• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৬, ২০১৯, ০৯:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৬, ২০১৯, ০৯:৪৫ এএম

রিশা হত্যার রায় আজ

বখাটে ওবায়দুলের ফাঁসি চান রিশার মা-বাবা 

বখাটে ওবায়দুলের ফাঁসি চান রিশার মা-বাবা 
নিহত রিশার (ইনসেটে) মা তানিয়া বেগম, দাদী, ছোট ভাই রবি ও ছোট বোন তৃষা  - ছবি : জাগরণ

‘আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। এতে যে কী কষ্ট... তা যে হারায় শুধু সেই বোঝে। মেয়েকে তো আর পাব না। যাতে আমার মেয়ের ঘাতকের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হয়... মানুষ যাতে জানতে পারে, রিশা হত্যার সুষ্ঠু বিচার হয়েছে।’ কথাগুলো বলেছেন নিহত স্কুলছাত্রী রিশার মা তানিয়া বেগম। শনিবার রাত ১১টার দিকে পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে দৈনিক জাগরণ। এসময় তানিয়া বেগম তার ছোট মেয়ে তৃষা ও ছেলে রবিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। 

রিশার বাবা সিদ্দিকবাজারের ডিশ ক্যাবল ব্যবসায়ী রমজান মিয়া বলেন, আমার মেয়ে রিশা মেধাবী ছাত্রী ছিল। সায়েন্স নিয়ে লেখাপড়া করছিল। আজ রিশা নেই, তার ব্যবহৃত সব কিছু রয়েছে ঘরে। নাই শুধু রিশা। সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো লাগে। একথা বলে তিনি কেঁদে ফেলেন। 

রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশা। ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। ২৮ আগস্ট সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রিশাকে ছুরিকাঘাত করেছিল বখাটে ওবায়দুল। সে তখন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ইস্টার্ন মল্লিকা শপিং মলে বৈশাখী টেইলার্সের কর্মচারী ছিল। 

স্কুলছাত্রী রিশা হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার ওবায়দুল হক

জানা গেছে,  রিশা হত্যা মামলার রায় আজ রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে ঘোষণা করবেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। এসময় আদালতে আসামি ওবায়দুল ও বাদী রিশার বাবা রমজান ও মা তানিয়া বেগমসহ স্বজনরা উপস্থিত থাকবেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন‌্য আজকের তারিখ ধার্য করেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি অত্যন্ত জঘন্য কাজ করেছে। প্রকাশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে রিশা নামে এক শিক্ষার্থীকে ছুরি মেরে হত্যা করেছে। তার এমন সাজা হওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে সাহস না পায়। তার সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে আশা করছি।

মামলার বাদী ও রিশার মা তানিয়া বেগম বলেন, ঘাতক ওবায়দুল আমার মেয়েটাকে বাঁচতে দিল না। পাষণ্ড এমনভাবে আমার মেয়েটাকে ছুরিকাঘাত করেছে যে সে আর ফিরল না। একটাই দাবি, ওবায়দুলের ফাঁসি চাই। সঠিক বিচার হলে এরকম ঘটনা আর কেউ ঘটাতে সাহস পাবে না।

রিশা বাবা রমজান হোসেন বলেন, যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। তবে যে আমার মেয়েকে বুক থেকে কেড়ে নিয়েছে, আমি তার সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি। আমি ওর ফাঁসি চাই।

বাদীপক্ষকে আইনি সহায়তাকারী বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ফাহমিদা আক্তার রিংকি বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। আমরা আসামির সর্বোচ্চ সাজা আশা করছি। আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে।

এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মদ বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আমরা ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আসামি খালাস পাবে বলে আশা করছি।

প্রসঙ্গত, ২৪ আগস্ট রিশার মা তানিয়া রাজধানীর রমনা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় এবং দণ্ডবিধির ৩২৪/৩২৬/৩০৭ ধারায় হত্যাচেষ্টা ও গুরুতর আঘাতের অভিযোগে একটি মামলা করেন। রিশার মৃত্যুর পর হত্যার অভিযোগে ৩০২ ধারা সংযোজন করা হয়। 

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের মীরাটঙ্গী গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে ওবায়দুল হক। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক ছিল। ৩১ আগস্ট নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারগাঁও থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন ওবায়দুলের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ওবায়দুল। 

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর ওবায়দুল হককে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক আলী হোসেন। ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল মামলার একমাত্র আসামি ওবায়দুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরপর ‘সঠিক আদালতে বিচার না হওয়ায়’ মামলাটি ঢাকার শিশু আদালতে বদলি করা হয়। আইনি জটিলতা শেষে মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আসে। এরপর আরো দুজন সাক্ষীসহ ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। গত ২৫ আগস্ট নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আত্মপক্ষ শুনানি করে ওবায়দুল।

এইচ এম/ এফসি

আরও পড়ুন