• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০১৯, ১০:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৩, ২০১৯, ১১:৪৭ এএম

আবরারের মৃত্যুর দায় কার, প্রশ্ন বাবার

আবরারের মৃত্যুর দায় কার, প্রশ্ন বাবার
নাইমুল আবরার

প্রথম আলোর সহযোগী সাময়িকী ‘কিশোর আলোর আনন্দ’ অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র নাইমুল আবরারের মৃত্যু হয়। আর এই মৃত্যুর কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলাকে। প্রশ্ন উঠেছে, তাকে পাশের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে না নিয়ে কেন যানজট পেরিয়ে মহাখালী ইউনিভার্সেল হাসপাতালে নেয়া হল? এটাকেই তার অকাল মৃত্যু মূল কারণও বলা হচ্ছে। আবরারের বাবা মজিবুর রহমানের প্রশ্ন, এ মৃত্যুর দায় কার? আয়োজক না কলেজ কর্তৃপক্ষের। আবরারের মৃত্যুর পেছনে তদন্ত করে সঠিক তথ্য প্রকাশ ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি। 
 
শনিবার (০২ নভেম্বর) প্রাইভেট টিভি চ্যানেল একাত্তরের জার্নালে এসব কথা বলে তিনি। এ সময় অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট রাশিদা হক কনিকা ও ইউনিভার্সেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আশীষ কুমার রায় কথা বলেন।

ইউনিভার্সেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আশীষ কুমার রায় বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ছিলাম, হি ইজ ক্লিনিক্যালী ডেড। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি, যদি কোনো রকমের তাকে বাঁচানো যায়। সে চেষ্টার অংশ হিসেবে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়েছিল। সেখানেও তার ইসিজি ফ্ল্যাট এসেছে। কোনোভাবে আবরারকে বাচানো সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে দমকল বাহিনীর কর্তৃপক্ষ বলেন, তাদের এ বিশাল অনুষ্ঠানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি দমকল বাহিনীকে। চাওয়া হয়নি কোনো সহায়তা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা বলেছেন, তার মৃত্যুর খবর যথা সময়ে জানানো হয়নি। পাশাপাশি অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। কিশোর আলো কর্তৃপক্ষ এই মর্মান্তিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করেছে। তারা বলেন, এ মৃত্যুর খবর রাতে ৭টার পর প্রকাশ করেছেন। এর আগে কিশোর আলোর অনুষ্ঠান চালিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ।   

তবে এ মৃত্যুর ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

অপরদিকে, এ ঘটনায় শনিবার (০২ নভেম্বর) কলেজ ক্যাম্পাসে দিনভর বিক্ষোভ করছেন আবরারের সহপাঠীসহ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের প্রশ্ন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর আবরারকে চিকিৎসার জন্য রাস্তার উল্টো পাশেরই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে মহাখালীতে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সাবেক আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল) নেয়া হলো কেন? কাছের কোনো হাসপাতালে নেয়া হলে আবরারকে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হতো। আবরারের মৃত্যুর দায় কে নেবে? এমনই প্রশ্ন এখন অভিভাবক ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। 

গতকাল সকাল ১০টা থেকে আবরারের সহপাঠী ও অভিভাবকরা কলেজের সামনে উপস্থিত হতে থাকেন। শুরুতে তাদের কলেজে ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা। শুধু তাই নয়, কলেজের মোট ৬টি আবাসিক হাউজের কোনো শিক্ষার্থীকেও বাইরে আসতে দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার মারা যাওয়ায় অনুষ্ঠানের আয়োজক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাই দায়ী। এমন একটি দুর্ঘটনার পরও অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখার মানসিকতা নিন্দনীয়। একটি শিক্ষার্থীর জীবনের তুলনায় অনুষ্ঠানকেই আয়োজক কর্তৃপক্ষ বড় করে দেখেছে।

মডেল কলেজের সামনে উপস্থিত একজন অভিভাবক বলেন, কিশোর আলোর আয়োজন ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য। তারা শিশু-কিশোরদের নিয়ে অনেক কথা বলে। কিন্তু তাদের অনুষ্ঠানে একটি শিশু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে, তাকে দ্রুত চিকিৎসা দিতে কাছের কোনো হাসপাতালে নেয়া হলো না কেন? এ প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারবে।

ওই অভিভাবক বলেন, আমরা বুঝতে পারিনি মূল ঘটনা কী হয়েছিল। আমরা জেনেছি, একটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। কিন্তু এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, আমরা বুঝতে পারিনি। আয়োজকদের উচিত ছিল, ঘটনাটি ঘটার সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নম্বর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাকে দ্রুত কাছের কোনো হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। অনুষ্ঠানটিও তখনই বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। একটি শিশুর জীবন চলে যাচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে গান-বাজনা চলবে, এটা তো মেনে নেয়া যায় না।

কলেজের সামনে উপস্থিত হওয়া শিক্ষার্থীরা জানান, নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে শুক্রবার রাতেই নিষেধ করে দেয়া হয়েছে, তারা যেন শনিবার কলেজে না আসেন। তারা আরও বলেন, ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আছে কুদরত-ই-খুদা হাউজে। কিন্তু তাকে বাইরে আসতে দেয়া হচ্ছে না।

কেবল কিশোর আলো কর্তৃপক্ষই নয়, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, কলেজের মাঠ প্রায় পুরোবছরই বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া হয়ে থাকে। ফলে স্কুল ও কলেজটির শিক্ষার্থীরাই ঠিকমতো খেলার সুযোগ পায় না। শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা অভিভাবকদের সন্তানদের পরীক্ষার নম্বর কম দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম মানসিক নির্যাতন করে বলেও অভিযোগ করেন।


এইচএম/টিএফ

আরও পড়ুন