• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৮:২৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯, ০৮:৩৪ এএম

বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয় মিত্রবাহিনী 

বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয় মিত্রবাহিনী 

আজ ১৫ ডিসেম্বর। একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি নরপিশাচদের শেষ আশাও গভীর হতাশায় মিলিয়ে যায়। হানাদার সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক জেনারেল নিয়াজী বুঝে যায়, মার্কিন সপ্তম নৌবহর তাকে সাহায্য করতে আসবে না। ফলে ১৫ ডিসেম্বর সকালে সব আশা ছেড়ে দেয়। শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে বিধ্বস্ত নিয়াজী। কিন্তু এ প্রস্তাব ভারত সরকার প্রত্যাখ্যান করলে পাক হানাদাররা আরও ভেঙ্গে পড়ে। 

মিত্রবাহিনী ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয়। এদিন দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় লেখা হয়-‘ইয়াহিয়ার সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীরা মুক্ত বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। দেশের ভেতর বাড়ি-ঘর থেকে বিতাড়িত লোকজনও বাড়িতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। 

এদিকে জামায়াতে ইসলামী, রাজাকার, আলবদর, আল শামস, পিডিপি, নেজামী ইসলামীর নেতাকর্মীর অনেকেই মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। আবার অনেকেই আত্মগোপন করে। এ সময় সারা বাংলায় উড়ছে রক্তভেজা বিজয় কেতন। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। এর আগে, মিত্রবাহিনী বিনাশর্তে পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য যে চূড়ান্ত সময় বেঁধে দেয় তার প্রস্তাব মার্কিন দূতাবাসের কর্মীরা দিল্লীর মার্কিন দূতাবাসে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ওয়াশিংটনে। এরপর ওয়াশিংটন ইসলামাবাদের মার্কিন দূতাবাসের কাছে জানতে চায় নিয়াজীর এই প্রস্তাবে পাক
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সমর্থন আছে কি না। প্রস্তাবের মূল কথা- ‘আমরা যুদ্ধ বন্ধ করেছি। তবে বাংলাদেশে অবস্থানরত গোটা পাকিস্তানি বাহিনীকে চলে যেতে দিতে হবে, কাউকে গ্রেফতার করা চলবে না।’ জেনারেল নিয়াজী মার্কিন দূতাবাসের কাছ থেকে এই আশ্বাস পায় যে, মার্কিন সপ্তম নৌবহর তার লোকজনকে পশ্চিমে নিয়ে যাবে। ঢাকার অন্যান্য বিদেশি দূতাবাস এ সময় আত্মসমর্পণের পরামর্শ দিয়েছিল। বিদেশিরাও বুঝেছিল নিয়াজী লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না। শুধুই লোক মারা যাবে। 

১৫ তারিখ দিল্লীর মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে ভারত সরকার খবর পেল নিয়াজী শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণ করতে চায়। কিন্তু ভারত সরকার এ প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশের পাক বাহিনীকে এই আশ্বাস দিতে রাজি যে, যুদ্ধবন্দীরা জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার পাবেন। পাকি জেনারেল নিয়াজীর শর্তসাপেক্ষে আত্মসমর্পণের প্রস্তাব পেয়ে ভারতীয় বাহিনী মনে করে এটি তাদের কৌশল। নিয়াজীর প্রস্তাবকে তাদের কাছে মনে হলো এটি যুদ্ধবিরতি, আত্মসমর্পণ নয়। কিন্তু মিত্রবাহিনী বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুতেই রাজি নয়। এ জন্য ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। আর এ পর্যন্ত ভারতীয় বিমান বাহিনী কোনো আক্রমণ করবে না। এর মধ্যে আত্মসমর্পণের খবর না পেলে আবার আক্রমণ শুরু করা হবে। 

জেনারেল মানেক শ’ তার শেষ বার্তায় পিন্ডিকে বলেন, সকাল ৯টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। শোনা যায়, নিয়াজী সেদিন সারারাত ধরে ইসলামাবাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, দূতাবাসের সাহায্য নেন। কিন্তু পাক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন মিত্রবাহিনীর গোলার আওয়াজ বাড়তে থাকে। ঢাকার অসামরিক পাকিস্তানিরা ও কয়েকটি বিদেশি দূতাবাসও আত্মসমর্পণের চাপ বাড়িয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনীর ওপর। একাত্তরের এদিন মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফের কাছ থেকে শেষ নির্দেশ পান নিয়াজী। নিয়াজীকে জানানো হয়, আত্মসমর্পণের শর্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। এ নির্দেশ পেয়ে সেনানিবাসে নিজের কক্ষে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন জেনারেল নিয়াজী। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে রাত দুইটার মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তারবার্তা পাঠান। 

জেডএইচ/একেএস

আরও পড়ুন