• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২০, ০৪:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৩:২৫ পিএম

ষড়যন্ত্রের জালে বিপন্ন রাজনীতি-২৪

হিংস্র সমরনায়কের তাণ্ডব (দুই)

হিংস্র সমরনায়কের তাণ্ডব (দুই)

গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী এখন বিএনপির অঘোষিত উপদেষ্টা। অনেকটা গায়ে মানে না আপনি মোড়লের মতো। বিএনপি কতখানি তার পরামর্শ গ্রাহ্য করে, জানি না। তবে তিনি এ ব্যাপারে বিরতিহীন এবং বিএনপি জোটের ভাঙা-গড়ার বিষয়ে ভূমিকা রেখে চলেছেন। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে কীভাবে ক্ষমতায় আনা যায়, এ ব্যাপারেও তার তৎপরতা ছিল লক্ষ করার মতো। অথচ এই জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী একসময় জেনারেল জিয়ার স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড ও প্রহসনের রাজনীতি  দেখে বলেছিলেন, “প্রথমে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে জিয়া সত্যি সত্যি দেশের জন্য কিছু করতে চান। আমরা এটাও বিশ্বাস করেছিলাম যে বাংলাদেশকে জিয়া প্রগতিশীল, সমাজতান্ত্রিক, জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু অচিরেই আমরা বুঝতে পারলাম, এসব জিয়ার  স্লোগান। সমাজ পরিবর্তনের সদিচ্ছা তার নেই। তিনি নিজের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চেয়েছেন মাত্র।” (অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস-এর বাংলাদেশ : অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড, পৃষ্ঠা নং-১২০)

তার এই মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য এ কারণে যে, জিয়ার পুরো শাসনামলটাই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। বাঙালির ইতিহাসের লজ্জা ও কলঙ্কিত কাল। সামরিক শাসন, নিয়ন্ত্রিত ঘরোয়া রাজনীতি, উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষবৃক্ষ রোপণ, মদ, জুয়া ও পতিতাবৃত্তির লাইসেন্স দেয়ার মাধ্যমে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মতো কলঙ্কিত ইতিহাসের স্রষ্টা তিনি। আজকের বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতি, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের রাজনীতি, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির শুরুটা করেছিলেন জেনারেল জিয়া। জিয়া প্রতিষ্ঠিত বিএনপির সেই কলুষিত কুহেলিকা আজও নষ্ট করে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের একটি বিভ্রান্ত অংশকে।

বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব মুখে অবিরাম গণতন্ত্রের বুলি আওড়ালেও তারা বরাবরই গণতান্ত্রিক চেতনাকে বিনষ্ট করেছে। আর জেনারেল জিয়া তার শাসনামলে রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে করেছিলেন গৃহবন্দি। ১৯৭৬ সালের ২৮ জুলাই রাজনৈতিক দলবিধির আওতায় নিয়ন্ত্রিত করা হয় রাজনৈতিক তৎপরতা। শর্ত দেয়া হয়, ঘরে বসে রাজনীতি করতে হবে, রাজপথে বা মাঠে যাওয়া যাবে না। অদ্ভুত এই রাজনীতির নাম দেয়া হয় ‘ঘরোয়া রাজনীতি’। এসবই তার নৈতিক গুরু পাকিস্তানের সেই আইয়ুব-ইয়াহিয়ার নৈতিক দর্শন থেকে ধার করা।

ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী

প্রথমে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম যে জিয়া সত্যি সত্যি দেশের জন্য কিছু করতে চান। আমরা এটাও বিশ্বাস করেছিলাম যে বাংলাদেশকে জিয়া প্রগতিশীল, সমাজতান্ত্রিক, জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান। কিন্তু অচিরেই আমরা বুঝতে পারলাম, এসব জিয়ার  স্লোগান। সমাজ পরিবর্তনের সদিচ্ছা তার নেই

...........‘’...........

জেনারেল জিয়ার শাসনামলের প্রায় পুরোটাজুড়েই দেশে ছিল ‘কারফিউ গণতন্ত্র’। এই সময় বাংলাদেশের মানুষকে ওই সামরিক কারফিউ মাথায় নিয়েই দিনাতিপাত করতে হতো। রাত ১০/১১টার পরে তখন কেউ বের হতে পারত না। ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ থাকত। আর এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন করা হতো। তাদের ঘরছাড়া করা হতো, আর গণহারে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হতো। এভাবে পুরো বাংলাদেশকে একটি কারাগারে পরিণত করা হয়।

