• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৯:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৩, ২০১৯, ০৯:৫৯ পিএম

বুদ্ধিজীবী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে যে যুক্তি ট্রাইব্যুনালের

বুদ্ধিজীবী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে যে যুক্তি ট্রাইব্যুনালের
মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আল বদর বাহিনীর নেতা আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানদের মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে তুলে ধরা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন লেখকের লেখা ও তৎকালীন সংবাদপত্র থেকে বুদ্ধিজীবী নিধনের ঘটনা তুলে ধরা হয়।  

মৃত্যুদণ্ড দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হিংস্রতা মৌলিক মানবতাবোধের জন্য হুমকি।

শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এই দিবসের প্রাক্কালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দেয়া রায়ের কিছু অংশ তুলে ধরা হলো দৈনিক জাগরণ এর পাঠকের জন্য।

ইতিহাস বলে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা সময়ে বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে নানা ধরনের নৃশংস আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু ইতিহাস এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়নি, যেখানে জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিজীবীদের লক্ষ্য করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞ শুধু অপরাধীর অপরাধের মাত্রাই বাড়ায়নি, গোটা জাতির জন্য যন্ত্রণার ছাপ এঁকে দিয়েছে। দশকের পর দশক ধরে জাতি ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যরা সেই অব্যক্ত যন্ত্রণা বুকে চেপে আছেন, আইনের অক্ষর এখানে নির্বিকারভাবে বসে থাকতে পারে না। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে অপরাধের গভীরতার বিচারে একমাত্র মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে ন্যায়বিচার করা হবে।

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়ে এসব কথা বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা বিদেশে পলাতক থাকায় এই দণ্ড এখনও কার্যকর হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড আপিলে বহাল থাকার পর মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়ে বিভিন্ন লেখকের লেখা বা সংবাদ স্থান পেয়েছে।

রায়ে “৭১ এর দশমাস” বইয়ের একটি অংশ উদ্ধৃত করা হয়। সেখানে বলা হয়, “পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী চরম দক্ষিণপন্থী উগ্র সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ট গেস্টাপো আল-বদর বাহিনীর ঘাতকেরা ঢাকা শহরে যুদ্ধ ও কারফিউর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে খুঁজে খুঁজে সেরা বাংগালী অধ্যাপক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের রায়েরবাজার ও মীরপুর অবাংগালী অধ্যুষিত এলাকায় নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। উল্লেখ্য পাক সামরিক অফিসারদের আদেশে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড সম্পন্ন হলেও এ হত্যার পরিকল্পনা তালিকা প্রণয়ন, আত্মগোপনকারী বুদ্ধিজীবীদের খুঁজে বের করা, তাদের ধরে নিয়ে নৃশংস অত্যাচারের মধ্য দিয়ে হত্যা করার কাজটি আল-বদর ও রাজাকার বাহিনীর বাংগালী সদস্য ও তাদের নেতাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়।”
 
‘একাত্তরের ঘাতক দাললরা কে কোথায়’ বইটির কিছু অংশ থেকে বলা হয়— “সেই অতি নৃশংস হত্যাযজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য আলবদররা ব্যাপকভাবে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করা শুরু করে ১০ ডিসেম্বর থেকে। কার্ফু এবং ব্লাক আউটের মধ্যে জীপে করে আলবদররা দিন রাত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ী বাড়ী যেয়ে তাদেরকে প্রথমে সারা গায়ে কাদা মাখা একটি বাসে তোলে। এরপর বাস বোঝাই বুদ্ধিজীবী সহ নানা স্তরের বন্দীকে প্রথম মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের আলবদর হেডকোয়ার্টারে নির্যাতন ও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।... আল-বদরদের এই অপহরণ স্কোয়াডের নেতৃত্ব দিত হয় কোন আল-বদর কমান্ডার নতুবা পাকবাহিনীর অনধিক ক্যাপ্টেন মর্যাদার কোন অফিসার। সম্ভবত পাকবহিনীর নিজস্ব টার্গেট বুদ্ধিজীবীদের অপহরণের ব্যাপারে নিশ্চিত হবার জন্যই পাক সেনা অফিসার অপহরণ স্বোয়াডের নেতৃত্ব দিত।”

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান

চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া রায়ে এসব কথা বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তারা বিদেশে পলাতক থাকায় এই দণ্ড এখনও কার্যকর হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ড আপিলে বহাল থাকার পর মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে

..........‘’..........

“সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখে রাজাকারবাহিনীর প্রধান ও শান্তি কমিটির লিয়াজো আফিসারকে নিয়ে গোলাম আজম মোহাম্মদপুরে ফিজিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে যে রাজাকার ও আল-বদর শিবির পরিদর্শন করেছিলেন সেটি ছিল আল-বদরদের হেডকোয়ার্টর। স্বাধীনতামনা বুদ্ধিজীবীদের বেশীরভাগকে আল-বদররা প্রথমে চোখ বেঁধে এখানেই নিয়ে আসে। নির্যাতনের পর এখান থেকেই তাদের রায়ের বাজারে ও মীরপুরের শিয়াল বাড়িসহ অন্যান্য বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।”  

একই বইয়ের আরেকটি  অংশ থেকে বলা হয় “... 27/12/71 তারিখের দৈনিক আজাদে বিরাট হেড লাইনে বড় বড় হরফে লেখা “আর একটা সপ্তাহ গেলেই ওরা বাংগালী বুদ্ধিজীবীদের সবাইকে মেরে ফেলত ---বদর বাহিনীর মাস্টার প্লান” শীর্ষক দীর্ঘ প্রতিবেদনটির অংশ বিশেষ এখানে উদ্ধৃত হল— “...হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর নির্বচার গণহত্যায় সক্রিয় সহযোগীতা করেই জামাতে ইসলামী ক্ষান্ত হয়নি--- বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার উদ্দেশে তারা গড়ে তুলেছিল এক সশস্ত্র গুপ্ত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন--- বদর বাহিনী নামে যা সর্বসাধারণের কাছে পরিচিত ছিল। পকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের শেষ মুহূর্তে এই বদর বাহিনী বহুসংখ্যক বুদ্ধিজীবীকে রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে--- এ খবর এখন সবাই জেনে গেছে।...”

রায়ে ইত্তেফাকের একটি সংবাদ বিষয়ে বলা হয়,  “বদর দিবসের সমাবেশে ইসলামী ছাত্রসংঘ সভাপতির ভাষণ” published in The Daily Ittefaque, 8 November 1971 narrates that “এপিপি ও পিপিআই পরিবেশিত খবরে বলা হয়, আল বদর দিবস উপলক্ষে গতকাল (রবিবার) বিকালে বায়তুল মোকররম প্রাংগনে ইসলামী ছাত্রসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের সংহতি ও অখন্ডতা রক্ষায় জনগণের দৃঢ় সংকল্পের পুনরুক্তি করা হয়।... ভারতীয় ও দুষ্কৃতিকারীদের হামলা প্রতিরোধে দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করিয়া বিভিন্ন শ্লোগান দেওয়া হয়। ... সভাপতি জনাব আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ বক্তৃতা প্রসংগে বলেন যে, আজ (সোমবার) হইতে কোন পাঠাগার হিন্দু লেখক ও হিন্দু প্রভাবিত মুসলিম লেখকদের লিখিত কোন পুস্তক রাখিতে দেওয়া হইবে না। তিনি বলেন যে, ইসলামী ছাত্র সংঘের স্বেচ্ছাসেবকগণ অনৈসলামিক প্রভাব হইতে মুসলমানদের রক্ষার জন্য পাঠাগারে ঐ সব বই পাইলে তাহা পুড়াইয়া দিবে। জনাব মুজাহিদ বলেন, বিশ্বের মানচিত্র হইতে ভারতের নাম মুছিয়া না ফেলা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে।... ”

একই বছর ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। 

রায়ে বলা হয়, ‘‘একাত্তরে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের যে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কোনও সাজা ওই বর্বরতার বিচারে অক্ষম। একমাত্র ও একমাত্র সর্বোচ্চ শাস্তিই গোটা জাতি এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্যদের ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা মেটাতে পারে।’’

একাত্তর সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অন্যতম দুই হোতা, গুপ্তঘাতক আল বদর বাহিনীর নেতা চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণাকালে এ কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। একাত্তরের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে তাদের দুজনকেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, জামায়াতে ইসলামীর মস্তিষ্কপ্রসূত ঘাতক বাহিনী আল বদর একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনের যে নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে, তা গোটা জাতির বুকে ক্ষত হয়ে আজও রক্ত ঝরাচ্ছে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, গত চার দশকে মাটির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যাকারীদের বিচার করতে না পারায় জাতি হিসেবে আমরা লজ্জিত; এ লজ্জা আমাদের ক্ষতকে দিন দিন বাড়িয়ে তুলেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ বাঙালি জাতিকে চিরদিন নিদারুণ যন্ত্রণাই দিয়ে যাবে।’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রত্যেক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও দালিলিক নথির ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল 

..........‘’..........

রায়ে আদালত বলেন, ‘‘এটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীন আলবদর বাহিনীর একটি দলের নেতৃত্বে ছিলেন। আশরাফুজ্জামান ছিলেন বুদ্ধিজীবী নিধন পরিকল্পনার ‘চিফ এক্সিকিউটর’, মুঈনুদ্দীন ছিলেন ‘অপারেশন ইনচার্জ’। তাদের অংশগ্রহণে যেমন বন্দুকের নলের মুখে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে, তেমনি পুরো হত্যাযজ্ঞের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিষয়ে তারা সবকিছু জানতেন। এ জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের ব্যক্তিগত অংশগ্রহণের দায় ও ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায় রয়েছে।’’

১৫৪ পৃষ্ঠায় ৪৫৩ অনুচ্ছেদে বিস্তৃত পূর্ণাঙ্গ রায়ে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞের প্রামাণ্য বিবরণ উঠে এসেছে।

সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও দালিলিক তথ্যপ্রমাণ মূল্যায়ন করে ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, ‘‘চূড়ান্ত বিজয়ের আগ মুহূর্তে সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা থেকে অপহরণ করে জামায়াতের সশস্ত্র শাখা গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী নিধনের নেতৃত্ব দেয়া মুঈনুদ্দীন একাত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এ জন্যই অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে অপহরণের সময় তিনি মুঈনুদ্দীনকে চিনতে পেরেছিলেন। সাক্ষ্যপ্রমাণে উঠে এসেছে, বুদ্ধিজীবী নিধনের ‘অপারেশন ইনচার্জ’ হিসেবে মুঈনুদ্দীন শুধু নিধনে নেতৃত্বই দেননি, নিজেও অংশ নিয়েছেন। বন্দুকের নলের মুখে বাসা থেকে অপহরণ করে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যাওয়া হত মোহাম্মদপুরে শারীরিক শিক্ষা কলেজে স্থাপিত আলবদরের সদর দপ্তরে, সেখানে তাদের চরম নির্যাতনের পর হত্যা করা হত রায়েরবাজার বা মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে।

রায়ে বলা হয়, ‘‘বিজয়ের পর আশরাফুজ্জামানের একটি ডায়েরি পাওয়া যায়, যা তাদের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অন্যতম প্রমাণ। ডায়েরিটিতে ১৯ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও ঠিকানা লেখা ছিল। পাকিস্তানি গবেষক সেলিম মনসুর খালিদের লেখা আলবদর গ্রন্থ অনুসারে, ওই বইয়ের লেখকের কাছে আশরাফুজ্জামান ডায়েরি লেখার বিষয়টি স্বীকারও করেছেন।’’

পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রত্যেক বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে মুঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও দালিলিক নথির ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

ডা. আলীম চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বিশ্লেষণ করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘‘আলীম চৌধুরীকে অপহরণের সঙ্গে মাওলানা আবদুল মান্নান জড়িত ছিলেন। একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর মান্নানকে রমনা থানায় সোপর্দ করা হলেও পরে অজ্ঞাত কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। জাতির জন্য লজ্জা, মাওলানা মান্নান পরে স্বৈরশাসক এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হন।’’

রায়ে বলা হয়, ‘‘কেন বিজয়ের অব্যবহিত পরে মুঈনুদ্দীন পালিয়ে গেলেন এবং আজও বিদেশে রয়েছেন?’’ 

সম্প্রতি আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুঈনুদ্দীন মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ ও অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। একজন অপরাধী সাধারণত তার অপরাধ স্বীকার করেন না। স্বাধীনতার পরপরই তার পালিয়ে যাওয়া অপরাধী মানসিকতার স্পষ্ট উদাহরণ।

এমএ/ এফসি/ এসএমএম

আরও পড়ুন