• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৫:২১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০১৯, ০৫:২৪ পিএম

মিষ্টি স্বাদের পুষ্টিকর ফল রাম্বুটান

মিষ্টি স্বাদের পুষ্টিকর ফল রাম্বুটান

আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা ফল খেতে পছন্দ করেন না। আবারঅনেকে,একই রকম ফলখেতেখেতে বিরক্ত।তাদেরকে আজ এমন একটি ফলের বিষয়ে জানাবো,যে ফলটি দেখতে যেমন সুন্দর,খেতে তেমনি সুস্বাদু এবং অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। মিষ্টি স্বাদের অনেকটা লিচুর মত।খেতে,লাল টুকটুকে,নরম,লোমশ তুলতুলে এই ফলটির নাম রাম্বুটান। বাংলাদেশে ধীরে ধীরে এই ফলটি বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যদিও এই ফলটি আমাদের দেশীয় নয় তবে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই ফলটি চাষ করা হয়। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম (Nephelium lappaceum)নেফেলিয়াম ল্যাফাসিয়াম এবং ফলটি মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার।

রাম্বুটান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন সি,ফাইবার এবং মিনারেলসে পরিপূর্ন।মাত্র ৫-৬টি রাম্বুটান থেকে দৈনিক ভিটামিন-সি এর চাহিদার ৫০% পূরণ হয়। ফলটি অনেক ভাবে খাওয়া যায়। গোটা ফল বা জুস হিসাবে কিংবা ফ্রুট সালাদে অথবা স্নাক্স হিসাবে ফলটি খাওয়া যেতে পারে।

রাম্বুটানের পুষ্টিগুণ

প্রতি ১০০ গ্রাম রাম্বুটানে রয়েছে ৮২ কিলোক্যালরি,শর্করা ২০.৮৭ গ্রাম,পানি ৭৮.০৪ গ্রাম,ফাইবার ০.৯ গ্রাম,প্রোটিন ০.৬৫ গ্রাম,টোটাল ফ্যাট ০.২১ গ্রাম,ফোলেট ৮ ম্যাঃগ্রাঃ,ভিটামিন-এ ৩ আই ইউ,ভিটামিন-সি ৪.৯মিঃগ্রাঃ এবং আয়রন ০.৩৫ গ্রাম।

রাম্বুটানের হেলথ বেনেফিটস

  • রাম্বুটানে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভয় ধরণের ফাইবার বা খাদ্য আঁশরয়েছে।যা,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং ডাইজেস্টিভ সিস্টেমকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।
  • রাম্বুটানে বেশ ভাল পরিমাণে তরল রয়েছে যা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।যাদের প্রায়ই ডিহাইড্রেশন হয় অথচ পানি খেতে চান না তারা রাম্বুটানের জুস খেতে পারেন।ফলটি যেহেতু প্রাকৃতিক ভাবে মিষ্টি তাই বাড়তি চিনি যোগ করার প্রয়োজন হবে না।
  • যারা,ওজন কমাতে চান এবং ফিটনেস সচেতন তারা স্নাক্স হিসাবে অথবা জিম শেষ করে টক দইয়ের সাথে রাম্বুটান মিক্স করে খেতে পারেন।যা,একাধারে হেলদি এবং টেস্টি।রাম্বুটানের ফাইবার দেহের ওজন কমাতে সাহায্য পাশাপাশি ভাল পরিমাণে এনার্জি ও  প্রদান করে।
  • যাদের চুলের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে তারা খাদ্য তালিকায় রাম্বুটান যোগ করতে পারেন।রাম্বুটানে,চুলের জন্য জরুরী পুষ্টি উপাদান আয়রন,জিংক এবং প্রোটিন রয়েছে।
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য রাম্বুটান খুবই ভাল চয়েস।মর্নিং সিকনেস বা বমি বমি ভাব দূর করতে এই এই ফলটি বেশ কার্যকর।এছাড়া,রাম্বুটানে গর্ভস্থ শিশুর জন্য জরুরী পুষ্টি উপাদান আয়রন,ফোলিক এসিড ভিটামিন এবং ভিটামিন-সি রয়েছে।সুতরাং,অন্যান্য ফলের পাশাপাশি এই ফলটি গর্ভকালীন সময়ে খেতে পারেন।
  • সুগারের পরিমাণ বেশি বলে ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি পরিমাণে রাম্বুটানে গ্রহন করলে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে।তবে,মজার বিষয় হল এই ফলটি নয় ফলের খোসাটিডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিউট্রাসিউটিক্যালসের কাজ করে অর্থাৎ রাম্বুটানের খোসা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
  • অনেক সময়বিভিন্ন অসুখের সময়ে ক্যালরি চাহিদা বেড়ে যায় তখন এই ফলটির জুস খুবই কার্যকর।
  • যারা,ঘন ঘন অসুখে ভোগেন অর্থাৎ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং অপুষ্টিতে ভুগছেন তারা নিয়মিত এই সুস্বাদু ফলটি খেতে পারেন।ফলটিতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদন এবং উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে যা ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
  • রাম্বুটান অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  • যেসব পুরুষ ইনফার্টিলিটির সমস্যাতে ভুগছেন তারা রাম্বুটান বেঁছে নিতে পারেন।চিকিৎসার পাশাপাশি ফলটি খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন।গবেষণায়,দেখা গেছে ইনফার্টিলিটি দূর করতে এই ফলটির বেশ ভাল ভূমিকা রয়েছে। 
  • যাদের বোন হেলথের অবস্থা বিশেষ ভাল না,তাদের জন্য এই ফলটিতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি হাড়কে শক্তিশালী করার জন্য বেশ কিছু উপাদানযেমনঃফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন-সি রয়েছে।
  • ফলটি নিঃসন্দেহে পুষ্টিকর তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।সারাদিনে সর্বোচ্চ ১০টি ফল খাওয়া যেতে পারে।ডায়াবেটিস রোগীরা নাস্তার পর ২-৩ টি রাম্বুটান খেতে পারেন।এতে,সুগারের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।

দৈনিক ফাইবারের চাহিদা পূরণ হবার জন্য অন্তত ৪০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ফলমূল গ্রহণ করা উচিত।সুতরাং,সুস্থ থাকতে এই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফলটি খাওয়া শুরু করতে পারেন।

আজকাল ফলটি,মোটামুটি ভাল মানের যেকোন ফলের দোকানে পাওয়া যায়।তাছাড়া,সুপার শপ গুলোতে খুব সহজেই ফলটি পেতে পারেন।যদিও ফলটির দাম দেশী ফলের তুলনায় কিছুটা বেশি।তবে,স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করলে দামের ব্যাপারটি মাথায় আসবে না। 

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।