• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২০, ০২:২৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৩, ২০২০, ০২:২৯ পিএম

সাংবাদিক আরিফুলকে নয়, সাজা দেয়া হয় তার মৃত বাবাকে!

সাংবাদিক আরিফুলকে নয়, সাজা দেয়া হয় তার মৃত বাবাকে!
হাইকোর্টে বাংলা ট্রিবিউন এর কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি ● সংগৃহীত

মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। এরপর তার বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে তাকে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সময়টিভি।

কিন্তু সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে দোষ স্বীকারোক্তিপত্রে আসামির নাম দেখানো হয় মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। আবার আসামির বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে  মৃত. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত আরিফুল ইসলামকে সাজা দেয়ার যে দাবি জানিয়েছে সেখানে আরিফুল ইসলামের মৃত বাবাকে সাজা দেয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা দেয়ার বৈধতা প্রশ্নে দায়ের করা রিটের শুনানিতে সোমবার (২৩ মার্চ) বিচারপতি আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এসব বিষয়ে তুলে ধরা হয়।

আদালতে সাংবাদিক আরিফুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিক আরিফকে সাজা প্রদান সংক্রান্ত নথিপত্রের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এবং এভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ নথি দিয়ে হাইকোর্টে উপস্থাপন কতটুকু আইনসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক আরিফকে সাজা দেয়া হয়েছে ১৩ মার্চ, অথচ সাজার কপিতে সই করা হয়েছে ১৪ মার্চ। আবার সাজা দেয়ার আগেই তাকে জেলে পাঠানো হলো, এটা কীভাবে সম্ভব? ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিতে আসামির নাম এবং পিতার নাম একই লেখা হয় কীভাবে?

জবাবে আদালত বলেন, আমি নিজেও এসব নথি পড়েছি। প্রতিটা শব্দ পড়েছি। অনেক কিছু এখানে অসঙ্গতি পেয়েছি। যখন কেউ কোনও কাজ করে তখন তার পদচিহ্ন (ফুট প্রিন্ট) রেখে যায়।

ইশরাত হাসান বলেন, স্বীকারোক্তিতে আসামি আর বাবার নাম একই। সেখানে আসামির নাম নেই। তাহলে কেন তাকে সাজা দেয়া হবে? তাহলে আরিফ তো সেই ব্যক্তি না। এমনকি স্বীকারোক্তিতে আরিফের কি অপরাধ তারও কোনও বর্ণনা নেই। এরপরও এ মামলায় আর কী থাকতে পারে? এ মামলায় এখন যদি নতুন করে আর কোনও নথি আসে তাহলে তার দ্বারা আদালত মিস লিড হতে পারে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, বাড়ি থেকে ধরে তুলে নিয়ে সাজা দেয়া আইনসম্মত নয়। এছাড়াও দুজন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্যে একই বক্তব্য দিয়েছেন। আবার মদ ও গাঁজা একসাথে খাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একসাথে মদ ও গাঁজা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে? এমনকি ঠিকানাও টেম্পারিং করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত মদ খাওয়ার অপরাধে সাজা দিয়েছেন। কিন্তু গাঁজার অপরাধে সাজা দেননি। তাহলে গাঁজা কোথায় গেল? এ মামলায় প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজায় এমন কোনও জায়গা নেই যেখানে আরিফের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন হয়নি।

আইনজীবীর শুনানি শেষ হলে আদালত বলেন, যেহেতু তিনি (সাংবাদিক আরিফ) হাইকোর্টে এসেছেন। সেহেতু তিনি পিটিশনার হলে ভালো হবে। আপনারা তাকে পিটিশনার হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করুণ। আমরা আদেশ দিতে চাই, নইলে অনেক কিছু মিস হয়ে যাবে।

আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ওনার (সাংবাদিক আরিফ) হাত ভাঙা। তখন আদালত বলেন, প্রয়োজনে উনি টিপসই দিয়ে মামলার পিটিশনে সই করুক। আমরা বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিচ্ছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আমরা মামলাটি শুনতে চাই।

গত ১৩ মার্চ মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে। তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়। এরপর গভীর রাতে জেলা প্রশাসকের অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে এক বছরের দণ্ড দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় কুড়িগ্রামের ডিসি সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এসএম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এসএমএম