অন্যদিকে জেনারেল জিয়া দুর্নীতিকে লাগামমুক্ত করে দেন। দুর্নীতিকে দেয়া হয় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। তার চারপাশের লোকজনকে তিনি অবাধে দুর্নীতি করার সুযোগ দেন ‘মানি ইজ নো প্রবলেম ধ্বনি তুলে’। সূচনা করেন খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি, এর পেছনের কারণ এই যে, তিনি খুব ভালো করেই জানতেন দোষী লোকদের মনোবল খুব দুর্বল থাকে আর এদের সব সময় বশে রাখার জন্য এটাই অমোঘ অস্ত্র।

জিয়ার অবাধ দুর্নীতির অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ফলে ১৯৭৫ সালে যেখানে দেশে কোটিপতি ছিল হাতে গোনা, সেখানে জিয়ার আমলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬২। জিয়া সরকারের লাগামহীন দুর্নীতির কারণে সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

জিয়া হত্যার মাত্র মাসখানেক আগে পাকিস্তানের পাঁচজন নামকরা সাংবাদিক বাংলাদেশে বেড়াতে এসে দেশের রাজনীতি আর দুর্নীতির এক করুণ চিত্র তুলে ধরেন। মারকাস ফ্রান্ডা তার ‘জিয়াউর রহমান : বাংলাদেশ’ নামক সমীক্ষাগ্রন্থে বলেন, “একটি ক্ষুদ্র নব্য ধনিক শ্রেণির হাতে বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত অর্থের নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ায় দেশে পরস্পরবিরোধী দুই ধরনের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে একদিকে ঢাকাকেন্দ্রিক একটি শ্রেণি দিন দিন উন্নত ও ধনবান হচ্ছে, অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা খারাপ থেকে অধিকতর খারাপ হয়ে পড়ছে। ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান দিন দিন বেড়েই চলেছে।”

 জন্মগতভাবেই বিএনপি স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্রবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের উত্তরাধিকার। পরে ১৯৭৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া এক ফরমান জারি করে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন

...........‘’...........

১৯৮০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সরকারি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম যতটুকু এগিয়েছিল, জিয়ার আমল তার কাছাকাছিও যেতে পারেনি।”

পশ্চিমা ভাষ্যকারদের মত সমর্থন করে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “বাংলাদেশ কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য দিয়ে ওই প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত কমতির দিকে।”

জিয়ার আমলে বহুল আলোচিত ছিল খাল খনন কর্মসূচি। এই কর্মসূচি নিয়েও জিয়া একটি চমৎকার নাটক মঞ্চস্থ করেছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১ নভেম্বর এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। গ্রীষ্মকালীন সেচের সুবিধার্থে ৯০০ মাইল নতুন খাল খনন ও পুরনো খাল পুনঃখনন এবং ৬ লাখ টন অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি চালু করা হয়। বলা হয়েছিল সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কর্মসূচি চলবে। এই উদ্দেশ্যে জেনারেল জিয়া নিজে, তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা খাল খনন কর্মসূচিতে অংশ নেন। কিন্তু কার্যত দেখা যায়, বিনা পারিশ্রমিকে কেউ কাজ করছে না। ফলে ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ এবং অন্যান্য সূত্র থেকে এই কর্মসূচিতে অর্থের জোগান দেয়া হয়। কিন্তু এই অর্থের একটা বড় অংশ চলে যায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের পকেটে। কর্মসূচিটিই পরে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং খাল খননের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়।

জেনারেল জিয়া রাষ্ট্রীয় টাকার বিপুল অপচয় ঘটিয়ে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর বিভিন্ন স্তরে নানা কৌশলে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের যুবকদের দুর্নীতিগ্রস্ত করতে ‘যুব কমপ্লেক্স’ এর নামে দেশজুড়ে উন্মুক্ত চাঁদাবাজির প্রচলন করেন। মাত্র তিন বছরে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৬৭০টি যুব কমপ্লেক্স করা হয়। এই যুব কমপ্লেক্সের আয়ের উৎস ছিল দেশের হাট-বাজার ও মেলা থেকে আদায়কৃত টাকা। ১৯৭৯-৮০, ১৯৮০-৮১ এই দুই অর্থবছরে বাজার ও মেলা থেকে আয় হয়েছিল ১২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৭ হাজার ২০০ টাকা। এসব টাকা গেছে যুব কমপ্লেক্সের অন্তর্ভুক্ত সমবায় সমিতির পান্ডাদের পকেটে। জিয়া চোখ বন্ধ করে ছিলেন, কারণ ওরাই তো তার রাজনৈতিক সমর্থক।

১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের বিখ্যাত ‘স্পিকার্স কর্নার’ এর অনুকরণে তিনি ঢাকায় মুক্তাঙ্গন নির্মাণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মুক্তাঙ্গন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই মুক্তাঙ্গনে যে কেউ খোলাখুলি বক্তব্য রাখতে পারবেন। কিন্তু মুক্তাঙ্গনে গোয়েন্দা বিভাগের অবাধ বিচরণ দেখে কেউ সেখানে খোলাখুলি বক্তব্য রাখতে বোধ করেনি। মুক্তাঙ্গনের পুরো ব্যাপারটাই ছিল হাস্যকর

...........‘’...........

বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবমুক্ত করতে জেনারেল জিয়া সুকৌশলে ৪ আগস্ট ১৯৭৬ রাষ্ট্রপতি সায়েমকে দিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের নীতিমালা (পিপিআর) ঘোষণা করান। এর মাধ্যমে জিয়া আওয়ামী লীগের সামনে একটি শর্তের প্রাচীর তুলে দেন। “কোনও ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ভক্তি বা বিশ্বাস গড়ে তুলতে পারে এমন কোনও নাম দল গঠনের প্রস্তাবিত গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে পারবে না।” এমন শর্ত জুড়ে দেয়া ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিনষ্টের ষড়যন্ত্র। নানা শর্তের শৃঙ্খলে বন্দী রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই ৯ আগস্ট থেকে নতুন ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হয় এবং ৯ অক্টোবর ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। একদিকে ভোটার তালিকা প্রণয়ন-প্রকাশ ও ঘরোয়া রাজনীতির অনুমতি, অন্যদিকে সারাদেশে সামরিক আদালত প্রতিষ্ঠা করে তথাকথিত রাষ্ট্রবিরোধী এবং ধ্বংসাত্মক কাজের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে থাকে। ১৪ সেপ্টেম্বর ২৭টি মহকুমায় সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালত গঠন করা হয়। ৪ নভেম্বর তুমুল বিতর্কের মধ্যেই হৃদয়ে এক সাগর রক্তক্ষরণ বহন করেই বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে অনুমোদন নিতে বাধ্য হয় আওয়ামী লীগ।

জেনারেল জিয়া এ দেশের মানুষের বাক্‌ ও চিন্তার স্বাধীনতার সঙ্গে নানাভাবে প্রতারণা করেছেন। ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের বিখ্যাত ‘স্পিকার্স কর্নার’ এর অনুকরণে তিনি ঢাকায় মুক্তাঙ্গন নির্মাণ করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই মুক্তাঙ্গন উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, এই মুক্তাঙ্গনে যে কেউ খোলাখুলি বক্তব্য রাখতে পারবেন। কিন্তু মুক্তাঙ্গনে গোয়েন্দা বিভাগের অবাধ বিচরণ দেখে কেউ সেখানে খোলাখুলি বক্তব্য রাখতে বোধ করেনি। মুক্তাঙ্গনের পুরো ব্যাপারটাই ছিল হাস্যকর। জেনারেল জিয়ার আরও একটি কাজ অনেকের কাছেই হাসির খোরাক হয়েছিল। বিএনপির আদর্শ ও দর্শনের ওপর তিনি মন্ত্রী ও দলীয় এমপিদের একটি পরীক্ষা নিয়েছিলেন। এ জন্য তিনি কয়েকটি ক্লাসও নিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের ১২ এপ্রিলে এ ধরনের একটি লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ৫০ জন মন্ত্রী এবং দলীয় নেতা অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু পাস করেছিলেন মাত্র ১০ জন। অকৃতকার্যদের মধ্যে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান ও উপপ্রধানমন্ত্রী জামালুদ্দীন আহমেদ।

১৯৭৮ সালের আগস্ট মাসে জিয়া জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ভেঙে দেন এবং ২৮ আগস্ট নিজের নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে একটি দল গঠন করেন। তখনও জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান। একজন সেনাপ্রধানের নেতৃত্বেই জন্ম হয় বিএনপির। কার্যত, জন্মগতভাবেই বিএনপি স্বৈরশাসন ও গণতন্ত্রবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের উত্তরাধিকার। পরে ১৯৭৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়া এক ফরমান জারি করে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্টের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেন। সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর নির্বাচনি প্রচারের স্বল্প সুযোগ দিয়ে ১৯৭৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগসহ বেশ কয়েকটি দল আপত্তি জানায়। আপত্তির মুখে ২৭ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। জিয়া সরকারনিয়ন্ত্রিত কারচুপির এ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পায় বিএনপি। এরপর চলতে থাকে গণতন্ত্রের মুখোশে সামরিক শাসন। 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন তার ‘বাংলাদেশ : রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫-৮১’ গ্রন্থে বলেছেন, “জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক স্লোগান হিসেবে জনতাই ক্ষমতার উৎস বললেও তার মৃত্যু পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীই তার ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে।”

আবেদ খান ● সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ

আরও পড়ুন