• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৯, ০৫:৩৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৯, ২০১৯, ০৬:২০ পিএম

পিসিওএস যেভাবে মোকাবেলা করবেন

পিসিওএস যেভাবে মোকাবেলা করবেন

পিসিওএস বা পলি সিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আজ কাল উন্নত বিশ্বের মত আমাদের দেশেও ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে।রোগটি,কেবল মেয়েদের হয়ে থাকে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে,পিসিওএস এর লক্ষণ এবং উপসর্গ গুলো মেয়েদের প্রথম পিরিয়ড হবার পর পরই দেখা দিতে পারে।পিসিওএস মূলত এন্ডোক্রাইন সিস্টেম ডিসঅর্ডার।
এই রোগটি যদি সঠিকভাবেচিকিৎসা বা নিয়ন্ত্রণে না রাখা যায় তবে বন্ধাত্য,প্রি-ডায়াবেটিস,অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরল,জরায়ুর ক্যান্সার,স্ট্রোক,ঘুমের সমস্যা,ওবেসিটি সহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।তাই সময় মত এই রোগটির চিকিৎসা করানো উচিত।আর পিসিওএস রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিসিন এর পাশাপাশি ডায়েট এবং ব্যায়াম ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

পিসিওস এর লক্ষণ


 
অনিয়মিত পিরিয়ড বা মিসিং পিরিয়ড
অতিরিক্ত ওজন
ইনসুলিন রেজিস্টান্স
ফেসিয়াল হেয়ার
অতিরিক্ত ব্রন
চুল পাতলা হয়ে যাওয়া মাথার তালু দেখা যাওয়া
উচ্চ মাত্রায় মেল হরমোন বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া 
ক্লান্তি
মুড সুইং এবং ঘুমের সমস্যা
সুতরাং,উপরের সমস্যা গুলো দেখা দিলে সময় থাকতে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
পিসিওস কারণ এবং রিস্ক ফ্যাক্টর সমূহ
 
হেরিডিটি- যাদের মা বা বোনের পিসিওএস এর সমস্যা আছে তাদের পিসিওএস হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
অতিরিক্ত ওজন- যাদের দেহের ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি তাদের পিসিওএস হবার সম্ভাবনা বেশি।
বয়স ১৫-৩০ বছর।
অলস জীবন যাপন
অতিরিক্ত ইনসুলিন 
প্রি ম্যাচিউর পিউবার্টি
অতিরিক্ত স্মোকিং এবং মদ্যপান 
সুতরাং,যাদের পিসিওএস রয়েছে তাদের বোন এবং কন্যাদের প্রতি খেয়াল রাখুন।

যেভাবে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়


পিসিওএস মোকাবেলা করতে হলে ডায়েট এবং এক্সারসাইজ এই দুটি বিষয়কে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।কেননা,নিজের আদর্শ ওজন বজায় রাখাটা পিসিওএসে অনেক জরুরি।আর এই জন্য আমাদের লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনতে হবে।পাশাপাশি সঠিক ভাবে মেডিসিন গ্রহন করতে হবে। 
যে ধরণের খাবার গ্রহন করবেন
যারা পিসিওএসে আক্রান্ত তাদের উচিত সঠিক খাদ্য নির্বাচনে আন্তরিক হওয়া।কেননা,সঠিক খাবার খাওয়া এবং কিছু খাদ্য উপাদান এড়িয়ে চলতে পারলে পিসিওএস এর লক্ষণ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য হরমোন এবং পিরিয়ড সাইকেল উভয়ই স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।আর ডায়েট এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেয়া উচিত। 
হোল ফুড বা অপ্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহন করুন 


যারা পিসিওএসে আক্রান্ত তারা হোল ফুড গ্রহন করুন।কেননা,হোল ফুড কৃত্রিম চিনি,প্রিজারভেটিভস এবং হরমোন মুক্ত।এই ধরণের খাবার গুলো প্রিজারভেটিভস এবং হরমোন মুক্ত হওয়াতে আমাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেম সঠিকভাবে ব্লাড সুগার রেগুলেট করতে পারে।
সুতরাং,পিসিওএসে ভালো থাকতে হলে গোটা শস্য,শাকসবজি,ডাল এবং ফলমূল রাখুন আপনার খাদ্য তালিকায়।
যেহেতু,এই ধরণের খাবার গুলোকে খুব বেশী প্রসেস করা হয়না তাই আমাদের প্রতিদিনের দরকারী খাদ্য আঁশের চাহিদার অনেক খানি পূরণ হবে এই খাবার গুলো থেকে।

