• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯, ১০:২৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯, ১০:৩৪ এএম

৯ মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে জন্ম নেয় বাংলাদেশ

৯ মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে জন্ম নেয় বাংলাদেশ
মুক্তিযুদ্ধ ।। আঁকা- ফারিয়াজ মায়ান হক ( ৭), মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়

আজ থেকে ৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালির দেশপ্রেম, ঐক্য ও শৌর্যবীর্যের কাছে পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তি আর মিত্রবাহিনীর সামনে অস্ত্র ফেলে দিয়ে হানাদাররা অবনত মস্তকে দাঁড়ায়। 

একই বছর ২৬ মার্চ বিজয় অর্জনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে অকুতোভয় বাঙালি জাতি যে যুদ্ধ শুরু করে- এর সমাপ্তি হয় ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে এক আনন্দ-বেদনার সম্মিলনে। 

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস শুধু একাত্তরেই সীমাবদ্ধ নয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বিস্ফোরিত জাতীয় চেতনার পথ ধরে ধারাবাহিক সংগ্রামে ১৯৬৯ সালে ঘটে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের জন্য গণঅভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলে তৎকালীন পাকিস্তানে বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষার বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু সেই নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিকে রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দিতে চায়, শুরু করে গণহত্যা। সশস্ত্র প্রতিরোধের পথ ধরে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় অর্জন ছিল ইতিহাসের অনিবার্য পরিণতি। 

একাত্তরের সেই আনন্দময় দিনটি
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তা জন আর কেলি পৌঁছেন সেনানিবাসের কমান্ড বাঙ্কারে। সেখানে নিয়াজি নেই, ফরমান আলিকে পাওয়া গেল বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত অবস্থায়।

ফরমান আলি জানান, আত্মসমর্পণ সংকল্পবদ্ধ মিত্রবাহিনীর প্রস্তাব তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সেই সংবাদ জানাতে পারছেন না। প্রস্তাব দেয়া হলো জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহারের। আত্মসমর্পণের জন্য বেঁধে দেয়া সময় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে আরও ছয় ঘণ্টা বাড়িয়ে আত্মসমর্পণের বার্তা পৌঁছানো হয় জাতিসংঘের বেতার সংকেত ব্যবহার করে। ভারতে তখন সকাল ৯টা ২০ মিনিট। কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমান শেক্সপিয়র সরণি) একটি দোতলা বাড়িতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিবালয় আর প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের সকাল। আনুমানিক সকাল ১০টায় তাজউদ্দীন আহমদের ফোন বেজে উঠল। ওই ফোনে গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছাড়া ফোন করতে পারে না। কী কথা হলো জানা না গেলেও তার চোখ-মুখে আনন্দের ছাপ বোঝা গেল। ফোন রেখেই প্রধানমন্ত্রী জানালেন, ‘সবাইকে জানিয়ে দিও, আজ আমরা স্বাধীন। বিকাল ৪টায় আত্মসমর্পণ’।

এদিকে ঢাকায় খবর আসে বিকাল সাড়ে ৪টায় আত্মসমর্পণ হবে। ঢাকাবাসী কী করবে আর কী করবে না- বুঝে উঠতে পারছে না। সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করে। পৌষের সেই পড়ন্ত বিকালে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হলো ঐতিহাসিক এক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। বিকাল ৪টা ৩১ মিনিটে পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক জোন-বি এবং ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লে. জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজির নেতৃত্বে আত্মসমর্পণ করে ৯১ হাজার ৫৪৯ জন হানাদার সেনা। মেজর জেনারেল জ্যাকবের তৈরি করা আত্মসমর্পণের দলিলে বিকালে সই করেন লে. জেনারেল নিয়াজি ও লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। ৯ মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে জন্ম নেয় একটি নতুন দেশ- বাংলাদেশ।

জেডএইচ/এসএমএম