• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৭:১৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০১৯, ০৭:২৯ পিএম

সুস্থভাবে হজ পালনে যেমন খেতে হবে

সুস্থভাবে হজ পালনে যেমন খেতে হবে

হজ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদাত। সামর্থ্যবান,প্রতিটি মুসলমানদের জন্য হজকে কে ফরয করা হয়েছে।আর মাত্র কিছুদিন পর পালন হবে পবিত্র হজ। লাখো কণ্ঠে ধ্বনিত হবে লাব্বায়েক আল্লা হুম্মা লাব্বায়েক।

সুতরাং,আজকের পর্বটি  তাদের জন্যে যারা হজে যাচ্ছেন। তারা যেন সুস্থ এবং সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারেন সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ দেয়া হলো : 

খাদ্য সংক্রান্ত পরামর্শ


 
হজের প্রতিটি ধাপ সঠিক ভাবে সম্পন্ন করার জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা আবশ্যক। সেজন্য,হজ পালন কালে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাসকে গুরুত্ব দিতে হবে। যারা,হজে যাচ্ছেন তারা যথাসম্ভব ভারী এবং তৈলাক্ত খাবার পরিহার করবেন। চেষ্টা করবেন, ফল,শাকসবজি,পানি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় পানের।


নতুন খাবার খাবার গ্রহণে সাবধান হোন


 যেহেতু,প্রতিটি দেশের খাদ্যাভাস ভিন্ন এবং অন্য দেশের মানুষের জন্য তা একদম নতুন। সেহেতু, হজ পালনের সময় নতুন কোন খাবার খাওয়ার আগে,ভালভাবে খাবারটি সম্বন্ধে জেনে নিন। অধিকাংশ, সময় নতুন খাবার স্টমাক রিজেক্ট করে দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফলে,ডায়রিয়া,বদ হজম বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যাতে ভুগতে পারেন। যেহেতু,হজ পালন বেড়ানো বা নতুন খাবারের স্বাদ নেয়ার মত ব্যাপার নয়, তাই একটু বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। আর,যদি খেতেই হয় তবে পরিমাণে অল্প খাবেন।


সঠিক পরিমাণে পানি এবং পটাশিয়াম গ্রহণ করুন 


 
প্রচণ্ড উত্তাপে ডিহাইড্রেশন হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।ফলে,প্রচণ্ড দুর্বল এবং মাংসপেশিতে টানলাগার সমস্যা হতে পারে। যা, খুবই কষ্টকর ব্যাপার।তাই,ডিহাইড্রেশন এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
প্রতিদিন সকালে ১ গ্লাস পানি এবং ১-২ টি খেজুর দিয়ে আপনার দিনের শুরু করুণ। খেজুরে,থাকা পটাশিয়াম ডিহাইড্রেশন জনিত সমস্যা সমূহ দূর করে পাশাপাশি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। পানি শুন্যতা দূর করতে চিনি ছাড়া ফলের জুস,লাচ্ছি,লাবাং এবং ফল খেতে পারেন।
তবে,যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তার মিষ্টি পানীয় জাতীয় খাবার এবং যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা লবণাক্ত পানীয় পরিহার করবেন।পাশাপাশি,চা বা কফি যত কম পান করবেন  স্বাস্থ্যের জন্য তত ভালো হবে।  পানি খাওয়ার সময় শুধু প্লেন ওয়াটার না খেয়ে পানিতে একটু ফলের রস বা ফলের টুকরা মিশিয়ে নিতে পারেন।


পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন

 
হজ পালনে কিছুটা বাড়তি শক্তি প্রয়োজন। আর এই বাড়তি শক্তির জন্য সঠিক পরিমাণে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফ্যাট জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। সাধারনত,হজ ক্যাম্পে বাংলাদেশি খাবার সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন,প্রতি বেলায় অন্তত একটা করে প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন: ডিম,মাংস,ডাল,দুধ,সীমের বীচি,দই রাখুন।এছাড়া,কম তেলে রান্না করা খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের মিক্স বাদাম খেতে হবে অন্তত ৩০-৪০ গ্রাম।


অধিক ভোজন নয়


 
যেহেতু,হজের সময় বেশ হাঁটতে হয় তাই একবারে অনেক বেশি খাবার না খেয়ে অল্প করে বারে বারে খেতে পারেন।তাহলে,কষ্ট কম হবে এবং এনার্জির ঘাটতি ও হবেনা।
সারাদিনের,খাবারকে ৫-৬ বারে ভাগ করে খাবেন। তিনটি বড় মিল এবং তিনটি ছোট মিল এভাবে ভাগ করে নিলে যাদের ডায়াবেটিস বা অন্যকোন রোগ আছে তারা উপকার পাবেন। ছোট ছোট মিল গুলোতে ফল বা ফলের জুস,বাদাম অথবা স্যূপ খেতে পারেন। আর বড় মিল গুলোতে পরিমাণ মত ব্যালান্সড খাবার ভাত অথবা রুটি,সবজি,সালাদ মাংস অথবা ডিম বা অন্য কোন প্রোটিন আইটেম খেতে হবে।
ভাল খাবার মানে কিন্তু অনেক বেশি খাবার নয়। কোয়ালিটি সম্পন্ন খাবার সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।


সরল এবং জটিল শর্করা সঠিক অনুপাতে গ্রহণ


 
আমাদের খাদ্যাভাস এমন যে আমরা সরল শর্করা অনেক বেশি গ্রহণ করি।বিশেষ করে ভাত,রুটি। সেই তুলনায় শাকসবজি বা ফলমূল তুলনা মূলক কম খায়।ফলে,নানারকম শারীরিক জটিলতাতে ভুগে থাকি। তাই, প্লেটে শাকসবজি এবং সালাদ নিন বেশি পরিমানে। ভাত বা রুটি নেবেন তার চেয়ে কম।তাহলে,ডায়াবেটিসে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং অতিরিক্ত ওজন বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মত সমস্যা হবে না। এছাড়া,অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভাল। আশাকরি, উপরের টিপস গুলো মেনে চললে সুস্থ এবং সুন্দরভাবে হজ পালন করতে পারবেন।

এছাড়া,সুস্থভাবে হজ পালনের পরামর্শ সমূহকে আমি আরও দুইটি সেগমেন্টের মাধ্যমে আলোচনা করব।থাকবে পরবর্তী পর্ব গুলোতে।রোগ সংক্রান্ত পরামর্শ এবং ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিছন্নতা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য অপেক্ষায় থাকুন, থাকুন  দৈনিক জাগরণের সঙ্গে  ।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড