কারাগারে বন্দি চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক সংকটে রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দি ও কারারক্ষীসহ রক্ষীর স্বজনদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। জাতীয় দৈনিকসহ গণমাধ্যমে লেখালেখির পরও এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান হচ্ছে না। দেশের ৬৮টি কারাগারে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৯জন। তাদের দিয়েই ঢিমেতালে চলছে বন্দি চিকিৎসা।
এ দুর্দশার কারণে দেশের মোট ৬৮টি কারাগারে ১২০জন কারা চিকিৎসক নিয়োগ চেয়ে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং কারা সদর দপ্তরের প্রধানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার (৪ জানুয়ারি) রেজিষ্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে আর খান রবিন এ নোটিশ প্রেরণ করেন।
নোটিশে বলা হয়, কিছু দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন ও কারা কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে দেখা গেছে দেশের প্রায় ৬৮টি কারগারে মোট ১২৯ জন চিকিৎসক কর্মরত থাকার কথা। কিন্তু সারা দেশে মাত্র ৯ জন চিকিৎসক প্রায় ৮৯ হাজার কারাবন্দিকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। এমনিতেই নির্দিষ্ট পরিমাণের তুলনায় দেশের কারাগারগুলোতে বন্দিদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুব বেশি। সেই সঙ্গে নির্দিষ্টসংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় কারাবন্দিদের চিকিৎসার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। তাই আগামী সাত দিনের মধ্যে দেশের ৬৮টি কারাগারে অবশিষ্ট ১২০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে নোটিশে বলা হয়েছে। অন্যথায় প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট দায়ের করা হবে বলে জানান নোটিশ প্রদানকারী আইনজীবী।
স্বরাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় সূত্র বলেছে, সারাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ সারাদেশে কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এসব কারাগারে বন্দী আছে ৭০ হাজারেরও বেশী মানুষ। তাদের অধিকাংশই পাচ্ছেন না ভাল চিকিৎসা সেবা। কাগজে কলমে প্রতিটি কারাগারে একটি করে হাসপাতাল থাকলেও দেশের ৬১ কারাগারেই কোনো চিকিৎসক নেই। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ পাঁচটি কারা হাসপাতালে চিকিৎসক আছেন মাত্র ৯ জন। অথচ অনুমোদিত চিকিৎসকের মোট সংখ্যা ১২৯ জন।
কারা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারাদেশের যে পাঁচটি কারা হাসপাতালে ৯ চিকিৎসক রয়েছেন তার মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪ জন, কাশিমপুরে দুইজন, কুমিল্লায় একজন, পাবনায় একজন ও সিলেটে একজন। এ ৯ চিকিৎসকের মধ্যে পাঁচজনই মেডিকেল অফিসার। কাশিমপুর কারাগারে মাত্র দুইজন বিশেষজ্ঞ (জুনিয়র কনসালটেন্ট পদবির) চিকিৎসক রয়েছেন। ফলে কারা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চলছে টিমে তালে।
রাজধানীসহ সারাদেশের কারা হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন বয়সী (৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধ) বন্দি রয়েছে। অধিকাংশ কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকায় তাদেরকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এ কারণে জেলখানায় চর্ম রোগ বেশী হয়। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম ও বিনাশ্রম দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তরাও রয়েছেন।
কারা সূত্র মতে, অধিকাংশ কারা হাসপাতালে চলছে ফার্মাসিস্ট নির্ভর চিকিৎসা। সেবা বলতে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিনসহ ছোটখাট ওষুধই ভরসা। জরুরী পরিক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নেই কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি। পাশাপাশি চিকিৎসকের ভয়াবহ সংকট থাকায় কোনো বন্দি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারাগার থেকে মেডিকেল কলেজ ও জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। তড়িৎ গতিতে চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রিজন ভ্যান বা যানবাহন না পাওয়ায় বিড়ম্বনায় চিকিৎসা শুরু হতে বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে এআইজি প্রিজনস (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কারা হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট নতুন নয়। সংকট থাকলেও গুরুতর অসুস্থদের বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে অনুমোদিত চিকিৎসকের মোট শূন্যপদ রয়েছে ১২৯টি। পদ পূরণের ব্যাপারে তারা কারা অধিদফতরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন। নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনী দিক ঠিক রেখে চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
এইচ এম/এসজেড