• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২, ২০২২, ০৬:৪৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৩, ২০২২, ০৩:০০ এএম

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ’

মাওলা আলি ।।

বছর ঘুরে আবার এলো ঈদ। ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে  ঈদের আনন্দ আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। ঘরে ঘরে বইছে আনন্দের বন্যা। পথে পথে ছড়িয়ে পড়েছে খুশির ঝিলিক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মনে আনন্দের কোনও সীমা নেই।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)-এর বৈশ্বিক মহামারি কারণে গত দুই বছর ছিল না চিরায়ত ঈদ উৎসব। বিধি নিষেধের ঘেরাটোপে পালিত হয়েছিল ওই দুইটি ঈদ। কিন্তু এবার পরিস্থিতি  অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসায় ফিরে এসেছে চিরায়ত ঈদ উৎসব। 

ঈদ মানেই তো সকাল বেলা নতুন জামা গায়ে চাপিয়ে ঈদগাহে যাওয়া। ঈদের আসল আয়োজনই হলো নামাজ। ছেলে-বুড়ো সবাই যাবে ঈদগাহে। নামাজের পর দোস্ত-দুশমন ভুলে গিয়ে বুকে বুক মেলানো। এ দৃশ্য চিরন্তন। 

দেশের প্রতিটি ঈদগাহ এর মধ্যেই প্রস্তুত। জাতীয় ঈদগাহও প্রস্তত হয়ে আছে নগরবাসীর জন্য। দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ময়দানও।

রাজধানী ঢাকায় প্রধান ঈদ জামাত জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায়। তবে আবহাওয়া বৈরী থাকলে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে সকাল ৯টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এখানে প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, রাজনীতিক এবং দেশি বিদেশি কূটনীতিকদের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে জাতীয় ঈদগাহের আশপাশে। মুসল্লিদের প্রয়োজন মেটাতে রাখা হয়েছে সবধরনের আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থা। মুষলধারে বৃষ্টি ঠেকাতে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াটার প্রুফ সামিয়ানা। তবে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের শুধুই জায়নামাজ বহনের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। 

ঈদে বড় শহরগুলো সেজেছে উৎসবের রূপে। রাজধানীতে বনানী থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারকখচিত ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলোতেও করা হয়েছে আলোকসজ্জা।

চিড়িয়াখানা, শিশুমেলার মতো বিনোদন কেন্দ্র খোলা থাকবে ঈদে। নইলে যে শিশুদের ঈদই পূর্ণ হবে না ।

এত আয়োজন! কিন্তু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কৃষকের ঈদ’ কবিতার মতো অনেক গরিবের দুয়ারে আজ ঈদ আসবে না। বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে কৃষকদের এবার ঈদ নিরানন্দ। আকষ্মিক ঢলে ডুবে গেছে তাদের সোনার ফসল। তাই এবার আনন্দ নেই হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মনে-ঘরে। তবে সামর্থ্যবানরা ওয়াজিব জাকাত ফেতরা আদায় করলে ঈদ আসবে সবার কাছে। নজরুলের কবিতার মতোই ‘যার ঘরে ধনরত্ন জমানো আছে,/ ঈদ আসিয়াছে, জাকাত আদায় করিব তাদের কাছে।/ এসেছি ডাকাত জাকাত লইতে, পেয়েছি তাঁর হুকুম,/ কেন মোরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় মরিব, সহিব এই জুলুম।’

ঈদ মানেই একে অপরকে আপন করে নেয়া। শুভেচ্ছা জানানোর রীতি চিরন্তন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো এরই মধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। এই আনন্দ বাড়িয়ে দিতে আছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও এফএম রেডিওর ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। জাতীয় পত্রিকার অনলাইন ভার্সন ও অনলাইন সংবাদপত্র খোলা রয়েছে। তারা মুহূর্তে সংবাদ পরিবেশন করছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ঈদুল ফিতরই হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব। বাংলাদেশে ঈদ উপলক্ষে রমজান মাস ধরে কেনাকাটা চলে। বেশিরভাগ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোশাক কেনা হয় সাধ্যমতো। 

ঈদুল ফিতরকে আরবিতে রোজা ভাঙার দিবস অভিহিত করা হয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুটো সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলমানরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দর সঙ্গে পালন করে থাকে। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনেও আবদ্ধ করে সবাইকে।

