• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৩:৫৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৪:০৩ পিএম

তুরিনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

তুরিনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ-ফাইল ছবি

গুরুতর অসদাচরণের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে আইনজীবী তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সোমবার (১১ নভেম্বর) আইন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আইন-আদালত অঙ্গনে আবারও আলোচনায় উঠে আসছে তার বিরুদ্ধে আসা যত অভিযোগ। পেশাগত অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা-ভঙ্গের কারণে তাকে অপসারণ করা হলেও আলোচনায় উঠে আসছে তার বিরুদ্ধে তার মা ও ভাইয়ের আনা অভিযোগও।

গত বছর ২০১৮ সালের ৮ মে পেশাগত অসদাচরণ, শৃঙ্খলা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব মামলার কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওইদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখা থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারই প্রেক্ষিতে সোমবার অপসারণের এই সিদ্ধান্ত এসেছে।

জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের অন্যতম আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে তুরিন আফরোজের গোপন বৈঠক সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তারই প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে অভিযোগের চিঠি পেয়েছি। অভিযোগ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রসিকিউটর তুরিন একজন যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এটা যদি সত্যি হয়, তবে মন্ত্রণালয় অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। 

ওই সময় তুুুরিন আফরোজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। আমি এখনও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদে বহাল আছি। আমাকে কেউ বরখাস্ত করেনি।’’ 

আরেক প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম গণমাধ্যমকে বলেন, ৭ মে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে সংশ্লিষ্ট ওয়াহিদুল হকের মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। পরদিন তাকে প্রসিকিউশনের সব দায়-দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন। চিফ প্রসিকিউটরের দুটি চিঠি এবং তার (তুরিন আফরোজ) সঙ্গে আসামির কথোপকথনের (২০১৭ সালের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর) সিডিসহ যাবতীয় নথি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। 

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তার মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের  ১১ নভেম্বর প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর তুরিন আফরোজ ফোনে আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করে বোরকা পরে একটি হোটেলে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ রয়েছে বলে তাকে জানান। পরে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার নজরে আসলে প্রসিকিউটর তুরিনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন চিফ প্রসিকিউটর। পাশাপাশি এ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।

এদিকে গত ২০ জুন তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন তার মা সামসুন নাহার তসলিম ও ভাই শাহনেওয়াজ শিশির। সুপ্রিমকোর্ট অঙ্গনে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম কার্যালয়ে এ সম্মেলন করা হয়।

সম্মেলনে সামসুন নাহার তসলিম বলেছিলেন, ‘‘আজ দুই বছর ৩ মাস ১৯  দিন আমি আমার বাসার বাইরে। আমার স্বামী মারা যাওয়ার ১৮ দিন পরে তুরিন আমাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। আমার দোষ তার (তুরিন আফরোজ) কিছু অনৈতিক আচরণের প্রতিবাদ করা। যেমন- আমাদের ভাড়াটিয়াদের থেকে সবসময় ভাড়ার টাকা আমিই নিতাম। আমার স্বামী অবসরে যাওয়ার পর থেকেই বাড়ি ভাড়ার টাকায় আমাদের সংসার, ওষুধ খরচ চলতো। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সে বাড়ি ভাড়ার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়। অপরিচিত লোকেদের রাত-বিরাত ঘরে প্রবেশ নিয়ে দারোয়ান ও ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করলে তার সঙ্গে প্রায় লাগতো (ঝগড়া)। এসব বিষয়ে নিষেধ করলে র‌্যাব, পুলিশের ভয় দেখাতো এবং বলতো ওরা সবাই তার বন্ধু। কোনও কিছু বললেই ৫৭ ধারায় গ্রেফতার করার ভয় দেখাতো। আমি তো ধারা বুঝি না। আরও বলতো, পৃথিবীর যেখানেই থাকো সেখান থেকেই ধরে নিয়ে আসবো। আর তার গানম্যান দিয়ে ভয় দেখাতো। গ্রামের বাড়ি নীলফামারি যেতে পারি না, সে সেখানে দায়িত্ব নিয়ে জমি-জমা ও বাড়ি নিজের নামে কুক্ষিগত করেছে এবং প্রতিবাদ করলে কথায় কথায় বড় আপু (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ও ছোট আপুর (প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা) প্রসঙ্গ টানতো।

তিনি আরও জানান, এসব জানানোর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে ব্যর্থ হই। ভেবেছিলাম তিনি একজন মা। ওনার ঘরে এমন হলে উনি কী করতেন? আমরা জানি উনি অন্যায়-অবিচারকে প্রশ্রয় দেবেন না। আমি চাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। আমি আজ মিডিয়ার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর  সহযোগিতা কামনা করছি। আমার শরীর ভীষণ খারাপ। ৬৫ শতাংশ কিডনি অকেজো… (কাঁদতে থাকেন)। সঙ্গে আবার ডায়াবেটিস আছে। ওষুধ কেনার পয়সা বাড়ি ভাড়া থেকে পেতাম সেটাও সে কেড়ে নিয়েছে। থাকার জায়গা নেই, এখানে সেখানে থেকে বেড়াই। আমি আমার দেশ ছেড়ে এ বয়সে কেন বিদেশে পড়ে থাকবো? এ দেশ আমার জন্মস্থান ও আমার ৪৮ বছরের সংসার। আমিতো এখানেই থাকতে চাই। আমি আমার সংসারে ফিরে যেতে চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’’

তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ শিশির বলেন, ‘‘ক্ষমতার দাপটে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আমাকে এবং আমার বিধবা মাকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং হয়রানি করে আসছে। তার কারণ একটি। আর তা হলো- আমাদের সম্পদ কুক্ষিগত করা। চক্ষুলজ্জায় এতদিন বিষয়টি আড়াল করে রেখেছি। আমি ও আমার অভাগিনী মা কাউকে অবমাননা করতে চাই নি। একজন বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে আমার বাসা থেকে আমাদের বের করে দেয়ার পরও রাজউক কর্তৃক কর ও ভূমি কর আমি নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছি। অথচ তুরিন আফরোজ আমাদের ক্ষতি করছে। ব্যারিস্টার তুরিন শুধু ঢাকাতেই নয়, নীলফামারিতে আমাদের চাচাতো ভাই ও বোনদের জমি-জমা জিম্মি করে রেখেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বাড়ি ফিরে পাওয়ার দাবি জানাই।’’

এমএ/টিএফ

আরও পড়ুন