• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০১৯, ০৭:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ৫, ২০১৯, ০৭:২৮ পিএম

৮০১ প্রতিমার পূজামণ্ডপ

৮০১ প্রতিমার পূজামণ্ডপ
বাগেরহাট সদরের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপ -ছবি : ইউএনবি

চলছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে বৈচিত্র্যময় সব পূজামণ্ডপ। তবে মণ্ডপে দেব-দেবীর সংখ্যার বিচারে সবাইকে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বাগেরহাট সদরের হাকিমপুর গ্রামের শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপ।

শিল্পপতি লিটন শিকদারের বাড়িতে এবার নিয়ে ৯ বছর ধরে চলছে দুর্গোৎসবের আয়োজন। যেখানে মণ্ডপে প্রতি বছরই বাড়ানো হচ্ছে প্রতিমার সংখ্যা এবং এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০১টি। গত বছর প্রতিমা ছিল ৭০১টি।

শিকদারবাড়ির মণ্ডপে মহামায়া দুর্গার সঙ্গী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর ও কলিযুগের বিভিন্ন দেব-দেবী। আর তাদের দেখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে।

দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে ঘোড়ায় চড়ে মর্ত্যলোকে বাবার বাড়িতে আসেন। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বেলগাছের নিচে মহাষষ্ঠী পূজায় মা দুর্গাকে আরধনা করা হয়। শনিবার (৫ অক্টোবর) মহাসপ্তমী, রোববার (৬ অক্টোবর) মহাঅষ্টমী, সোমবার (৭ অক্টোবর) মহানবমী এবং মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দশমী পূজা অন্তে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে দেবী দুর্গা ঘোড়ায় চড়ে আবার কৈলাসে ফিরে যাবেন।

বাগেরহাট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অমিত রায়ের দাবি, শিকাদারবাড়ির দুর্গোৎসবের এ আয়োজন পৃথিবীর সেরা। ব্যক্তি উদ্যোগে আর কোথাও এত বেশি সংখ্যক দেব-দেবীর প্রতিমা সাজিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয় নি। এটি গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাওয়ার যোগ্য।

মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। তাতে বেশ কয়েকটি সারিতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিমা। কারিগররা তাদের সাজিয়েছেন হাতের নিপুণ ছোঁয়া আর রঙ-তুলিতে অপরূপ সাজে।

ঘোড়ায় চড়ে দুর্গার মর্ত্যলোকে আগমন ও গমন, বিভিন্ন দেব-দেবীর সৃষ্টি রহস্য, নারায়ণের অনন্ত শয্যা, শিবের জটা থেকে গঙ্গার উৎপত্তি, সমুদ্র-মন্থন, নারায়ণের শত-সহশ্ররূপ, বাল্যকালে শ্রীকৃষ্ণের ননী চুরি, হলিখেলা, শিবলিঙ্গের উৎপত্তি, রাক্ষস বধ, ব্রহ্মার দেহ থেকে শতরূপার সৃষ্টিসহ নানা বিষয় প্রতিমার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

প্যান্ডেলের পাশে পুকুরে বাহুবলি চলচ্চিত্রের আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা এবং তাতে দেখানো হয়েছে সখীদের নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের নৌবিহার। সেই সাথে পুরো এলাকা জুড়ে করা হয়েছে ব্যাপক আলোকসজ্জা। নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে দর্শনার্থীদের পূজার প্যান্ডেলে প্রবেশ করানো হচ্ছে। এছাড়া প্যান্ডেলের ভেতরে এবং বাইরে বাসানো হয়েছে অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা।

হাকিমপুর গ্রামের চিকিৎসক দুলাল শিকদার ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা সাজিয়ে নিজ বাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। সেই থেকে তাদের মণ্ডপে প্রতি বছর প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ বছর দুলাল শিকদার মারা যাওয়ায় আয়োজনের হাল ধরেন তার ছেলে লিটন শিকদার।

তিনি বলেন, হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে মানুষকে উজ্জীবিত করতে ৯ বছর ধরে বাড়িতে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। এ আয়োজন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। মন্তব্য বইয়ে অসংখ্য মানুষ তাদের মতামত উপস্থাপন করে উৎসাহ দিচ্ছেন।

বিশাল এ আয়োজনে কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা প্রকাশ না করলেও তিনি জানান, নানাভাবে বিশাল অংকের অর্থ খরচ হচ্ছে।

প্রতিমার কারিগর বিজয় কৃষ্ণ বাছাড় জানান, তারা ১৫ জন প্রায় ছয় মাস ধরে শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপের ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করেছেন। ৯ থেকে ১৫ ফুট উচ্চতার বিভিন্ন প্রতিমা দেশি-বিদেশি রঙ আর অলংকার দিয়ে সাজানো হয়েছে। হিরার মতো দেখতে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে শাড়ির নকশায়।

প্যান্ডেল প্রস্তুতকারক আবদুল কুদ্দুস শেখ জানান, তারা ১৫ জনে মিলে প্রায় চার মাস ধরে সাজসজ্জার কাজ করেছেন। প্রায় ৫০ ফুট উচুঁ বিশাল গেট তৈরি করা হয়েছে। একই সাথে বানানো হয়েছে মঞ্চ।

মণ্ডপে আসা বেশ কয়েকজন স্থানীয় দর্শনার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে শারদীয় উৎসবে তারা শিকদারবাড়ির পূজামণ্ডপ দেখতে আসছেন। আর পিরোজপুরের বিপ্লব পাল, সাতক্ষীরার অঞ্জলী রানী দাস ও গোপালগঞ্জ থেকে আসা অনন্ত কুমার মজুমদার জানালেন, তারা আগে কখনও এক মণ্ডপে এত সংখ্যক দেব-দেবীর প্রতিমা দেখেন নি। ইউএনবি

এসএমএম

আরও পড়ুন