ঈদ মুসলমানদের জীবনে শুধু আনন্দ-উৎসবই নয়, বরং এটি একটি মহান ইবাদত যার মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা খুঁজে পায়। সব শ্রেণি ও সব বয়সের নারী-পুরুষ ঈদের জামাতে শামিল হয়ে মহান আল্লাহ শোকর-গুজর আদায়ে নুয়ে পড়ে। 

ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে— ঈদুল ফিতরের দিনে খুশি প্রকাশ করা মুসলমানের জন্য মুস্তাহাব। যখন ঈদের দিন ভোর হয় তখন আল্লাহ্ তা’আলার আপন ফেরেশতরা সব শহরে, সব গলি ও রাস্তাগুলোর মাথায় দাঁড়িয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলাও তার বান্দাদের এভাবে সম্বোধন করেন— ‘হে আমার বান্দারা! চাও, কি চাইতে ইচ্ছে হয়! আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ! আজকের দিনে এ জমায়েতে (ঈদের নামাজে) তোমাদের আখিরাত সম্পর্কে যা কিছু চাইবে তা পূরণ করব। আর যা কিছু দুনিয়া সম্পর্কে চাইবে তাতে তোমাদের মঙ্গলের দিক দেখব। আমার সম্মানের শপথ! তোমরা যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বিধানাবলীর প্রতি যত্মবান থাকবে আমিও তোমাদের ভুলত্রুটিগুলো গোপন রাখব। আমার সম্মান ও মহত্ত্বের শপথ, আমি তোমাদের সীমালঙ্ঘনকারীদের সঙ্গে অপমানিত করব না। তোমাদের ঘরের দিকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে ফিরে যাও। তোমরা আমাকে সন্তষ্ট করেছো। আমিও তোমাদের ওপর সন্তষ্ট হয়ে গেছি।’

এরই মধ্যে প্রিয়জদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়েছে প্রায় সোয়া কোটি মানুষ।

যারা এক মাস রোজা রেখে অভুক্ত থাকার কষ্টকে অনুভব করেছেন, নামাজ, তারাবিহ, ইবাদত-বন্দেগি ও ইসলামের অনুশাসন পালন করেছেন, তাদের জন্য এই ঈদ আনন্দ বেশি উপভোগের, উচ্ছ্বাসের ও শান্তির। তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের এক মহাপুরস্কার হচ্ছে ঈদ। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা মতে— এক মাস রোজা রাখার পর মুসলমানরা যখন নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি তথা পছন্দের পোশাক পরে, দেহে আতর-খুশবু মেখে ঈদগাহে যান, তখন ফেরেশতারা তাদের সংবর্ধনা জানান। স্বর্গীয় সব বাণীতে তাদের অভিনন্দিত করা হয়।

ঈদুল ফিতর মুসলিম উম্মাহর জন্য এক সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, শাসক-শাসিত ও আবালবৃদ্ধবণিতা সবার জন্য ঈদের আনন্দ যেন সমান ও ব্যাপক হয়, ইসলামে সেই ব্যবস্থা রয়েছে।

পবিত্র রমজানে বিত্তবানরা এগিয়ে এলে এবং দান-খয়রাত করলে, জাকাত ও ফিতরা প্রদান করলে দরিদ্ররা ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারবে বেশি। তাদের মুখেও হাসি ফুটবে এবং ঈদের ভোর আসবে তাদের জন্য আনন্দবার্তা নিয়ে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদের খুতবায় দান-খয়রাতকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করতেন।

ঘরে ঘরে উপাদেয় খাদ্যসামগ্রী তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। সেমাই খাওয়ার ঈদ বলে প্রচলিত এই ঈদে সেমাইয়ের সঙ্গে থাকবে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, কোরমা, পোলাওসহ সুস্বাদু সব খাবারের সম্ভার।

রোগীদের জন্য হাসপাতাল এবং এতিমখানা ও বন্দিদের জন্য জেলখানায় থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন।

সরকারি শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র এবং দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে থাকবে উন্নতমানের খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা।

কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগারেও পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। 

জাগরণ/জীবনযাপন/ধর্ম/এসএসকে/কেএপি/এমএ