শর্করা এবং আমিষ গ্রহনে ভারসাম্য বজায় রাখুন


 
শর্করা এবং আমিষ উভয় পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য ভাইটাল।তবে,শর্করা এবং আমিষ গ্রহনের সময় অবশ্যয় অতিরিক্ত সরল শর্করা এবং অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন বিশেষ করে প্রসেসড মিট যেমনঃসসেস,বেকন বা ফার্স্ট ফুডে ব্যবহৃত মাংস গ্রহন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
ইনসুলিন লেভেল ঠিক রাখার জন্য জটিল শর্করা অর্থাৎগোটা শস্য,শাকসবজি,ডাল এবং ফলমূল খাদ্য তালিকায় বেশী পরিমানে রাখতে হবে।অর্থাৎ,লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার খেতে হবে।
“আমেরিকা জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে” প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে সরল শর্করা অর্থাৎ কোমল পানীয়,জুস,সাদা ভাত,সাদা রূটি গ্রহনের পরিমান কমিয়ে আনলে পিসিওএসের সমস্যা অনেক খানি কমানো সম্ভব।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরিমান বাড়াতে হবে


 
পিসিওস আক্রান্তদের অনেকেই আছেন যারা পিরিয়ড চলা কালীন সময়ে হেবি ব্লিডিং এর সমস্যাতে ভুগে থাকেন।তাদেরকে অবশ্যয় আয়রন যুক্ত খাবার যেমনঃপালংশাক,ডিম,ব্রকলি এই ধরণের খাবার গুলো প্রতিদিন খেতে হবে।পিরিয়ডে,হেবি ব্লিডিং হলে অবশ্যয় ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
 

এন্টি ইনফ্লামেটরি ফুড গ্রহন করুন


 
পিসিওএস আক্রান্তদের অনেকেই লো গ্রেড ইনফ্লামেশনে ভুগে থাকেন ফল স্বরূপ ফ্যাটিগ বা ক্লান্তি বোধ করেন।আর এই ইনফ্লামেশন জনিত ক্লান্তি দূর করতে এন্টি ইনফ্লামেটরি ফুড যেমন:এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল,ফ্যাটি ফিস,সবুজ শাক,হলুদ এবং বেরী খুব ভালো কাজ করে।


ভিটামিন-ডি,ফোলিক এসিড,ইনোসিটল এবং এল-কারনিটাইন সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করুন


 
যাদের পিসিওএর সমস্যা রয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগে থাকেন।আর ভিটামিন ডি এর অভাব হলে পিসিওএসের সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
সেসাথে,ফোলিক এসিড,ইনোসিটল এবং এল-কারনিটাইন এর অভাবে এই সমস্যাটি আরো বেড়ে যেতে পারে।তাই,এগুলোর সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করা উচিত।
খাদ্য উৎস থেকেও এই উপাদান গুলো পাওয়া যায় তবে নানা কারণে পর্যাপ্ত পরিমানে দেহে শোষিত হতে পারেনা,ফলে দেহের কাজে লাগেনা।আর এই উপাদান গুলো পিসিওএর সমস্যা কমাতে কার্যকর বলে নানা গবেষণাতে প্রমানিত।তবে,যে সাপ্লিমেন্ট আপনি গ্রহন করুণ না কেন তা অবশ্যয় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হবে।
ডেইরি প্রোডাক্টস,গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার,সয়া ফুড এবং কফি গ্রহনে সতর্ক হোন


 
এই ধরণের খাবার গুলো দেহে ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি করে তাই যাদের পিসিওএস রয়েছে তাদের উচিত এই ধরণের খাবার গুলো এড়িয়ে চলা।ডেইরি প্রোডাক্টে থাকা ল্যাক্টোজ,কেজিন এবং হোয়ে প্রোটিনে অনেকের সমস্যা হতে পারে এবং পিসিওএসের জটিলতা আরো বেড়ে যেতে পারে।তবে সীমিত পরিমানে ঘি এবং বাটার খাওয়া যেতে পারে কারণ এতে লাক্টোজ বা মিল্ক প্রোটিন থাকেনা।
পাশাপাশি,গ্লুটেন যুক্ত খাবার যেমনঃকেক,রুটি,পাস্তা,বিস্কিটএবং সব ধরণের সয়া ফুড পিসিওএসের সমস্যাকে আরও,জটিল করে তুলতে পারে।সুতরাং,সুস্থ থাকতে এই ধরণের খাবার গুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
এছাড়া,কফিতে থাকা ক্যাফেইন স্ট্রেস হরমোনকে বাড়িয়ে দেয় যার ফলে দেহে ইনসুলিন লেভেল বেড়ে যায় এবং ব্লাড সুগার রেগুলেট করা কঠিন হয়ে পড়ে।তাই,যাদের কফি পানের অভ্যাস আছে তারা এই অভ্যাসটি পরিহার করে হার্বাল টি পান করতে পারেন।
নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
 

যাদের ওজন বেশি তাদের মধ্যে পিসিওএস হবার প্রবণতা অনেক বেশি আবার কথাটি যদি এভাবেও বলি যাদের পিসিওএস আছে তাদের ওজন অনেক দ্রুত বেড়ে যায়,তবে দুই ভাবেই কথাটি সত্য।  তাই,যাদের পিসিওএস সনাক্ত হয়েছে তাদের উচিত নিজের আদর্শ ওজন বজায় রাখা।
আর এজন্য,প্রতি সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যায়াম করা উচিত।আর সাপ্তাহিক ব্যায়াম যেন অন্তত ১৫০ মিনিট হয়।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড