• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০১৯, ০৫:০৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৪, ২০১৯, ০৬:৩০ পিএম

 ইফতারি নিয়ে  উদ্বিগ্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা

 ইফতারি নিয়ে  উদ্বিগ্ন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছর গুলোতে রমজানে ইফতারের খাবারের ধরণে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারির আয়োজনে থাকছে নানা পদের খাবার, যা মুখরোচক হলেও তার পরিমাণ ও স্বাস্থ্যগুণ নিয়ে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন।পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেনসম্প্রতি ইফতার ও সেহরিতে যেসব খাবার খাওয়া হচ্ছে তার পরিমাণ ও গুণগত মান স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর ।

দোকানগুলোতে ইফতার ও সেহরি উপলক্ষে বিক্রি হচ্ছে হরেক রকমের খাবার। ঢাকার সদরঘাট থেকে বসির আহমেদ রোজকার-মত ইফতার কিনতে এসেছেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা মোট ৮জন- তাই ইফতারের আয়োজন একটু বেশি। মি. আহমেদ বলছেন প্রতিবছরের মত তিনি ইফতারে ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো কেনার চেষ্টা করেন। তিনি বলছিলেন চিকেন রোস্ট গরুর মাংসের কাবাব তিনি কিনেছেন আর এখন ফ্রাইডচিকেন কেনার চেষ্টা করছেন।  এই সব খাবার কিনছেন তিনি ইফতারে খাওয়ার জন্য। চকবাজারের ইফতার ঢাকার ইফতারের সবচেয়ে বড়বাজারটা বসে পুরান ঢাকার চকবাজারে। চকবাজারের ইফতারের আয়োজন দেখতে আমি গিয়েছিলাম সেখানে।রাস্তার দুপাশে সারি সারি খাবারের দোকান।

 

চকবাজারে দুপুরের পরেই ভিড় বাড়তে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে মানুষজন আসেন ইফতার কিনতে। সেখানে ফলের দোকান দু-একটিথাকলেও সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মূলত মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের খাবারের দোকান। মুরগির রোস্ট, সুতি কাবাব, খাশির রেজালা,কোয়েল পাখির রোস্ট, ফুচকা, দই বড়া, হালিম, মাঠা, পরোটা আরও নানা পদের খাবার। আর শাহী জিলাপিতো আছেই। প্রচলিত একটিধারণা হচ্ছে চকবাজারে যেসব ইফতারের আয়োজন করা হয় সেগুলো মোঘল আমলে রাজা বাদশারা খেতেন। তাই দোকানিদের মুখ থেকেও শোনা যায় এমন কথা - “বড় বাপের পোলা খায়, ঠোঙ্গা ভরে নিয়ে যায়” - এধরনের কথা দিয়েই তারা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন।

এই সব ইফতার আয়োজন যারা কেনেন তারা সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের। চক বাজারের পাশেই থাকেন রিফাত হোসেন । প্রতিদিনের ইফতারতিনি এখান থেকেই কেনেন। নানাধরনের তেলে ভাজা আর মুখরোচক ইফতারের আয়োজন। তিনি বলছিলেন বছরে একটি বার এই সুযোগআসে, তাই তার পরিবারের সবাই আশায় থাকেন চকবাজারের ঐহিত্যবাহী খাবারগুলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু কতটা উপকারী এসব খাবার?

সাম্প্রতিক বছর গুলোতে ইফতার আয়োজনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, বড় বড় সড়কের পাশের দোকান থেকে অভিজাত হোটেলগুলোতে থাকছে নানা পদের খাবার। সেখানে বিভিন্ন রকমের ফলের পাশাপাশি পাওয়া যাচ্ছে তেলে ভাজা বিভিন্ন ভারী খাবার। অতিরিক্ত ডালের তৈরি খাবার, মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে হার্ট ও কিডনি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে।    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহিন বলেন ,সারাদিন রোজার রাখার পর এই ধরণের তেলেভাজা ভারী খাবার আর ভুরিভোজন আসলে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা একেবারেই না খেয়ে থাকারফলে শরীরে সবচেয়ে ঘাটতি তৈরি হয় পানির।সেক্ষেত্রে পানি বা সরবত জাতীয় খাবার ইফতার ও ইফতার পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশিখাওয়া উচিত বলে তিনি জানান।

ইফতার আয়োজনে নানা রকম ডালের তৈরি তেলে ভাজা খাবার সম্পর্কে নাজমা শাহিন বলছিলেন তেলেভাজা এইসব খাবার সারাদিন রোজা রাখার পর খেলে তা স্বাস্থ্যর ঝুঁকি বাড়ায়। তিনি বলেন হার্ট ও কিডনির নানা রোগের কারণ হতে পারেএসমস্ত খাবার।তিনি বলেন খাবার গুলো যে তেলে ভাজা হয় সেগুলো রি-সাইকেল করা। অর্থাৎ একই তেলে বার বার ভাজার ফলে সেগুলোশরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

''অতিরিক্ত ডালের তৈরি খাবার, মশলাদার খাবার খাওয়ার ফলে হার্ট ও কিডনি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে।''স্বাস্থ্যের ঝুঁকি তারপরেও সবার পছন্দ পুরানো ঢাকার ইফতারি।  কথা হয় আইভি মোনালিসার সঙ্গে । তিনি থাকেন গ্রিন রোডে । দোকানের তেলে ভাজা খাবারের ওপর ভরসা না থাকায় বেশ বড় পরিবারের ইফতার তিনি নিজেই বাসায় তৈরি করেন।তাই দুপুর থেকেই শুরু হয়ে যায় তার আয়োজন। তিনি বলছিলেন তার পরিবারে সব বয়সের মানুষ রয়েছেন। এসব খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তাও  পরিবারের সবাই সারাদিন রোজার পর কিছু মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দকরেন।  তাই সব জেওে তার এ ধরনের খাবার তৈরি করতে হয়।

তিনি আরও বলেন , ''চকবাজারের যেসব দোকানে মাংসের বিভিন্ন রকমের খাবার পাওয়া যায় তারা বলছেন আগের দিন রাত থেকে চলে তাদের রান্নার আয়োজন, দুপুর ১২টা মধ্যে রান্না শেষ করে দোকান তা সাজিয়ে বসে যান। কিন্তু সময়ের হিসাব করলে দেখা যায় এসব খাবার স্বাস্থ্যকর থাকে না।বেগুনি, চপ, ছোলা, জিলাপির মত খাবারগুলো তাৎক্ষণিক ভাবে ভেজে দেওয়া হয় ক্রেতাদের।আর ক্রেতা যারা আসেন এইসব খাবার কিনতে
তারা এর স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপারে কিছুটা আশঙ্কা প্রকাশ করলেও তা যে তারা খুব বেশি আমলে নেন - তা মনে হয় না।

সূত্র: বিবিসি / ডিজি