যান্ত্রিক জীবনের নিত্য ব্যস্ততায় ভুলিয়ে রেখে যেন পলকে ফাঁকি দেয় সময়। বিস্মৃত সময়ের বুকে সঞ্চিত বিচ্ছিন্ন স্মৃতির রোমন্থনে মনে হয়, এই তো যেন সেদিন মাত্র জিয়ন প্রভাতে তারুণ্যের সোনালী আভা ছড়িয়ে এসেছিলো সূর্যোদয়। এসেছিলো বিদ্যাঙ্গণ, সময়ের সাথে এক ঝাঁক অচেনা মুখের চির চেনা বন্ধু হয়ে ওঠা, আরো কত কি! সেই সব মুহূর্তগুলো যেন জীবনের ক্যানভাসজুড়ে রংধনুর বর্ণিল চ্ছটায় রাঙিয়ে দিয়েছিল পৃথিবীটা। এরপর, পলকেই যেন তা গোধূলির অস্তগামী রক্তিম সূর্যের ম্লান চ্ছটায় বিদায়ের বার্তা দেয়।
সেই হারানো অতীতের বহু কথাই হারিয়ে যায়, বিলীন হয় বহু স্মৃতি। তবে মনের ক্যানভাসে কখনোই যেন ম্লান হয় না বিদ্যাঙ্গণে কাটানো সময়টুকু। স্কুল মাঠের সবুজ ঘাস মাড়িয়ে তাঁর শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই, এক ঝাঁক হাসি মুখ একে অন্যের হয়ে উঠতে না উঠতেই, দপ্তরির হাতের সেই কাঠের দণ্ডটার ঘাঁয়ে বারান্দার এক পাশে সযত্নে ঝুলিয়ে রাখা কাসার ঘন্টায় বেজে ওঠা শব্দের প্রতিধ্বনি বাতাসে বিলীন হতে না হতেই যেন প্রাণহীন শূন্যতা আর বিদায়ের বিষণ্ণতা নিয়ে হাজির হয় অশ্রুসিক্ত বিদায় লগ্ন।
কারো কারো জীবনে এমনই স্মৃতির প্রবাহ আসে একাকিত্ম ভুলিয়ে দিতে শুধু। তবে কিছু মানুষ যেন হারতে জানে না। সময়ের বিধান ভেঙে, হাজারো প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ছিন্ন করে তাঁরা ছুটে আসে জীবন সংসারের সকল ব্যস্ততা আর পিছুটান ফেলে। হৃদয়ের টানে তাঁরা ছুটে আসে একে অন্যের কাছে, মুহুর্তের জন্যে অপলক চোখে চোখ রেখে আবেগের প্রলয়ে কেঁপে ওঠা কন্ঠে শুধু একটি বার জিজ্ঞাস করতে, বন্ধু কেমন আছিস? তোদের কথা মনে পড়ে। সময় ভুলিয়ে দিয়েছে বহু কথা, তোদের ভুলিয়ে দিতে পারেনি...।
ঠিক এমনই এক ঝাক চিরতারুণ্যের মিতালী- সোনালী সময়ের স্মৃতিচারণ আর সময়ের উদ্ভাসিত উদযাপনে বন্ধুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল ঈগলস ফ্রেন্ডস ক্লাব আয়োজিত বন্ধু পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মঞ্চে। এসএসসি'৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ঠিকানা হিসেবে এই ক্লাবের আত্মপ্রকাশ ও তাঁর নেপথ্য সম্পর্কে অনেক কথায় বললেন ক্লাবটির পরিচালনা পর্ষদের অন্যতম সদস্য হেলাল ইউ চৌধুরী।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে ঈগলস নাইট আয়োজন প্রসঙ্গে ক্লান্তিহীন কন্ঠে তিনি দৈনিক জাগরণকে জানালেন নিজের অনুভূতির কথা। মুখে প্রাণবন্ত হাসি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, ক্লান্তি? অসম্ভব। এমন মুহূর্ত উদযাপনে একটা সফল আয়োজন করতে পেরেছি, বন্ধুদের মুহূর্তের ভাল লাগা বা একটু সময়ের প্রাণবন্ত হাসি উপহার দিতে পেরেছি, দারুন লাগছে। এমন কিছুর জন্যে আমি বার বার বেগাড় খাটতে রাজি।
এসএসসি ব্যাচ'৯৪-এর এক ঝাঁক শিক্ষার্থী আজ পেশাগত জীবনের যান্ত্রিকতা ভুলে মেতে উঠেছিলো বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে। ঈগলস ফ্রেন্ড ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান- 'ঈগল নাইটস'-এর প্রথম উদযাপনটি ছিল সত্যিই নজরকাড়া। বর্ণিল আলোকচ্ছটা আর প্রাণবন্ত সজ্জায় বন্ধুমিলনের দৃষ্টনন্দন এক মঞ্চে ক্লাবটির পক্ষ থেকে বন্ধুদের দেয়া হলো দারুণ সম্ভাষণ। নান্দনিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশি হাজার কথায় চললো স্মৃতিরোমন্থন আর ভোজন পালা। এরপর নিজেদের কন্ঠে ফেলে আসা যৌবনের প্রিয় গানের সুর তুলেও অনেকে নিজেদের সময়টুকুকে ফিরিয়ে এনেছিলেন স্মৃতিতে। কিছু সময়ের জন্য তাদের এই মিলে মিশে এক হয়ে যাওয়ার মাঝে যেন তাদের জীবনের ফেলা সেই সব সোনালী মুহূর্তগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।
জাগরণ/এসকে