• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ০৬:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২, ২০১৯, ০৬:৪২ পিএম

লাইসেন্স মিডিয়াম চালায় ভারী 

বাস চালানোর প্রথম দিনেই কৃষ্ণার পা কেড়ে নেয় মোরশেদ 

বাস চালানোর প্রথম দিনেই কৃষ্ণার পা কেড়ে নেয় মোরশেদ 
বাস চালক মোরশেদ

মিডিয়াম লাইসেন্স দিয়ে ভারী যান ‘বাস’ চালাচ্ছিলেন মোরশেদ। ভারী পরিবহন চালানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও গত ২৭ আগস্ট প্রথম ট্রাস্ট পরিবহনের বাস চালানো শুরু করেন মোরশেদ। আর ওইদিনই বাংলামোটরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়কেক চাপা দেন মোরশেদ।এতে কৃষ্ণা রায়ের একটি পা চলে যায়।  

সোমবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে চালক মোরশেদকে প্রশ্ন করা হলে এরকম উত্তরই দেন তিনি। তদন্ত কর্মকর্তার সামনেই মোরশেদ বলেন, ঈদের আগে তিনি চালিয়েছেন প্রাইভেটকার। তার কাছে রয়েছে হালকা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স। 

পিবিআইয়ের পরিদর্শক জুয়েল মিয়া বলেন, ডিওএইচএস থেকে শাহবাগের উদ্দেশে ট্রাস্ট পরিবহনের বাস (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৯১৪৫) চালিয়ে আসছিলেন মোরশেদ। বাংলামোটরে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণা রায় চৌধুরীকে চাপা দেন। ওই ঘটনায় পা হারিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি কৃষ্ণা। দুর্ঘটনার পরই পালিয়ে যান চালক মোরশেদ। তবে পালিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি তার। রোববার (০১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে পিবিআইয়ের একটি দল রাজধানীর কাজীপাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

পিবিআই জানায়, গ্রেফতার মোরশেদ মিডিয়াম ক্যাটাগরির যানবাহন চালানোর লাইসেন্সধারী। মিডিয়াম লাইসেন্স নিয়ে সাত টনের নিচে যানবাহন চালানো যায়। এর বেশি হলে তা ভারী যানবাহন। দুর্ঘটনার ট্রাস্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ওই বাস ভারী যানবাহন ক্যাটাগরির।

পরিদর্শক জুয়েল মিয়া বলেন, দুর্ঘটনার পর মোরশেদ বাস থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে যাত্রীদের হাতে মারধরের শিকার হন। এ সময় তার জামা কাপড় ছিড়ে যায়। ওই অবস্থায় দৌঁড়ে পালিয় যান তিনি।
জুয়েল আরো জানান, রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের ভাড়া বাসায় গিয়ে সেখান থেকে চলে যান কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার নামাপাড়ার বড়টিয়াপাড়া নিজের গ্রামের বাড়ি। সেখানেই পাঁচদিন ধরে অবস্থান করছিলেন। মোবাইল ফোনের সিমও পরিবর্তন করেন। দিনে নিজ বাড়ি থাকলেও রাতে থাকতেন প্রতিবেশীর বাড়িতে।

তিনি বলেন, ঘটনা চাঞ্চল্য ছড়ানোর পর পিবিআই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোরশেদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে কিশোরগঞ্জ তার গ্রামের বাড়িতে যায়। কিন্তু চতুর মোরশেদ বাড়ির নারিকেল গাছে ওঠে আত্মগোপন করে। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসে দলটি। পরে বাড়ি ছেড়ে ফের রাজধানীর উদ্দেশে রওনা দেয় মোরশেদ। পিবিআই জানতে পারে গাজীপুর হয়ে কাজীপাড়ায় আসছেন। তাকে কাজীপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, মোরশেদ প্রথমে বাসের সহকারী ছিলেন। এরপর তিনি প্রাইভেটকার ও হালকা যানবাহন চালিয়েছেন। মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্স পেলেও ভারী বাস চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। আর প্রথম দিনেই ট্রাস্টের ওই বাস চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান।

তবে দুর্ঘটনার দায় এড়িয়ে মোরশেদ দাবি করেছেন, ট্রাস্টের ওই বাসটিতে সমস্যা ছিল। ব্রেক করতে গিয়েও ব্রেক হচ্ছিল না। আর এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।

এ বিষয়ে মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্সধারী মোরশেদ ট্রাস্টের ৪০ আসনের বাস চালাতে পারেন কি না, জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (অপারেশন) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, বিআরটিএ নিয়ম অনুযায়ী সাত টনের বেশি ওজনের যানবাহন ভারী যানবাহন। এ ধরনের যানবাহন চালানোর জন্য চালককের ভারী বা হেভি লাইসেন্স দরকার।
তার দেয়া তথ্য মতে, ট্রাষ্টের ওই বাস ভারী ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে। সাত টনের নিচে মিনিবাস, মাইক্রোবাস হচ্ছে মিডিয়াম ক্যাটাগরির যানবাহন। মিডিয়াম ক্যাটাগরির লাইসেন্স নিয়ে ভারী যানবাহন চালানো নিয়ম বহির্ভূত।

পরিদর্শক জুয়েল বলেন, আহত কৃষ্ণার স্বামী রাধেশ্যাম চৌধুরী দুর্ঘটনার পর বাদী হয়ে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। থানার মামলা নং-৩৭। হাতিরঝিল থানায় বাসটি আটক আছে। ওই মামলায় চালক মোরশেদকে গ্রেফতার দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন