• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৫:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৫:৫১ পিএম

ভেজাল ও নকল ওষুধ

দ্বিতীয়বার অভিযোগ উঠলে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড

দ্বিতীয়বার অভিযোগ উঠলে হতে পারে মৃত্যুদণ্ড

ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ, বাজারজাত ও বিক্রির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরদ্ধে পুনরায় একই অপরাধের অভিযোগ উঠলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করার নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। যার ফলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিচারপতি একেএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশনা দেয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দেয়া এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখে মৌখিকভাবে এই নির্দেশনা দেয় আদালত। আদালত থেকে বের হওয়ার পর গণমাধ্যমকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার এই তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য এখন ৭দিন বা একমাস বিনাশ্রম দণ্ড দেয়া হচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ফলে যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদেরকে আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যেন তারা মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ না করেন, বিক্রি না করেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, গত দুই মাসে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ‘মেয়াদোত্তীর্ণ,  নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টে ৫৭২টি মামলা করা হয়। এতে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একইসঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়েছে। এছাড়াও একই সময়ে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধংস করা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

মঞ্জুরুল হক বলেন, অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে, এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিল ওষুধের নাম যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজিতে লেখা। তিনি বলেন, আদালত স্ট্রিপেও (ওষুধের পাতায়) বাংলায় চেয়েছেন। স্ট্রিপে ইংরেজিতে লেখা আছে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভব করব। তবে, অলরেডি অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। আদালতের চাওয়া শতভাগ যেন হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দেব।

গণমাধ্যমকে মাহমুদ বাশার বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিটিভ) দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে সেটা বন্ধ করার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতিকে আদালত নির্দেশনা দিয়েছে, যেন এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আদালত আদেশে বা নির্দেশনা দিতে পারেন।

বাশার বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইন, ‘২০০৯’র ৫১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে অন্যান্য দ্রব্যের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ-ভেজাল ওষুধও যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে। সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

সেজন্য আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ওষুধের প্যাকেট এবং ওষুধের পাতায় যেন স্পষ্ট করে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বাংলা এবং ইংরেজিতে ছাপিয়ে বাজারজাত করেন সেজন্য ওষুধ শিল্প সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনস্বার্থে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর সারাদেশে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গত ২৮ জুন রুলসহ নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহকারী, সংরক্ষণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ‍নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।

রুলে ফার্মেসি, ওষুধাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না,তা জানতে চাওয়া হয়।

স্বাস্থ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, বাণিজ্যসচিব, শিল্পসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও উপ পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়।

এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন গত ২৪ জুন হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেছিলেন।

এমএ/টিএফ

আরও পড়ুন