• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ০৪:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২০, ০৪:৫৩ পিএম

গর্ভ ধারণের ১ম তিন মাসে যে বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভ ধারণের ১ম তিন মাসে যে বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ

গর্ভধারনের বিষয়টি প্রতিটি মায়ের জন্য নতুন এক ধরণের অভিজ্ঞতা।সেসাথে,এই সময়টা অত্যন্ত জটিল এবং এক,এক জন মায়ের জন্য গর্ভকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা ভিন্ন ভিন্ন।গর্ভকালীন পুরো নয় মাসের সময়টাকে ফার্স্ট ট্রাইমিস্টার, সেকন্ড ট্রাইমিস্টার এবং থার্ড ট্রাইমিস্টার এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। গর্ভধারণের ১ম সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১২ তম সপ্তাহকে ধরা হয় ফার্স্ট ট্রাইমিস্টার,১৩ সপ্তাহ হতে ২৬ সপ্তাহ কে ধরা হয় সেকন্ড ট্রাইমিস্টার এবং ২৭ সপ্তাহ থেকে বাকি সময়টাকে ধরা হয় থার্ড ট্রাইমিস্টার।

একজন নারীর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সময় হল গর্ভকালীন সময়।গর্ভকালীন পুরো সময়টা গুরুত্বপূর্ন হলেওনানা কারণে প্রথম ট্রাইমিস্টার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং কিছুটা সংকটাপন্ন।কারণ,অধিকাংশ গর্ভপাত প্রথম তিন মাসেই হয়ে থাকে। সুতরাং, নীচের তথ্য গুলো থেকে জেনে নিন প্রথম তিন মাস কি করা উচিত।

  • আপনি গর্ভবতী এটা গর্ভধারণের ৪ সপ্তাহের মধ্যেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব।ইউরিন টেস্ট,ব্লাড টেস্ট কিংবা আলট্রাসোনোর মাধ্যমে আপনি গর্ভধারনের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
  • গর্ভধারনের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হবার পর আপনার প্রথম কাজ হওয়া উচিত যত দ্রুত সম্ভব একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া।কারন,ডাক্তার প্রাথমিক ভাবে কিছু টেস্ট এবং কিছু ভিটামিন যেমনঃফোলিক এসিড দিয়ে থাকেন।যা,গর্ভস্থ শিশুর জন্য খুবই জরুরী বলে বিবেচিত।
  • আপনার গর্ভধারণ যদি পরিকল্পিত না হয় অর্থাৎ হুট করে গর্ভধারন করলেন কিংবা গর্ভকালীন সময়ের আগে যদি আপনি আপনার কোন রোগ বা সমস্যা আছে কিনা সে বিষয়ে অবগত না থাকেন।কিংবা আপনার বয়স ২৫ এর উপরে থাকে,ওজন স্বাভাবিকের চাইতে বেশি থাকে এবং পরিবারে বাবা বা মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,গর্ভবতী মায়ের একেবারে গর্ভবস্থার প্রথম দিকেই গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হতে পারে।
  • সেক্ষেত্রে,উপরের বিষয় গুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায় তবে গর্ভধারণের পর পরই “ওজিটিটি” বা ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টটি করে নেয়া যেতে পারে।তাহলে,আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি গর্ভবস্থার একে বারে প্রথম দিকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা?
  • মনে রাখবেন,গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে না থাকলে তা গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
  • অধিকাংশ মায়ের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস বেশ কষ্টে কাটে।বমি বমি ভাব,বমি হওয়া,কোষ্ঠ কাঠিন্য কিংবা প্রচন্ড গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার কারণে অধিকাংশ মায়েরা থাকেন বিপর্যস্ত।এছাড়া,মায়ের গর্ভে নতুন প্রানের সঞ্চারের ফলে হরমোনের পরিমাণ বেড়ে নানা রকম অচেনা অনুভূতি বা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন একজন হবু মা। 
  • কোন কোন মায়ের ক্ষেত্রে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা,কারো ক্ষেত্রে থেমে থেমে হালকা ব্যথা কিংবা জেনিটাল এরিয়াতে ব্যথা থাকতে পারে।সাধারণত ইউটেরাস এক্সপ্যান্ড হবার কারণে নতুন মায়েরা এই ধরণের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে পারেন। 
  • গর্ভকালীন ১ম তিন মাস বা একেবারে প্রথম দিকে পেটে হালকা ব্যথা থাকতে পারে।এটি যদি থেমে থেমে হয় অর্থাৎ কিছুক্ষণ হয়ে আবার পরে হয় আবার চলে যায় তবে খুব বেশি চিন্তার কারণ নেই।
  • তবে,হবু মায়ের পেটে ব্যথা যদি এক নাগাড়ে হয় তবে দেরী না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
  • গর্ভধারনের ১ম তিন মাস স্বাভাবিক স্বল্প পরিশ্রম হয় এমন যেকোন কাজ করা যেতে পারে।তবে,কাপড় ধোয়া,ঘর ঝাড়ু দেয়া বা মোছা,বার বার উচু নিচু হতে হয় এমন কাজ,সিড়ি বেয়ে ওঠা,ভারী জিনিস বহন করা কিংবা ঠাণ্ডা লাগে এমন কাজ পরিহার করা উচিত।
  • গর্ভবস্থার প্রথম তিন মাস দূরের জার্নি পরিহার করা উচিত।ঝাঁকি লাগে এমন যান-বাহন  এড়িয়ে চলা উচিত।রাস্তা খারাপ থাকলে সম্ভব হলে ধীরে ধীরে হেঁটে যাওয়া যেতে পারে।এতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম।
  • গর্ভকালীন প্রথম তিন মাস উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার যেমনঃকলিজা পরিহার করা উচিত।সেই সাথে যেসব সাপ্লিমেন্টে ভিটামিন-এ থাকে সেগুলো ও পরিহার করা উচিত।কারন,আমাদের শরীরে এমনিতেই ভিটামিন –এ সঞ্চিত থাকে।উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-এ গর্ভস্থ ভ্রুনের ক্ষতি হবার আশংকা থাকে।
  • অনেকেরই আল্ট্রাসোনোগ্রাম নিয়ে নানা ধরণের ভীতি কাজ করে যা মোটেও ঠিক নয়।আপানার গর্ভস্থ শিশুর ভালোর জন্যই এটি জরুরী।মায়ের পেটে পানির পরিমাণ কিংবা বাচ্চার হার্টবিট জানার জন্য আল্ট্রাসোনোগ্রাম দিয়ে থাকেন
  • তবে,খেয়াল রাখবেন গর্ভকালীন সময়ে যেন কোন ভাবেই এক্সরে করা না হয়।কারন,এক্সরে গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর।যদি কোন কারণে এক্সরে করার প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যয় ডাক্তারকে জানান যে আপনি গর্ভবতী।
  • একজন গর্ভবতী মায়ের পক্ষে একেবারে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের যত্ন নেয়া সম্ভব নয়।তাই,পরিবারের সবার উচিত তাকে সহযোগিতা করা।


        লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।