি এম এইচ তামিম।

এ ব্যাপারে রানা দাশগুপ্ত বলেছিলেন, আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ এনেছিল প্রসিকিউশন। আমরা মনে করি তিনটি অভিযোগই আমরা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলায় ১৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করেছি তাতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়েছি।

আসামি মাহবুবুরের বিরুদ্ধে 'গণহত্যা অথবা বিকল্প হিসেবে অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার’ যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অপরাধের নতুন কোনো সংজ্ঞায়ন কিনা জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, না, এটা নতুন কোনো টার্ম না। আমরা তিনটি চার্জেই মাসকিলিং এবং এর বিকল্প হিসেবে অন্য অপরাধের টার্ম ইউজ করেছি। আমরা আমাদের সাক্ষ্য প্রমাণ, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। এখন ট্রাইব্যুনাল তা কীভাবে বিবেচনা করবে তা রায়ের মাধ্যমে জানতে পারব। 

তিনি জানান, নেত্রকোনার দুই যুদ্ধাপরাধী হেদায়েত উল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি এবং সোহরাব আলী ওরফে ছোরাপ আলীর মৃত্যুদণ্ডের যে রায় ট্রাইব্যুনালে হয়েছে, সেই মামলাতেও গণহত্যা অথবা বিকল্প হিসেবে অন্য অপরাধের কথা ছিল। রায়ে ট্রাইব্যুনাল ওই অপরাধকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে সাজা ঘোষণা করেছে।

গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। ১১ ফেব্রুয়ারি অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ২৮ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরুর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

এক বছরের বেশি সময় পর আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে। 

অভিযোগপত্রের তথ্য অনুযায়ী, মাহবুবুর একসময় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক ছিলেন। তিনি তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও প্রতিবারই পরাজিত হন।

২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্ত শুরুর পর ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হলে ওই বছরের নভেম্বরে মাহবুবুরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখন কাশিমপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান।

তার আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ সমম্বয়ক সানাউল হক। হান্নান খান তখন বলেছিলেন, আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় হামলা চালায়।

তারা রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তাদের লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।

মানবহিতৈষী কাজে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত থাকায় ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর খেতাব দিয়েছিল রণদা প্রসাদ সাহাকে। মানবসেবায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়। তিনি আর পি সাহা নামেও পরিচিত।

রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসায় নামেন রণদা প্রসাদ সাহা; থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় অপরাধ সংঘটন করেন আসামি মাহবুব।
 

এমএ/আরআই