• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৫:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ২, ২০১৯, ০৫:৫৪ পিএম

ড্রাগন ফ্রুট : এক ফলেই অনেক পুষ্টি

ড্রাগন ফ্রুট : এক ফলেই অনেক পুষ্টি

দেখতে অন্যান্য ফলের তুলনায় কিছুটা ভিন্নরকম,তবে ফলটির রয়েছে অন্য রকম এক আকর্ষণ।বিলুপ্ত প্রানী ড্রাগনের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য পাওয়া যায় বলেই হয়তো ফলটির নাম ড্রাগন ফল। ড্রাগন ফ্রুট স্বাদের দিক থেকে কিছুটা পানসে বা ভীষণ মিষ্টি হতে পারে।এটি খুব মিষ্টি নাকি কিছুটা কম মিষ্টি হবে তা নির্ভর করে ফলটি কতটা পরিপক্ক তার উপর।এই ফলটি লাল,হলুদ বা গাড় বেগুনী বর্নের হয়ে থাকে।একটি ড্রাগন ফ্রুট পিটায়া ফল নামেও পরিচিত। যদিও এই ফলটির উৎপত্তি আমাদের দেশে নয় তবুও চাহিদা বাড়ার কারণে বর্তমানে এই ফলটি আমাদের দেশেও চাষ হচ্ছে।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ

USDA এর তথ্য অনুযায়ী,প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফ্রুটে ক্যালরি রয়েছে ২৬৪ কিলোক্যালরি শর্করা ৮২.১৪ গ্রাম,প্রোটিন ৩.৭৫ গ্রাম,ফ্যাট ০.০ গ্রাম,ফাইবার ১.৮ গ্রাম,সুগার টোটাল ৮২.১৪ এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে ১০৭ মিঃগ্রাম।পুষ্টিকর এই ফলটি জুস,আইসক্রিম,ডেজার্ট বা মিক্স সালাদ হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

ড্রাগন ফলের হেলথ বেনেফিটস

  • গাড় বেগুনী,লাল বা হলুদ বর্নের এই ফলটিতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার,ক্যালসিয়াম,ভিটামিন-বি১,বি২,বি৩,আয়রন,ফসফরাস,পলি ফেনলস,এনজাইমস,প্রোটিন সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
  • ড্রাগন ফ্রুটে জলীয় অংশ এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি হবার কারণে পেটের নানা সমস্যা দূর করতে এটি বেশ কার্যকর।বিশেষ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে এটি বেশ উপকারী।
  • আমাদের দৈনিক আয়রন চাহিদার ৮% পূরণ হতে পারে ড্রাগন ফ্রুট থেকে।এই আয়রনের অভাব জনিত কারণে আমাদের দেশে মহিলা এবং শিশুরা এনিমিয়া ভুগে থাকে।যা নানা কারণে পরবর্তীতে বিপদজ্জনক বলে বিবেচিত হতে পারে।বিশেষ করে বিষটির সাথে কিডনির কার্যকারীতা কমে যাবার সম্পর্ক রয়েছে।
  • ড্রাগন ফ্রুট “অ্যান্টি-কার্সিনোজেনিক” উপাদান হিসাবে বিবেচিত লাইকোপেন নামক এনজাইমে সমৃদ্ধ।পাশাপাশি,অন্যান্য ক্যান্সার বিরোধী উপাদান ক্যারোটিন এবং ভিটামিন-সি এর খুব ভাল উৎস।এই,তিন ধরণের উপাদান গুলো এক সাথে টিউমার সেলের গঠনকে বাঁধা প্রদান করে।শুধু ফল নয়,ফলের খোসাটি পলি ফেনলেসের ও খুব ভাল উৎস যা নির্দিষ্ট কিছু ক্যান্সার থেকে আমাদের রক্ষা করে।
  • একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে,ড্রাগন ফ্রুট জন্মগত গ্লুকোমা প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।এই ফলটি হিউমান সাইটোক্রম-পি ৪৫০ কে প্রতিরোধ করতে পারে।এই,উপাদানটি কনজেনিটাল গ্লুকোমার সম্ভাবনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত।যদিও সাইটোক্রম-পি ৪৫০ লিভারে পাওয়া যায় এবং কিডনি এবং লান কে সঠিক ভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
  • গর্ভবতী মায়েদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের কোন বিকল্প নেই।ড্রাগন ফলটি গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী।বিশেষ করে আয়রন,ফাইবার এবং ফোলিক এসিডের বাড়তি চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে।
  • কিডনির কোন সমস্যা থাকলে,রেনাল সিস্টেম ক্যালসিয়াম শোষণের জন্য ভিটামিন-ডি কে অ্যাক্টিভ করতে পারেনা।ফলশ্রুতিতে,হাড় খুবই দূর্বল হয়ে যায়।তাই,উচ্চ পরিমাণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল হাড়ের সমস্যা কমাতে বেশ কার্যকর।
  • ডেঙ্গুর সময় প্লাটিলেট বাড়াতে ড্রাগন ফ্রুটের শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশ কার্যকর।সুতরাং,ডেঙ্গু হলে ইমিউন সিস্টেমকে দ্রুত শক্তিশালী করতে এবং প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়াতে ড্রাগন ফ্রুট বা এর জুস খাওয়া যেতে পারে।
  • ড্রাগন ফ্রুটে থাকা বিশেষ প্রোটিন এবং এনজাইম আমাদের দেহ কোষের পুনর্গঠন ও রিপেয়ার করতে সাহায্য করে।
  • যারা,প্রায় চুলে কালার করেন তাদের চুলের যত্নে এটি খুব উৎকৃষ্ট একটি উপাদান।পরিমাণ মত ড্রাগন ফল পানির সাথে মিশিয়ে পেস্ট করে চুলে লাগিয়ে,৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে ১ বার এই উপাদানটি ব্যবহার করলে হেয়ার ড্যামেজ এবং হেয়ার ফল উভয়ই দূর হবে।
  • পাশাপাশি,রক্ত পিউরিফাই করতে,ফ্যাটি লিভার দূর করতে,দৃষ্টি শক্তি ভাল রাখতে এবং ফ্লু জনিত সর্দি জ্বর দূর করতে ডাগন বা পিটাইয়া ফলটি বিশেষ উপাকারী।
  • আফ্রিকান “জার্নাল অব বায়োটেকনোলজির” স্টাডি অনুযায়ী,ড্রাগন ফ্রুটে থাকা বিটা সায়ানিন এবং বিটা জ্যান্থিননামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের জন্য ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিরপেক্ষ করতে সাহায্য করে।ফলে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারেনা।ফ্রি র‍্যাডিক্যাল এমন এক ধরণের যৌগ যা আমাদের দেহের কোষের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
  • সুতরাং,সুস্থ থাকতে এবং দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য দেশি ফলের পাশাপাশি মাঝে মাঝে এই ফলটি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন।

লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।