• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০১৯, ১০:১৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২, ২০১৯, ১০:১৭ এএম

ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে তিতাসের মৃত্যু

তদন্ত কমিটির সামনে তিতাসের মায়ের আহাজারি

তদন্ত কমিটির সামনে তিতাসের মায়ের আহাজারি
বা দিক থেকে তিতাসের বোন তন্নীসা ঘোষ ও মা সোনামণি ঘোষ- ফাইল ছবি

ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে সন্তানের মৃত্যুতে মাকে শান্তনা দেবার কোনো বাণী নেই। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটির সামনে মৃত তিতাসের মার বুকফাটা কান্নায় ওই বাড়ির বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের মা সোনামণি ঘোষ তদন্ত কমিটির সদস্যদের জানালেন ফেরির লোকদের পা ধরে কান্নার কথা।  

ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যু হওয়া যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে গঠিত নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তদন্ত কমিটির কাছে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দেন সোনামণি ঘোষ।

বৃহস্পতিবার সকালে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা তিতাস ঘোষের বাড়িতে যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিতাস ঘোষের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য শোনেন তারা। জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিকের নেতৃত্বে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলা ইউএনওর কার্যালয়ে পৌঁছান। তাদের উপস্থিতি দেখে ভিড় জমান স্থানীয়রা। পরে তিতাসের বাড়ি যান কমিটির সদস্যরা। এরপর ঘটনার দিন উপস্থিত তিতাসের মা সোনামণি ঘোষ, বোন তন্নীসা ঘোষ, তিতাসের মামা বিজয় ঘোষ, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা চিকিৎসক, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স চালকের বক্তব্য শোনেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিতাসের মা বলেন, গত বুধবার (২৪ জুলাই) সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তিতাসকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়ার কথা বলেন চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তিতাসকে ঢাকায় নেয়ার জন্য রওনা হই আমরা। রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। অ্যাম্বুলেন্সে আমি, আমার মেয়ে এবং আমার ভাই ছিল। ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার দীর্ঘক্ষণ পরও ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্স তোলা হয়নি।

তিতাস ঘোষ- ফাইল ছবি

তিনি আরও বলেন, বার বার বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে গেলেও তারা আমাদের ফিরিয়ে দেন। ওই সময় কাঁদতে কাঁদতে বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তাদের পা ধরি আমি। অনেক অনুরোধ করেছি তাদের। এরপরও তারা ফেরি ছাড়তে রাজি হননি। তারা বলেছিল অ্যাম্বুলেন্স তুললে চাকরি থাকবে না। কোনো উপায় না পেয়ে সরকারি জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেও সহযোগিতা পাইনি। পরে ওই ভিআইপি আসার অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা ঘাটে বসে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টার দিকে ওই ভিআইপির আত্মীয়রা এলে ফেরি ছাড়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় তিতাস।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল আহসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও একইভাবে তিতাসের স্বজনদের বক্তব্য শোনেন। তাদেরও একই কথা বলেছেন তিতাসের স্বজনরা। 

এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার বণিক বলেন, আমরা তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভুক্তভোগী তিতাসের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব। 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. রেজাউল আহসান বলেন, তদন্তকাজ চলছে। তদন্ত শেষে ফলাফল জানা যাবে।

এইচ এম/টিএফ

আরও পড়ুন