• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯, ১০:০০ পিএম

রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ধরতে মাঠে নামছে দুদক

রাজস্ব ফাঁকিবাজদের ধরতে মাঠে নামছে দুদক

 

বরাবরের মতো যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন তাদের ধরতে অভিযানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাছে এসব শুল্ক ফাঁকিবাজ ও তাদের সহায়তা প্রদানকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের তালিকা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি এনবিআরের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে দুদক। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আমদানির ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা বিক্রেতা থেকে মালামালের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ইনভয়েসে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিক মূল্য দেখিয়ে এলসির মাধ্যমে কতিপয় অসাধু ক্রেতা-বিক্রেতা ব্যাংকের মালামালের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে টাকা পাচার বা মানিলন্ডারিং করে থাকে। রফতানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে মালামাল রফতানি করে ইনভয়েসে মালামালের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী কালো টাকা সাদা করে। 

কেমন তথ্য পাঠাতে হবে- চিঠিতে দুদক এর বিবরণও দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আমদানি করা পণ্য বন্দরে আসার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মালামাল খালাসের পূর্বে সোর্স বা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ও দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে বিভিন্ন চালানের পণ্য যাচাই করে। এতে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয়েছে তার পরিমাণসহ বিল অব এন্ট্রি, ইনভয়েস যাচাই করে মিথ্যা ঘোষণা বা রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা (যেমন আমদানিকারকের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির জন্য জরিমানা, মামলা দায়ের, লাইসেন্স বাতিল করে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করা) হয়। এ ধরনের ফাঁকিবাজদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। 

গত ৬ ফেব্রুয়ারি এনবিআরের কাছে দুদক জানুয়ারি মাসে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানিতে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারকের তথ্য চেয়েছে। চিঠিতে মিথ্যা ঘোষণায় রাজস্ব ফাঁকির যেসব ঘটনা এনবিআর উদঘাটন করে জরিমানা আদায় করেছে, সেসব আমদানি-রফতানিকারকের বিস্তারিত তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে। 

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ কাস্টমস বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়। এটা বন্ধ করতে হবে। হুন্ডির মাধ্যমে যে অর্থ পাচার হয় তা খুবই কম। কিন্তু কাস্টমসের মাধ্যমে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায় তা ধরা পড়ে না। কখনো কখনো ধরা পড়লেও জরিমানার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হয়। কিন্তু পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসে না। ফেব্রুয়ারি মাসের ওভার-ইনভয়েসের তালিকা ১ মার্চের মধ্যে দুদকের কাছে জমা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ইনভয়েস দুদক পরীক্ষা করে দেখবে। কারা ওভার ইনভয়েসের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে কাস্টমসের সংস্কার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সহায়তায় কিছু ক্ষেত্রে আংশিক সংস্কার হয়েছে। তবে আংশিক সংস্কার দিয়ে শুল্ক ফাঁকি রোধ করা সম্ভব না। এ জন্য কাস্টমস টু কাস্টমস সহযোগিতা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে, শুল্কায়নের সময় কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে সেদেশের কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা চালু করতে হবে। এছাড়া সরকারের অন্য দফতর যেমন বিডা, বেজা, বেপজা, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাস্টমসের যোগাযোগ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সহায়তাও নেয়া যায়। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে এমওইউ করতে হবে। এর আওতায় যেন শুল্ক ফাঁকিবাজ চিহ্নিত করার পর ওই ব্যবসায়ী সংগঠন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে- বন্দর ও কাস্টমসের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। বর্তমানে কাস্টমস চলে এক নিয়মে। বন্দর ও প্রাইভেট আইসিডি চলে অন্য নিয়মে। এছাড়া বন্দরে অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসাতে হবে। এখন যেসব স্ক্যানার আছে তা ২০০৮ সালের পুরনো। নতুন অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসিয়ে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রায় সব কাস্টমস কর্মকর্তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছেন। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে সবার নাকের ডগা দিয়ে বিদেশে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। পাচার রোধ করতে ও সরকারের রাজস্ব আদায়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের মনিটরিং করার অংশ হিসেবে এনবিআরে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ অর্জনের প্রকৃতি যাচাই-বাছাই করা হবে।

এ আই/ এফসি