• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২০, ০৯:৫৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ১, ২০২০, ০৯:৫৫ এএম

গৌরবের মাস মার্চ : বাঙালির জীবনে এনেছে নতুন বারতা

গৌরবের মাস মার্চ : বাঙালির জীবনে এনেছে নতুন বারতা

আজ ১ মার্চ। বাঙালি জাতির গৌরব ও অহংকারের সূচনা দিন। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই মার্চেই ডাক এসেছিল বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে এ মাসেই। এ মার্চেই বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয়ার চূড়ান্ত সংগ্রামে। জাতি জাগ্রত করে তার নতুন ঠিকানার স্বপ্ন। তৈরি করে পরাধীনতার গ্লানি থেকে নিজেকে মুক্ত করার সোপান। মার্চ তাই বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের সূচনার মাস।

এবারের মার্চ মাস বাঙালির জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বয়ে এনেছে। আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুরু হচ্ছে ‘মুজিববর্ষের’ আনুষ্ঠানিক সূচনা। এদিন থেকে আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত বছরব্যাপী মুজিববর্ষের ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য আয়োজনে মাতবে গোটা দেশ। দেশের মানুষ নতুন করে শপথ নেবেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার জন্য যে আগুন জ্বলে উঠেছিল- সে আগুন যেন ছড়িয়ে পড়ে বাংলার সর্বত্র। এরপর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সিঁড়ি বেয়ে একাত্তরের মার্চ বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে নতুন বারতা। এ বছরের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

’৭১-এর শহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মশালের আগুনে উদ্দীপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এই বাংলার স্বাধিকার, বাংলার ন্যায্য দাবিকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু বাংলার ৭ কোটি মানুষ আর বঞ্চিত হতে রাজি নয়। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রয়োজন হলে আরও রক্ত দেব। বাংলার ঘরে ঘরে আজ দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। সামরিক শাসকচক্রের সঙ্গে মিলে ভুট্টো যে ভূমিকায় লিপ্ত তাতে এটা স্পষ্ট যে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কোনোভাবেই বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না।

৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো বাঙালির সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি শাসকদের হুশিয়ারি দিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। মরতে যখন শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।’

এরপরও নানাভাবে টালবাহানা করতে থাকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানিরা বাঙালির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার লক্ষ্যে অপারেশন সার্চলাইট নামে বাঙালি নিধনে নামে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার লোককে হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষককে হত্যা করে।

রাত ১টার পর বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানি সৈন্যরা গ্রেফতার করে তার বাড়ি থেকে। অবস্থা টের পেয়ে এর আগেই সুকৌশলে তিনি ঘোষণা করেন, ‘বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা।’ পরের দিন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার সেই ঘোষণা পুনরায় পাঠ করেন আরও একাধিকজন।

এর পরের ঘটনাপ্রবাহ প্রতিরোধের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা হয়। আবালবৃদ্ধবনিতা যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে জাতি লাভ করে স্বাধীনতা।

অগ্নিঝরা মার্চকে বরণ করে নিতে দেশজুড়ে আজ থাকছে বিভিন্ন কর্মসূচি। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এসব কর্মসূচিতে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জনকারী সূর্যসন্তানদের। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে মার্চের প্রথম প্রহরে ধানমণ্ডি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও আলোকশিখা প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে কয়েকটি সংগঠনের মাসব্যাপী কর্মসূচি। 

এফসি