• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০৫:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯, ০৫:০৩ পিএম

ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে যা করণীয়

ইউরিন ইনফেকশন বা মূত্রনালীর সংক্রমণ হলে যা করণীয়

মূত্রনালির সংক্রমনের বিষয়টি সম্পর্কে আমরা কম বেশি সবাই জানি। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কেউ যে কোন বয়সে,মূত্রনালির সংক্রমনে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে ইউরিন ইনফেকশন,পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়ে থাকে। মহিলা,বিশেষ করে,গর্ভবতী মায়েরা মূত্রনালির সংক্রমনে বেশি আক্রান্ত হন। মূত্রনালির সংক্রমন ভীষণ কষ্টকর একটি সমস্যা।বিশেষ করে,গর্ভবতী মা এবং শিশুদের জন্য এটি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই,ইউরিন ইনফেকশন হলে দেরী না করে যত দ্রত সম্ভভ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

মূত্রনালির সংক্রমনের কারণ


ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ,ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিছন্নতা বজায় না রাখা,পর্যাপ্ত পানি পান না করা, ডায়াবেটিস,মুত্রাশয় সম্পূর্ন খালি হতে সমস্যা হওয়া সহ অন্যান্য অনেক কারণে একজন মানুষ মূত্রনালির সংক্রমনে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে,বেশির ভাগ মানুষই ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা মূত্রনালির সংক্রমনে আক্রান্ত হন।  

মূত্রনালির সংক্রমনের লক্ষণ


 
মূত্রনালির সংক্রমন হলে,ইউরিনেশনের সময় জ্বালা-পোড়া করা,ইউরিনে তীব্র গন্ধ,ইউরিনের রং ডার্ক হওয়া,পেলভিক পেইন,ঘন ঘনইউরিনের চাপ হওয়া বা ইউরিনে ব্লাড যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।

মূত্রনালির সংক্রমনে আক্রান্ত হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন পাশাপাশি নীচের টিপস গুলো মেনে চলুন:


 
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করুন। কম পানি পান বা ডিহাইড্রেশনের সাথে মূত্রনালির সংক্রমনের সম্পর্ক রয়েছে। নিয়মিত ইউরিনেশনের মাধ্যমে ইউরেনারি ট্র্যাক্ট থেকে ব্যাক্টেরিয়া অপসারণ হয়। যারা,কম পানি পান করে তাদের মূত্রনালির সংক্রমন হবার সম্ভাবনা বেশি।

- এসময় যেকোন স্বাস্থ্যসম্মত পানীয় যেমন: ডাবের পানি,গ্লুকোজ বা চিনি ছাড়া ফলের রস খুবই উপকারী।এছাড়া,স্যূপ খেতে পারেন।

- মূত্রনালির সংক্রমন হলে,ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান।ভিটামিন-সি ইউরিন কে বেশি এসিডিক করার মাধ্যমে মূত্রনালির সংক্রমনের জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াকে প্রতিহত করে।
-  মূত্রনালির সংক্রমন দূর করতে আদা-চা বেশ কার্যকর। তবে এই চা তে কোন চায়ের পাতা থাকবে না।থাকবে শুধু আদা এবং পানি।একটি পাত্রে ২ কাপ পানি নিন। পানি ফুটলে ৩ টেবিল চামচ আদা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেঁকে নিন এবং পান করুন।

-  এছাড়া,ক্রানবেরি জুস এবং লেবু পানিমূত্রনালির সংক্রমনের সময় খুব উপকারী পানীয়।

-  পার্সলি পাতা,মূত্রনালি সংক্রমনের ফলে যে প্রদাহ হয় তা কমাতে বেশ কর্যকর।এটি,একটিশক্তিশালীডাইইউরেটিক। একটি পাত্রে ৪ কাপ পানি নিন।পানি ফুটলে ১/২ কাপ  পার্সলি পাতা যোগ করুন অল্প তাপে ৫ মিনিট রেখে দিন।এরপর ছেঁকে নিন। গরম অথবা ঠাণ্ডা করে দিনে ২ বার খান।

- বিবাহিত হলে নিজের সঙ্গীর পরিষ্কার পরিছন্নতার ব্যাপারে নজর দিন। ইন্টারকোর্সের পর যত দ্রুত সম্ভভ ক্লিন হোন।

- নিজের ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিছন্নতা খুব ভালভাবে বজায় রাখুন। প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন।

- দীর্ঘক্ষণ ইউরিন ধরে না রাখা এবং প্রতিবার ইউরিনেশনের পর ক্লিন হয়ে,টিস্যু পেপারের সাহায্য মুছে নিন যাতে জেনিটাল এরিয়া ভেজা না থাকে।

- টয়লেট ব্যবহার করার পর,ক্লিন হবার জন্য সামনে থেকে পিছনে টিস্যুর সাহায্যে ওয়াইপ করুন। পিছন থেকে সামনে ওয়াইপ করলে ব্যাকটেরিয়া ইউরেনারি ট্র্যাক্টে ছড়িয়ে যেতে পারে। যার ফলে মূত্রনালির সংক্রমনের ঝুঁকি অনেক খানি বেড়ে যায়।

- পিরিয়ডের সময় ৫ ঘন্টা পর পর প্যাড বদলে নিন।জেনিটাল বা ভি এরিয়াতে যেকোন ধরণের সুগন্ধি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

- মূত্রনালির সংক্রমন হলে চা-কফি বা অস্বাস্থ্যকর পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন।

- যখন ইউরিনে খুব জ্বালা-পোড়া করবে একটু বেশি করে চিনি,সম পরিমাণে পানির সাথে গুলে খাবেন।জ্বালা-পোড়া খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে।তবে,যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এটি করবেন না।

- সব সময় আরামদায়ক সুতি কাপড় ব্যবহার করুন।

শিশুদের মূত্রনালির সংক্রমন ক্ষেত্রে যা করবেন

শিশুদের ক্ষেত্রে,মূত্রনালির সংক্রমন হলে আপনাকে বেশ সতর্ক থাকতে হতে হবে। শিশুরা,যেহেতু নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারেনা তাই বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন।

-মূত্রনালির সংক্রমণের ফলে শিশুদের জ্বর আসার সম্ভাবনা থাকে।পাশাপাশি,ব্যথা এবং জ্বালা-পোড়া তো রয়েছেই।তাই প্রথমে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

-শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিকুইড দিন।কিছুক্ষণ পর পর ডাবের পানি,ফলের রস কিংবা গ্লুকোজের পানি দিতে থাকুন।

-শিশুকে খুব ভালভাবে গোসল করান।এবং গোসলের সময় পানি দিয়ে খুব ভালভাবে ভি-এরিয়া ক্লিন করে দিন।মনে রাখবেন ভি এরিয়া পরিষ্কার করবেন পানি দিয়ে সাবান বা অন্য কিছু দিয়ে নয়।গোসলের পর শিশুকে খুব ভালভাবে মুছে দিন যাতে ভি-এরিয়া ভেজা না থাকে।

-শিশুদেরকে ইউরিনেশনের পর পানি ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করুণ।এতে,ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।
ইউরিন ইনফেকশনের চিকিৎসাতে সাধারণত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।তাই,সময় মত মেডিসিন নিন এবং এন্টিবায়োটিক ওষুধের কোর্স কমপ্লিট করুন।

সাবধান থাকুন,সচেতন থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।