• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:১৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১১, ২০১৯, ০৯:১৬ পিএম

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি : তুরিন আফরোজ

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি : তুরিন আফরোজ
তুরিন আফরোজ - ফাইল ছবি

‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের’ দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের দায়িত্ব থেকে আইনজীবী তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়নি। তাই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আমি জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি।’

জানতে চাইলে আজ সোমবার (১১ নভেম্বর) দৈনিক জাগরণকে তিনি বলেন, ‘যেকোনো অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারও ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়। অভিযুক্তের জন্য এটি সাংবিধানিক অধিকার। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তরাও এই সুযোগ পেয়ে থাকে। অথচ আমাকে এই সুযোগ দেয়া হয়নি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আইনমন্ত্রী বা তার মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা এই নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।’

আনুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞেস করেনি, অনানুষ্ঠানিকভাবে জিজ্ঞেস করেছে কি? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, অনানুষ্ঠানিকভাবেও তারা কেউ কিছু জিজ্ঞেস করেননি।’

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে হওয়া মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। এই আসামির সঙ্গে তিনি গোপন বৈঠক করেছেন এবং তার কাছ থেকে টাকা চেয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অপসারণ করা হয়।

এই প্রসঙ্গ টেনে তুরিন আফরোজ বলেন, আমি প্রসিকিউটর থাকাকালেই এই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। আর আমার বিরুদ্ধেই এই আসামির কাছ থেকে টাকা চাওয়ার অভিযোগ আনা হয়!

তুরিন আফরোজ এই আসামির কাছে মামলার নথিও তুলে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এই প্রসঙ্গ টেনে তিনি দাবি করে বলেন, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেসময় মামলাটির নথি প্রস্তুতই হয়নি। তাহলে নথি তুলে দেয়ার প্রশ্ন আছে কীভাবে?            

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, যে আসামির সঙ্গে তুরিন আফরোজ ‘গোপন বৈঠক’ করেছিলেন, ওই মামলার অভিযোগ গঠন হওয়ায় এই প্রসিকিউটরকে অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়েছিল।

এই অভিযোগ ওঠার আগে তুরিনের কাজে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তাকে অপসারণের সিদ্ধান্ত ‘খুশি মনে’ নেননি তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে তুরিন আফরোজকে অপসারণ করে আইন মন্ত্রণালয়ের আদেশের পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তার (তুরিন) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি একজন আসামির সাথে যে মামলা তিনি নিজে করছিলেন, তার সাথে আলাপ আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। মামলার আলোচনা করার সময় এ-ও বলেছিলেন এ মামলার কোনো সারবত্তা নেই।’

‘সেই যে কথোপকথন টেপ করা হয়, টেপ করা কথোপকথনগুলো এবং তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অভিযোগ আমাদের কাছে পাঠান।’

‘এ অভিযোগ নিয়ে সাক্ষীদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং উনার সাথে কথা বলার প্রয়োজন যতটুকু মনে করি হয়েছিল। যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে সেগুলো কিন্তু অল আর ডকুমেন্টরি। সেই জন্য আমরা সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অব্যাহতি দিয়েছি।’

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ মামলা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ। 

গত বছর এপ্রিলে অভিযোগ ওঠে, মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ২০১৭ সালের নভেম্বরে ওয়াহিদুল হককে ফোন করে কথা বলেন তুরিন। পরে পরিচয় গোপন করে ঢাকার একটি হোটেলে তার সঙ্গে দেখাও করেন।

ওই অভিযোগ ওঠার পর প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে ওয়াহিদুল ও তুরিনের কথোপকথনের রেকর্ড ও বৈঠকের অডিও রেকর্ডসহ যাবতীয় ‘তথ্য-প্রমাণ’ আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের সব মামলা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তুরিনকে।

সোমবার (১১ নভেম্বর) আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর অনুবিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে তুরিনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এতে তুরিনের ‘শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের’ কথা বলা হয়।

এখন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কাজটা যে আমি খুশি হয়ে করেছি, তা না। কিন্তু এটা তাকে অব্যাহতি দেয়াটা জরুরি হয়ে পড়ে। কারণ যে মামলা নিয়ে কথা হচ্ছে, সেই মামলায় চার্জ গঠন হয়ে গেছে, সেই কারণে আমার মনে হয় এই ব্যাপারটি একটি নিষ্পত্তি টানা দরকার ছিল, সেজন্য এটা করা হয়েছে।’

তুরিনের এতদিনের কাজে নিজের সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, “যে কারণে আজ তাকে অব্যাহতি দেওয়া হল, তার আগ পর্যন্ত  তিনি কিন্তু নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন।

‘এ ব্যাপারে তার সেন্স অব জাজমেন্ট কেন কাজ করেনি, আমি জানি না, তার দিক থেকে এসব বক্তব্য যেটা ধারণ করা হয়েছে, যেটা তার গলা বলে প্রমাণিত হয়েছে, এটা উনি কেন করলেন, আমরা বুঝতে পারছি না। এটা দুঃখজনক।’

তুরিন অভিযোগ করেছেন, তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘তার সাথে কথা হয়েছে, যে প্রমাণাদি আছে, সেটা যদি এখন ইয়ে করতে চান, সেটা তো ওপেন। কিন্তু টেপ করা কথাবার্তা আমরা পেয়েছি এবং তার বিরুদ্ধে নালিশ হয়েছে এবং আমরা সার্বিকভাবে আলোচনা করার পর তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেক প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, তুরিন যে কাজ করেছেন, তা ফৌজদারি অপরাধ এবং আইন মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশা করছেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো এরকম কথা বলতে পারব না, আমার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই।’

এটা চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ কি না- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা আশা করি, যে আইনজীবীরা এ কাজে নিয়োজিত আছেন তারা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অত্যন্ত সজ্ঞান। তাদের নতুন কোনো মেসেজ দিতে হবে আমি মনে করি না।’

‘এখানে যদি শৃঙ্খলার বাইরে কোনো কাজ করা হয়, যেটা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা তার মান ক্ষুণ্ন করতে পারে, তাহলে তো ব্যবস্থা নেবই।’

এমএ/ এফসি

আরও পড়ুন