• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৫, ২০১৯, ০৯:৪৭ পিএম

সাগর-রুনি হত্যা মামলার শেষ কোথায়?

সাগর-রুনি হত্যা মামলার শেষ কোথায়?
শিশু সন্তান মেঘকে কোলে নিয়ে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি-ফাইল ছবি

প্রায় নিয়ম করেই মাসে-দেড় মাসে একবার আদালতে ওঠে সাগর-রুনি হত্যা মামলা। প্রতিবারই তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল না করে সময় চেয়ে আবেদন করেন। তারপর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরেকটি দিন ধার্য করে দেন আদালত। পরের তারিখে একই আনুষ্ঠানিকতার পুনরাবৃত্তি এবং আবারও নতুন তারিখ। এভাবে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পেরিয়ে ৬৮ বার সময় নিয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু দেয়া হচ্ছে না তদন্ত প্রতিবেদন।

২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজেদের বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার এবং মেহেরুন রুনি খুন হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ‘‘৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’’ কিন্তু প্রায় ৮ বছরে পুলিশ ও র‌্যাবের ৬ জন কর্মকর্তার হাত ঘুরলেও দেয়া হয়নি এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন।

হত্যাকাণ্ডের পর রুনির ভাই নওশের আলম রোমানের করা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম। পরবর্তীতে তার কাছ থেকে তদন্তের দায়িত্ব যায় ডিবির পরিদর্শক রবিউল আলমের কাছে। ৬২ দিন পর তিনি আদালতের কাছে ব্যর্থতা স্বীকার করেন। ২০১২ সালের এপ্রিলে তদন্তের দায়িত্বভার নেয় র‌্যাব। দায়িত্ব নিয়েই সাগর ও রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে এনে আবারও ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা পরীক্ষা করে র‍্যাব। বেশ কয়েকজনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল সে সময়। তবে তদন্ত আর এগোয়নি।

র‌্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার হাত ঘুরে তদন্তভার আসে র‌্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের কাছে।

এখন পর্যন্ত আদালত থেকে ৬৮ বার সময় নিয়েও তদন্তের অগ্রগতির প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা।

রুনির ভাই নওশের আলম রোমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, গত দু’তিন দিন আগে র‌্যাব সদর দফতর থেকে আমিনুল ইসলাম নামে এএসপি পদমর্যাদার একজন ফোন দিয়ে বলেন, নতুন করে তিনি এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে গত ২০ অক্টোবর আদেশ দেয় হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। হাইকোর্ট থেকে তদন্ত কর্মকর্তাকে তলবের ওই আদেশের পর এএসপির ফোন দিয়েছিল কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে নওশের বলেন, হতে পারে। সম্ভবত হাইকোর্টের আদেশের পরদিনই এই ফোন এসেছিল।

এর আগে সর্বশেষ কবে তদন্ত কর্মকর্তা যোগাযোগ করেছিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে নওশের বলেন, অনেক আগে, সাধারণত তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হলে তারা ফোন করে জানান, এইই।

আরেক প্রশ্নের জবাবে নওশের আলম বলেন, ন্যায়-বিচারের তো কোনও অপশনই নেই। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই তদন্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে যখন যারা সম্পৃক্ত হয়েছেন, তারাই চান না তদন্ত প্রতিবেদন দিতে। তাদের কার্যক্রমেও মনে হয় না, তারা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে চান। তদন্ত প্রতিবেদনই যদি না হয়, তাহলে বিচার হবে কীভাবে?

সাগর-রুনি হত্যার পর এই ঘটনার বিচারে সাংবাদিকরা জোরালো আন্দোলন করেছিলেন। এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি নজরে আনলে নওশের বলেন, এটিতো আমারও প্রশ্ন, এই আন্দোলন বন্ধ হয়ে গেল কেন? এটাতো সাংবাদিকদেরও দায়িত্ব। কেন শুরুর দিকের মতো এখন আর আন্দোলন হয় না, সেটি তো আমাদের পরিবারেরও প্রশ্ন।

সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা প্রশ্ন রেখে বলছেন, ওই ঘটনার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ৪৮ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছিলেন তারা ক্লু খুঁজে পেয়েছেন। পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছিলেন তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তাহলে তারা সেসময় বলেছিলেন আমরা পেয়ে গেছি, এরপর বছরের পর বছর কেটে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছে না কেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী?

গত ২০ অক্টোবর (রোববার) সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। ৬ নভেম্বর (বুধবার) মামলার সিডিসহ তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।

ওই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে অভিযোগ ওঠা তানভীর রহমান নামের এক ব্যক্তির মামলা বাতিল চেয়ে করা আবেদনের শুনানিতে এ আদেশ দেয়া হয়। ওইদিন আদালতে তানভীরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।

সারওয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। আদালত বলেছে, তদন্ত শেষ হবে কবে? তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে? শুনানি নিয়ে আদালত তানভীরের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না এ মর্মে রুল দেয়া হয়। 

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেফতারের ২৬ মাস পর জামিনে কারাগার থেকে বের হন তানভীর রহমান। তানভীরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তিনি ঢাকায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকেন। তানভীর রহমান ২০১২ সালের ১ অক্টোবর তার কর্মস্থল স্কলাসটিকা স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। এরপর ৯ অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পরে উচ্চ আদালত থেকে তানভীর জামিন পান। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি জামিনে মুক্তি হন।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ড মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে ৮জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান।

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে ১৪ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ধার্য করেছে বিচারিক আদালত। এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ৬৮ বারের মতো পেছালো।

মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ১ অক্টোবর দিন ধার্য ছিল। তবে বরাবরের মতো ওই দিনও মামলার তদন্ত সংস্থা র‌্যাব প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস প্রতিবেদন দাখিলের নতুন এ তারিখ ঠিক করে ওই দিন আদেশ দেন।

এমএ/এসএমএম

আরও পড়ুন