• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:১৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৯, ১০:২৭ এএম

নির্বাচনের অপেক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ

নির্বাচনের অপেক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার ও মোহাম্মদ নুরুল আমিন (ডানে) -ছবি : জাগরণ

গত মঙ্গলবার ঘড়ির কাঁটায় বেলা সাড়ে এগারোটা ছুঁইছুঁই। রাজধানীতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে এলেন মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার। এরপর এই ভবন থেকে ওই ভবন, নিচতলা থেকে দোতলা ঘুরছেন। কিন্তু কোথাও কাউকে দেখতে পাচ্ছেন না। এভাবেই সাড়ে বারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও সংস্থার প্রধান প্রশাসকের দেখা পাননি।

এরই মধ্যে এলেন আরেক মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল আমিন। একইভাবে তিনিও তার প্রয়োজনের কথা বলার মত লোক পেলেন না। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে প্রশাসকের কক্ষের সামনে এই দুই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে প্রতিবেদকের দেখা হয়। তারা জানালেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রশাসকের সাক্ষাৎ পাননি তারা। এখানকার কর্মরতরা জানিয়েছেন, প্রশাসক কখনও-সখনও এখানে আসেন।

তাদের মতে, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় নিষ্প্রাণ হয়ে আছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। আগে এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের সব বিষয়ের দেখভাল করা হত। তবে পরে কিছু কার্যক্রম চলে যায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আর কিছু মুক্তিযোদ্ধা সংসদে। তবুও সব কাজের জন্যই অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখানে আসেন। তবে এই সংখ্যা দিন দিন কমছে। কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় তারা এখানে এসে প্রয়োজনীয় সেবা বা পরামর্শ পাচ্ছেন না। আগে এখানে এসেই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে কাজ এগিয়ে নিতেন তারা।

কথা প্রসঙ্গে চুয়াডাঙ্গার আলফাডাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. সফিউর রহমান জোয়ার্দ্দার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, আমার নামের বানান লাল মুক্তিবার্তায় ঠিক আছে, সরকারি ডাটাবেজে ঠিক আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত সনদেও  ঠিক আছে। তবে সরকারি গেজেটে ভুল আছে। এইটুকু ভুল সংশোধনের জন্য আমি দিনের পর দিন মন্ত্রণালয়ে ঘুরেছি। বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীও জানেন। কিন্তু কাজ হয়নি। সেজন্য হাইকোর্টে রিট করার ব্যাপারে প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলাম শেষবারের মতো মন্ত্রণালয়ে গেলে সেখানকার এক কর্মকর্তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সম্পর্কে যিনি আমার ভাগিনা হন। তিনি মাত্র চারদিনেই আমার কাজটি করে দেন। অথচ এইটুকু কাজের জন্য আমাকে বছরের পর বছর মন্ত্রণালয়ে ঘুরতে হয়েছে, অসম্মানিত হতে হয়েছে, অপদস্ত হতে হয়েছে। কিন্তু কাজটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে করাতে পারলে এত সময় নষ্ট হতো না এবং অসম্মানিত হতে হতো না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন এখানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে এসেছি একটি লাল মুক্তিবার্তা বইয়ের জন্য। কিন্তু এখানে এসে কাউকে পাচ্ছি না। কারণ নির্বাচন নেই নির্বাচিত প্রতিনিধিও নেই। 

মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, আমি তাবলীগে সময় দেই। এসেছিলাম কাকরাইল মসজিদে। সেখানকার কাজ শেষে এখন ছেলের বাসায় আছি। ভাবলাম ঢাকায় যখন আসলাম একটু মুক্তিযোদ্ধা সংসদে যায়। রংপুরে আমার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে নানা বিষয়ে কথা হয়। ভাবলাম সেসব বিষয়ে একটু জেনে যাই। কিন্তু এখানে তো কেউ নেই। নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিসহ দু’একজনকে দেখছি। কিন্তু তারা তো এসব বিষয়ে বলতে পারবেন না। আমাদের নির্বাচন হয়নি, হচ্ছে না, তাই নির্বাচিত প্রতিনিধিও নেই। আবার সরকার নিয়োজিত প্রশাসক উপস্থিত নেই। তাহলে কার কাছে বলব? 

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেলগাড়িতে আমাদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা অনেক দিনের দাবি, এর কোনো অগ্রগতি আছে কি না, তা জানতে এসেছি। আবার নির্বাচন কবে হবে, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না তাও জানতে এসেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দৈনিক জাগরণকে বলেন, নির্বাচন দেয়ার জন্য আমরা অনেক আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি। এখন নির্বাচন দেয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের করার কিছু নেই। কবে সুপারিশ পাঠিয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মাস দুয়েক আগে পাঠিয়েছি, আশা করি শিগগিরই নির্বাচন হবে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০১৪ সালের ৪ জুন। তাতে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হন হেলাল মোর্শেদ খান। ২০১৭ সালের জুনে ওই কমিটির মেয়াদ শেষে জেলা কমান্ডগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে দেন। কিন্তু এরপর নির্বাচন না দিয়ে কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনের জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে প্রশাসক, জেলা কমান্ডের দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা কমান্ডের দায়িত্ব পালনের জন্য উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

এমএ/একেএস

আরও পড়ুন