• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৩:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২১, ২০১৯, ০৩:৫৯ পিএম

কারাগারে চিকিৎসা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ এর অবস্থা : হাইকোর্ট

কারাগারে চিকিৎসা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ এর অবস্থা : হাইকোর্ট

‘পঞ্চগড় কারা হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক নেই। একজন ডিপ্লোমা নার্স সার্বক্ষণিক থাকেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি সার্জিক্যাল বিভাগের চিকিৎসকের সরঞ্জামের সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। সে চাইলেই যে কোনো ছুরি কাঁচি অন্যদের হাতে তুলে দিতে পারেন। এ ছাড়া আইনজীবী পলাশ রায়ের গায়ে আগুন লাগার পর দাপ্তরিক কাগজপত্র ঠিক করতেই অনেক সময় ব্যয় করা হয়েছে, এর পর চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতাল ওই হাসাপাতাল নেয়া হয়। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। দাপ্তরিক জটিলতায় চিকিৎসা দিতে দেরি হয়েছে।’

আদালতে উপস্থাপন করা এক প্রতিবেদনের এই তথ্যের প্রসঙ্গ টেনে হাইকোর্ট বলেছেন, কারাগারের অবস্থা ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ এর মতো হয়েছে। একজন মানুষ দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা দেয়া দরকার, দাপ্তরিক কাজের জন্য কারও চিকিৎসা আটকে থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন আদালত।  

পলাশ কুমার রায়  - ফাইল ছবি

কারাগারে থাকা অবস্থায় (কারা হেফাজতে) আইনজীবী পলাশ কুমার রায় অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি আজ বুধবার (২১ আগস্ট) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানির সময় উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনজীবী পলাশ আত্মহত্যা করেছেন।

তখন আদালত আইনজীবী পলাশ রায় কারাগারের ভেতরে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর তার চিকিৎসায় গাফিলতি কারাগারে আগুন বা দিয়াশলাই কীভাবে অবাধে ঢুকছে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলে হাইকোর্ট। আদালত বলে, আইনজীবী পলাশ রায়ের গায়ে আগুন ধরার পর যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়া যেত হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব ছিল। আমরা বলব না বাঁচত, কিন্ত চেষ্টা করলে হয়ত বাঁচানো যেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পঞ্চগড় আদালতের ভেতরে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই, ভেতরে ঢোকার জন্য কোনো আর্চওয়ে নেই, কারা ক্যান্টিনে গ্যাস ও ম্যাচ দিয়ে অবাধে আগুন ধরানো হয় এবং ধূমপান চলে। চাল-ডালের গাড়ি কারাগারের ভেতরে ঢোকার সময় হুক ঢুকিয়ে দিয়ে তা পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া সেখানে ভারপ্রাপ্ত জেলার দায়িত্ব পালন করেন।

আজ শুনানির নির্ধারিত দিনে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করে। এরপর এ বিষয়ে আদেশ দেন আদালত।

আদেশে স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজন্সকে জেলখানার অব্যবস্থাপনা নিয়ে এই প্রতিবেদেনের জবাব লিখিতভাবে দিতে বলা হয়েছে।

গত ৮ মে কারা হেফাজতে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের (৩৬) মৃত্যুর ঘটনায় পঞ্চগড়ের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে বিচারিক তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে, এ তদন্তে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক, জেলা কারাগারের প্রধান ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয়া হয়।

গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে তার বিরুদ্ধে কোহিনুর কেমিকেল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে অনশন শুরু করেন পলাশ কুমার রায়। পরে সেখান থেকে উঠে তারা জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে এসে মানববন্ধন শুরু করেন।

একপর্যায়ে রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেন পলাশ। এছাড়া প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কেও অশালীন বক্তব্য দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা তাকে সদর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। একই দিন বিকালে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামে এক যুবক তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন।

আটকের পরদিন (২৬ মার্চ) আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৬ এপ্রিল কারা হাসপাতালের বাথরুমে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ৩০ এপ্রিল দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পলাশ মারা যান।

এমএ/ এফসি 

আরও পড়ুন