• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:০৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৯:০৫ এএম

নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ

নুসরাত হত্যা মামলার রায় আজ
নুসরাত জাহান রাফি

বহুল আলোচিত ফেনীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় হচ্ছে আজ  বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর)। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা হবে। 

রায় ঘিরে ফেনী জেলা শহর সোনাগাজী ও নুসরাতের বাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ফেনী জেলা পুলিশ সুপার খোন্দকার নুরুন্নবী।   

এদিকে ঘটনার পর পিবিআইয়ের তদন্ত শেষে ৬২ কার্যদিবসে এ স্পর্শকাতর মামলার রায় ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বিচারক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক  শেষে ২৪ অক্টোবর এই রায়ের তারিখ ঠিক করেন নারী ও শিশু নির্যাতন নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ। তবে বাংলাদেশে এই প্রথম ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলার তদন্ত ও রায় ঘোষণা হচ্ছে। এমনটাই জানালেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অফিসার শাহ আলম। 

এই মামলায় রায়ে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রত্যাশা করেন নুসরাতের মা শিরিন আখতার ও স্বজনরা।
 
নুসরাতের মা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তার কারণে মামলাটি খুব তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীসহ বিচার বিভাগের কাছে আমার অনুরোধ অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা হোক। আমার মেয়ে রাফি মাংস নিয়ে কবরে যেতে পারেনি। আমার মেয়ে পানি পানি বলে চিৎকার করেছে,পানি খেতে পারেনি। প্রতিদিন এসব ভাবি আর ছটফট করি। অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলে অন্যকোনো মায়ের বুক এভাবে খালি হবে না।

নুসরাত হত্যা মামলায় চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), কাউন্সিলর ও সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর (৫০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আবছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন ওরফে মামুন (২২), সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সহসভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), মহিউদ্দিন শাকিল (২০) ও মোহাম্মদ শামীম (২০)।

মামলার বাদী আইনজীবী শাহজাহান সাজু জানান, মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফী হত্যা মামলার সাড়ে ৬ মাসের মাথায় রায়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। গত ১০ জুন মামলার অভিযোগ পত্র আমলে নেওয়ার পর মাত্র ৬২ কার্যদিবসে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ৯২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন  আদালতে সাক্ষী দিয়েছেন।
ফেনী জেলা সুজনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এরকম সকল মামলায় অল্প সময়ের মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় এনে সাজার মুখোমুখি করলে অপরাধের মাত্রা কমে যাবে। 

ফেনীর পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরনবী বলেন, এ রায়কে কেন্দ্র করে আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। শুধু আদালত পাড়া নয়। নুসরাতের বাড়িতেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। শহরে কাউকে জড়ো হতে দেওয়া হচ্ছে না। যদি কেউ বিশৃঙখলা করতে চায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

মামলার বাদি নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রায় ৮০৮ পৃষ্ঠার নথি গত ২৮ মে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচার বিভাগীয় হাকিম জাকির হোসাইনের আদালতে দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই)।

প্রসঙ্গত, মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় গত ৬ এপ্রিল মাদরাসার ছাদে নিয়ে নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত। ঘটনার পর ৮ এপ্রিল আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন নুসরাতের ভাই।

প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও পরে তদন্ত  পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের ৫০ দিনের মাথায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পিবিআই। এতে উল্লেখ করা হয় কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন পাঁচজন। জেল থেকে হত্যার নির্দেশ দেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা। আর অর্থ যোগনদাতা হিসেবে উঠে আসে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলমের নাম।

এর আগে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইউসুফ ও এসআই ইকবালকে। প্রত্যাহার করা হয় ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলমকে। গেল ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানকে জেরার মধ্যে দিয়ে বিচার কাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে। ৩০ সেপ্টেম্বর নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।

এইচ এম/বিএস