• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৬:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৬, ২০১৯, ০৬:১১ পিএম

কানাডায় আশ্রয় চাইলেন এস কে সিনহা

কানাডায় আশ্রয় চাইলেন এস কে সিনহা
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা-ফাইল ছবি

কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা। একই সাথে তার স্ত্রী সুষমা সিনহাও আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন।

গত ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এ দম্পতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় গিয়ে শরণার্থীর মর্যাদা চেয়েছেন। এ খবর দিয়েছে কানাডার বিভিন্ন গণমাধ্যম।

২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন এস কে সিনহা। তিনি দাবি করেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়ে সরকারের পক্ষে রায় দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তিনি হুমকির শিকার হন। দ্বিমত পোষণকারী বিচারকদের সরিয়ে দিতে সংসদের হাতে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা চেয়েছিল সরকার।

কানাডার দ্য স্টার এর খবরে প্রকাশ, ৪ জুলাই ফোর্ট এরি সীমান্ত দিয়ে কানাডায় প্রবেশ করেন এস কে সিনহা এবং শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। 

সিনহা অভিযোগ করেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে রায় দিতে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার তিন মাস পর তাকে নির্বাসিত হতে হয়।

গত সপ্তাহে কানাডীয় গণমাধ্যম দ্য স্টারকে বিচারপতি সিনহা বলেন, আমার রায়ে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ ও সন্ত্রাসীরা ক্ষুব্ধ হন। আমি এখন দেশের শত্রু, সরকার আমাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।

চলতি মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা করেছে।

দ্য স্টার জানায়, সিনহা তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে দুদকের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করলে তারা সাড়া দেয়নি। 

সিনহা  আশ্রয় আবেদনে উল্লেখ করেছেন, ‘২০১৭ সালের ২ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে তাকে ডাকা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় সরকারের পক্ষে তাকে আদেশ দিতে বলেন, যাতে বিচারকদের বরখাস্ত করা সরকারের জন্য সহজ হয়।’

কানাডার টরন্টো থেকে প্রকাশিত কোরিয়েরে কানাদিজ (দ্য কানাডিয়ান কুরিয়ার) বলছে, বিচারপতি সিনহা যুক্তরাষ্ট্রেও রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছিলেন। তবে সেই আবেদনে সাড়া মেলেনি বলে জানা গেছে।

কোরিয়েরে কানাদিজ এর দাবি, প্রধান বিচারপতি হওয়ার পর থেকেই সরকারের বিভিন্ন শাখার পূর্ণাঙ্গ পৃথককরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও দুর্নীতি ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন বিচারপতি সিনহা। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এস কে সিনহার সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ওই রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণে পার্লামেন্টের ক্ষমতা বাতিল করা হয়। এর পর সরকারের সঙ্গে বিরোধের জেরে এক পর্যায়ে তিনি ছুটিতে যান। বাংলাদেশ থেকে প্রথমে সিঙ্গাপুরে যান সিনহা। এর পর অস্ট্রেলিয়া হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেন তিনি।

বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ পাওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। 

গত ১০ জুলাই ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি এবং চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বিচারপতি সিনহা গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসে একটি বই প্রকাশ করেন। তাতে তিনি দাবি করেন, তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। 

২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন। তিনি ছিলেন দেশের প্রথম অমুসলিম প্রধান বিচারপতি। ২০১৭ সালের নভেম্বরে সিনহা বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।

এসএমএম

আরও পড়ুন