• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৬:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৬:৫০ পিএম

বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া : দ্বিমতে বার সভাপতি-সম্পাদক

বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া : দ্বিমতে বার সভাপতি-সম্পাদক

শিগগিরই কয়েকজন বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে হাইকোর্টে- এমন গুঞ্জনে সংবিধান অনুসারে বিচারক নিয়োগের কথা বলেছেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন, যিনি আ.লীগ পন্থী প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

অপরদিকে এক সংবাদ সম্মেলনে, সংবিধানের ৯৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলের রায়ের আলোকে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন। যিনি বিএনপিপন্থী আইনজীবী প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।   

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন বলেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই কার্যকরী কমিটি এবং একই সালের ২১ আগস্ট সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওইসব সভায় হাইকোর্ট বিভাগের ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলের রিট মামলার রায় অনুযায়ী নীতিমালা প্রণয়ন করে বিচারপতি নিয়োগ করার দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।

ওই রায়ে বর্তমান নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ, কার্যকর ও বস্তুনিষ্ঠ করার প্রয়োজনের ৭টি যোগ্যতা নির্ণায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির প্রতি অকৃত্রিম আনুগত্য থাকতে হবে এবং মেধাসম্পন্ন, পেশাগত দক্ষতা, সুক্ষ্ম বিচারিক শক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা সম্পন্নদেরই কেবল সুপারিশ করা যাবে। তাছাড়া একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সব যোগ্যতাসম্পন্ন ইচ্ছুক প্রার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগে তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অনেক বিচারপতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের গুঞ্জন রয়েছে। বিচারপতি নিয়োগের পরে তদন্ত না করে, নিয়োগের আগেই তাদের যোগ্যতা, সততা সম্পর্কে তদন্ত করে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। শুধু রাজনৈতিক আনুগত্যের কারণে কাউকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ করা কোনোভাবেই বাঞ্ছনীয় নয়।

মাহবুব উদ্দিন আরও বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু বিচারক নিয়োগের নীতিমালা বা নিয়োগের ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের নির্দেশনা পালন সম্পর্কে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এমন অবস্থায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি অনতিবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৯৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিলের রায়ের আলোকে বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।

এর কিছুক্ষণ পর একইস্থানে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দেবেন। আর ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বাড়ানো উচিত বলে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করতে পারবেন।

‘কিন্তু আমাদের দেশে রেওয়াজ হচ্ছে ৯৮ অনুসারে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পরে ওনাদের পারফরম্যান্স দেখে প্রধান বিচারপতি সুপারিশ করেন, সে অনুযায়ী ওনাদের কনফার্ম করা হয়।’

আমিন উদ্দিন বলেন, একজন আইনজীবীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ বিচারপতির রায়ে নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনায় স্পষ্ট আছে প্রধান বিচারপতি দেখবেন, যারা দুই বছর অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োজিত আছেন তাদের বিচারিক কার্যক্রম। অন্য কার্যক্রম
 সরকার দেখবেন। এভাবে কিন্তু হয়ে আসছে।  

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে যে নিয়োগগুলো হবে সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুসরণ এবং ১০ বিচারপতির রায়ের ম্যান্ডেট দেখে নিয়োগ দেবেন সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানের বাইরে কিছু করার স্কোপ নেই। সংবিধানে স্পষ্ট রয়েছে এখানে কী করতে হবে। শুধু ম্যান্ডেট হচ্ছে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে, আলোচনা করতে হবে। সংবিধানেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এএম আমিন উদ্দিন বলেন, নীতিমালা তো সংবিধানের ওপরে যাবে না। নীতিমালাতো আইনও না। নীতিমালার তো বাউন্ডিং ইফেক্টও নেই। সংবিধানে বিধান স্পষ্ট রয়েছে। নীতিমালা কেন? আইন হতে পারে। নীতিমালাতো সংবিধানকে সুপারসিড করতে পারবে না।

এমএ/একেএস

আরও পড়ুন