• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৬:১৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৪, ২০১৯, ০৬:১৩ পিএম

ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার

৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদীর হাইকোর্টে রিট

৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদীর হাইকোর্টে রিট
৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদীর হাইকোর্টে রিট

সন্তানকে স্বাচ্ছন্দ্যে দুধ পান করাতে সর্বত্র ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। ৯ মাস বয়সী শিশু উমাইর বিন সাদীর পক্ষে তার মা এই রিট দায়ের করেন।

আবেদনে কর্মক্ষেত্র, শপিংমল, এয়ারপোর্ট, বাসস্টপ, রেলওয়ে স্টেশনসহ সম্ভাব্য সর্বত্র ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেখানে কোন মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনও অস্বস্তিবোধ করবেন না বা যৌন হয়রানির শিকার হবে না। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে এই প্রথম কোনও শিশুর পক্ষে রিট পিটিশনার হয়েছে। তবে, রিটের জন্য আগেই আদালতের অনুমতি নিতে হয়েছে।

রিটে মন্ত্রিপরিষদসচিব, নারী ও শিশু কল্যাণ  সচিব, স্বাস্থ্য সচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

আগামী সপ্তাহে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চে এই রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী। তবে রিটের বিষয়ে শুনানি না হওয়া এবং কোনও ধরনের আদেশ না দেয়া পর্যন্ত আইনজীবীর নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়েছেন তিনি।

রিটে বলা হয়েছে, এমন পরিবেশে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করতে হবে যেখানে কোনও মা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে কোনও অস্বস্তিবোধ করবে না বা যৌন হয়রানির শিকার হবেন না। এই রিটের মাধ্যমে ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশনা আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন রিটকাারী মা।

তিনি বলেন, অনেক কর্মস্থলে বা বাস, ট্রেন স্ট্রেশনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকায় মায়েদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নিরাপদ পরিবেশের অভাবে ও যৌন হয়রানির ভয়ে মায়েরা শিশুদের বুকের দুধ পান করাতে পারেন না। অথচ একজন শিশুর মানসিক ও শারীরিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মায়ের বুকের দুধ। আমার মতো হাজার হাজার মা এই সমস্যার সম্মুখীন হন। রিট আবেদনে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুন্দর, সুস্থ ও সবলভাবে শিশুকে বেড়ে তুলতে এবং নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতে সরকারি-বেসকারি প্রতিটি কর্মস্থলে ডে কেয়ার সেন্টার ও মাতৃদুগ্ধ দান কক্ষ স্থাপন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

এরপর ৯ বছর অতিবাহিত হলেও এক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনও উন্নতি লক্ষ্য করা যায়নি। বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে কর্মজীবী মায়েদের জন্য নেই ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় উল্লেখ রয়েছে, ‘কর্মক্ষেত্রে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ হন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিমা-ব্যাংক, শপিংমল, কল-কারখানা, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালসহ অফিস, ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠান এবং শপিংমলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপন করা হয়নি। ফলে এদিকে যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে মাতৃদুগ্ধ পানকরণ। অন্যদিকে শিশু স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের জন্য বলা হলেও মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মা যদি কর্মস্থলে শিশুকে তার চাহিদা অনুযায়ী বুকের দুধ ও ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়াতে পারেন তার সুফল অনেক। সবচেয়ে বড় সুফল শিশুর সুস্থতা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ সার্ভের (বিডিএইচএস) থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের এক জরিপে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক তৃতীয়াংশ শিশু খর্বকায়, আর ৩৩ শতাংশ শিশুর ওজন কম, ১৪ ভাগ শিশু কৃশকায় (লম্বার তুলনায় ওজন খুবই কম)। এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের যে হার একশ ভাগ হবার কথা, সেখানে আমাদের রয়েছে ৫৫ শতাংশ। শিশুর পুষ্টিমাণ নিশ্চিতে সব জায়গায় ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার চালু করার প্রয়োজন।

এমএ/এসএমএম 

আরও পড়ুন