• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ০৮:৫৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২২, ২০১৯, ০৯:০৪ এএম

রাজাকারের তালিকা স্থগিতের পরও ক্ষোভ-অসন্তোষ

রাজাকারের তালিকা স্থগিতের পরও ক্ষোভ-অসন্তোষ

মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা বিতর্কের মুখে স্থগিতের পরেও থামছে না ক্ষোভ ও অসন্তোষ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম প্রশ্নবিদ্ধ ‘রাজাকারের তালিকা’য় আসায় সুযোগ নিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। নানা ধরনের  গুজব রটিয়ে পরিস্থিতি অন্যখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। তালিকায় নাম আসা মুক্তিযোদ্ধাদেরই ফাঁসির দাবিতে কোথাও কোথাও সভা-সমাবেশ-মিছিলও হয়েছে। আর এসব ইন্ধন দিচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা।

১৫ ডিসেম্বর (রোববার) মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন। এ তালিকায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নামও স্থান পায়। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে মন্ত্রী এ তালিকা স্থগিত করে আগামী ২৬ মার্চ (বৃহস্পতিবার) রাজাকারের নির্ভুল তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দেন। এ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তালিকাই তিনি প্রকাশ করছেন। এ তালিকায় একটি অক্ষর, দাড়ি বা কমা যুক্ত করেননি। 

অবশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন ভিন্ন কথা। তিনি সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে জানান, তারা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে যে তালিকা দিয়েছেন, সেটা ১৯৭২ থেকে ’৭৪ সালে দালাল আইনে মামলা হওয়া অভিযুক্তদের তালিকা। রাজাকারদের কোনও তালিকা তাদের কাছে ছিল না। দালাল আইনে মামলা হওয়া ব্যক্তিদের তালিকাই রাজাকারের তালিকা হিসেবে প্রকাশ করে দেয় মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মধ্যে এখনও চলছে ঠাণ্ডা লড়াই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকাশিত ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকার সঙ্গে যুক্ত ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া ৯৯৬ জনের একটি তালিকা। শত্রুতামূলক তাদের বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা হয়েছিল।

প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক তিমির লাল দত্ত এবং তার ভাই মিহির লাল দত্তের নাম রাজাকারের তালিকায় প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এ কর্মরত এই সাংবাদিকের মৃত্যুর পর জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা হয়। রাজাকারের তালিকায় তিমির লাল দত্ত এবং তার ভাইয়ের নাম আসার পর দেশের বাড়ি বরিশালে (সদর থানা) তাদের পরিবারের সদস্যদের নানা সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। 

খুলনার দৌলতপুরে মিরেরডাঙ্গায় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা মইনুল হক ভূঁইয়ার নাম আসার পর তার বাড়ির আশপাশে স্বাধীনতাবিরোধীরা এই মুক্তিযোদ্ধার ফাঁসির দাবিতে মিছিল করেছে বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। অথচ গেজেটভুক্ত এই মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে ভাতাও পেয়ে আসছিলেন। 

স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় তা সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচিত হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ উদ্যোগ। এ নিয়ে গোলাম আরিফ টিপু ট্রাইব্যুনালে নিজ কার্যালয়ে ১৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) গণমাধ্যমকে বলেন, আমি একজন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ সরকার আমাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব দিয়েছে। অথচ আজ আমার নাম রাজাকারের তালিকায়। শুধু আমিই নই, কীভাবে এ তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আসলো, সেটা কীভাবে হলো, এর উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির দৈনিক জাগরণকে বলেন, তালিকা স্থগিত করা হলেও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেয়ায় এর দায় তাকেই নিতে হবে। তালিকা স্থগিত করা হলেও স্থানীয় পর্যায়ে এর একটা ইমপ্যাক্ট পড়েছে। সেটা কীভাবে দূর হবে, তা মন্ত্রীকেই বলতে হবে। 

বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকা এনে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার কাছেই রেখেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি তার মন্ত্রণালয়ে সচিব আরিফুর রহমান বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। সচিবকে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টিও জানানো হয়নি। প্রকাশের দিন ১৫ ডিসেম্বর (রোববার) বিষয়টি তাকে জানানো হয়। এরপরই তিনি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে শুধু সচিবেরই যে সমন্বয়ের অভাব ছিল তা নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সমন্বয়ের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দালাল আইনে মামলা হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী রাজাকারদের তালিকা হিসেবে প্রকাশ করবেন তা তিনি জানতেন না। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কোনও আলোচনাও হয়নি। অথচ বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, সচিব এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা হলে স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো না।

এমএএম/এফসি/এসএমএম

আরও পড়ুন