• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০৭:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯, ০৭:৩৯ পিএম

পুজোর গন্ধ এসেছে

পুজোর গন্ধ এসেছে
ছবি: কবি ইতি বনিকের ওয়াল থেকে নেয়া

পূজা আসছে। তার গন্ধ চারদিকে। মন্দিরে মন্দিরে সাজ সাজ রব। বাড়িতে বাড়িতে দজভুজা দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি চলছে।মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।  ৩ অক্টোবর পূজার ষষ্ঠী। দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয় ষষ্ঠীতেই। তবে ষষ্ঠী পূজা, অর্থাত্ বোধনের দিন থেকেই পূজা শুরু হলেও পূজার আসল আমেজ মানে ভিড় শুরু হয় সপ্তমী থেকে। পূজার সময়টাতে বেশি আনন্দে মেতে ওঠে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তবে সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ান যেকোনো ধর্মের লোকজন। শখ করেই অনেকে দেখতে আসেন পূজা মণ্ডপগুলো। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব রীতিনীতি এভাবেই চলছে।

মডেল : রোমানা আমিন

 প্রতিবারই দেবী মর্ত্যলোকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে। দেবীর সঙ্গে থাকেন তার চার সন্তান, বিদ্যার দেবী সরস্বতী, ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী, কার্তিক ও সিদ্ধিদাতা গণেশ। দেবীকে বরণ করার জন্য সবাই সমানভাবেই উদগ্রীব থাকেন। ঘরে ঘরে নারিকেলের নাড়ু, মুড়ির মোয়া বানাতে ব্যস্ত থাকেন মায়েরা। নতুন জামাকাপড় কেনায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেন সবাই। জগজ্জননী মায়ের আগমনে এভাবেই হয়ে থাকে ‘সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব’।মহাসপ্তমীতে শুরু হয় মূল পূজা। ঢাকঢোলের তালে দেবীপূজার মূলপর্ব শুরু হয় এখান থেকেই। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে ঢাকের তালে নাচতে নেমে পড়ে সবাই।

আর অষ্টমীর সকালে দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিতে মহাসপ্তমীর রাতে নানা রকমের ফুল আর বেলপাতা সংগ্রহের কাজ করে কিশোর থেকে যুবক বয়সীরাই। আর মহাষ্টমীর সকালবেলায় পরিবারের সবাই মিলে পূজা মণ্ডপে গিয়ে দেবীর পায়ে মন্ত্র পড়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া ছাড়াও কুমারী পূজা দেখতে ভিড় করেন। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া পূজার এ সময়টাতে আর তেমন বিশেষ কাজ থাকে না কিশোর কিংবা যুবক বয়সীদের। চলাফেরা আর পড়াশোনায় বিধিনিষেধ না থাকায় যেন বেশি আনন্দেই মেতে ওঠেন সবাই। নবমী পূজার রাতের অনুভূতি থাকে বিসর্জনের বিষাদে আচ্ছন্ন। পূজা শেষের একটা বেদনা কাজ করে এ রাতে। তবে আরতি আর ঢাকঢোলের তালে সেটা খুব কমই বুঝা যায়।

 চারদিনের পূজা শেষে দশমীতে হয় দেবীর বিসর্জন।  দশমীর সকাল থেকেই বিষাদ ও আনন্দের অনুভূতি মিশ্রিত। ঢাকঢোলের তালে সিঁদুর খেলায় নেমে পড়েন সবাই। সিঁদুর খেলা শেষে দেবীকে নেওয়া হয় বিসর্জনের উদ্দেশ্যে। সবাই মিলে ঢাকঢোল বাজিয়ে ট্রাকে ঘুরে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জন ঘাটে। বিসর্জন ঘাটে পৌঁছার পর একে একে প্রতিমা নামিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়। ঢাকের বাজনা ও আরতির মূর্চ্ছনায় একেক করে দেবী প্রতিমা নিয়ে বিসর্জন দেয়া হয়।

আবার নদীতে বিসর্জন দেওয়ার সময় বড় নৌকায় উঠিয়ে কয়েকজন যুবক মিলে যাওয়া হয়। আর বিসর্জন ঘাটের পাড়জুড়ে থাকে উপচেপড়া ভিড়। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নদীর পাড়ে ভিড়জমে অসংখ্যা নর-নারীর। পাড় থেকে ধাতব মুদ্রা ছুড়ে দেওয়া হয় দেবীর উদ্দেশে। বিজয়া দশমীর অপরাহ্নের অসাম্প্রদায়িক এই চিত্র চোখে পড়ার মতো। বিসর্জন শেষে যে যার মতো ফিরে যায় নিজ ঠিকানায়। দশমীর রাতে মন্দিরে মন্দিরে বিতরণ করা হয় পূজার প্রসাদ। এভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোত্সবের সমাপ্তি হয়, আর দেবী ফিরে যান কৈলাসে।