• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১১, ২০১৯, ০৪:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১১, ২০১৯, ১০:৫৬ পিএম

রমজানে  যেসব খাবার খাবেন

রমজানে  যেসব খাবার খাবেন

 রমজান মাস ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র মাস। এ মাসে সংযম সাধনার পাশাপাশি সুস্থ ব্যক্তিরা অনেকেই রোজা রাখেন। পুষ্টিবিদরা এসময় ক্যালরি সমৃদ্ধ এবং সহজ পাচ্য খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে বেশি খাবার না খেয়ে বার বার খাওয়া উচিত। ইফতার এবং সেহরির খাবারে তাই চাই বাড়তি সতর্কতা।

প্রকৃতপক্ষে মাহে রমজানের এ রোজা নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভাবনার শেষ নেই। রোজায় সেহরি, ইফতারি ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মানুষের মনে এ সময়ে থাকে অনেক জিজ্ঞাসা।এ ব্যাপারে খ্যাতনামা একাধিক পুষ্টিবিদ রমজানে সেহরি ও ইফতারিতে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। রোজা শুরুর এ সময়ে জেনে নেই এ পরামর্শ- 

সেহরিতে যা খাবেন:
প্রচণ্ড গরমে রোজা শুরু হওয়ার ফলে দেখা দিতে পারে পেটের অনেক সমস্যা, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, অবসাদ, আলসার, অ্যাসিডিটি ও বদহজমের মতো নানা সমস্যা। তাই  সেহরির সময় শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে খাবার খাবেন। সেহরির খাবার তালিকায় রাখুন ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস। শেষে খেতে পারেন মিষ্টি জাতীয় খাবার। খাবার পরে কিছুক্ষণ হাঁটবেন। তারপর পানি পান করবেন। সেহরির সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ গ্লুকোজ মিশিয়ে পান করতে পারেন।

তবে সেহরিতে এমন কিছু খাওয়া ঠিক না যা খেলে বদহজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকে সেহেরিতে দুধ কলা খেতে পছন্দ করেন। এতে বদহজম বা ঢেকুর ওঠার সম্ভাবনা থাকে। তাই সেহেরিতে এ জাতীয় খাবার পরিহার করাই ভালো। বেশি পরিমাণে খাবার না খেয়ে রুচি অনুসারে স্বাভাবিক খাবার খাবেন। সারাদিন খেতে পারবেন না বলে ইচ্ছামত উদরপূর্তি করে খাবেন না। পেটের এক-চতুর্থাংশ খালি রাখবেন। একজন মানুষের সারাদিন যে পরিমাণ পানি দরকার হয় সে পরিমাণ রাতে পান করা উচিত।

খেয়াল রাখবেন যাতে সেহরিতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন লাল আটা, বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, ডাল ইত্যাদি খাবার টেবিলে থাকে। এগুলো হজম হয় আস্তে আস্তে, তাই অনেক সময় পর ক্ষুধা লাগে। রক্তেও চিনির পরিমাণ তাড়াতাড়ি বাড়ে না।
অবশ্যই সেহরিতে খেজুর বা খোরমা খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন, ক্লোরিন ফাইবার, যা সারাদিন রোজা রাখার পর খুবই দরকারি।

সেহরিতে তাজা ফলের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে সবজি খাবেন। না হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এগুলো আপনার নিঃশ্বাসকেও সতেজ রাখতে সাহায্য করবে। রোজার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ না করলে এর অভাবে শরীরে কিটোন উৎপন্ন হবে। তাই এ সময় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খান যেমন কলা, ওটস, রুটি ইত্যাদি।
সেহরিতে দুধের সঙ্গে ইসবগুল খেতে পারেন। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। সেহেরিতে সহজপাচ্য বা ঠাণ্ডা খাবার যেমন দই, চিড়া খাবেন। তাহলে সারাদিন রোজা রাখা নাজুক পাকস্থলী শান্তিতে খাবার হজম করতে পারবে।

ইফতারিতে যা খাবেন:
ইফতারের তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার পর রাতের খাবার খাবেন। ভাত, সবজি, ডাল, মাছ বা মাংস রাখবেন খাবারের তালিকায়। সবজি ঝোল করে খাবেন। সহজে হজম হয় এবং আঁশ যুক্ত খাবার খাবেন।

অধিকাংশ লোককে দেখা যায়, ইফতারের সময় নানাধরণের খাবার-দাবার খেতে। ইফতার পর্বে উত্তেজক খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে। তবে শরবতে কৃত্রিম রঙ মেশাবেন না। এ রঙে থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, সেসব অবশ্যই পরিহার করবেন।

ইফতারে ফলের রস শরীরের জন্য বেশী কার্যকারী। এ সময় যেকোনো একটি ফল খাবেন, ফলে থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খণিজ, যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই, চিঁড়া ও কলা খেলে ভালো। তবে প্রচলিত বেগুনি ও পেঁয়াজু সর্বদা পরিহার করবেন। তেলেভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে। তা ছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয়, যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। তাই ইফতারে খেঁজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো।

সারা দিন রোজা থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেজুর সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। সেহরি এবং ইফতারির সময় প্রচুর পানি পান করবেন। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে।