• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০১৯, ০৬:৫৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৩, ২০১৯, ০৮:৪৪ পিএম

 চৈত্রসংক্রান্তির সংস্কৃতি 

 চৈত্রসংক্রান্তির সংস্কৃতি 
চৈত্র সংক্রান্তির অন্যতম অনুষঙ্গ অষ্টক দলের একটি পরিবেশনা- ছবি: সংগ্রহ

 চৈত্রের ঢাকের শব্দে উড়ে যায়, শিমুলের ষোড়শী তুলো। চৈত্র সংক্রান্তির পালনকারী মানুষের বিশ্বাস এটা। তাই সংক্রান্তির আগেই শিমুল
তুলো গাছের তুলো পেড়ে ফেলা হয়। মানুষের বিশ্বাস এটা করা না হলে চৈত্র সংক্রান্তির ঢাকের শব্দ বাজলেই তুলো উড়ে যাবে । সবলোক
সংস্কৃতির এ বিষয়টার মধ্যেই লোকাচারের যে উপাদান আছে  তা একাভাবেই লক্ষ্যনীয়।
 চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব আসলে গ্রামীন ঐতিহ্যের বড় ধরনের একটি পর্ব। 

 

চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব আকারে দেশের যেসব অঞ্চলে পালিত হয় তার সবখানেই আদিদেবতা শিবের মন্দিরকে ঘিরে চলে উৎসব। শিবকে
বুড়ো ঠাকুরও বলা হয়। যেসব বাড়িতে  শিব মন্দির  আছে এবং যারা চৈত্র সংক্রান্তির পূজা করে এমন বাড়িগুলোকে গ্রাম বাংলায় ‘বুড়োঠাকুর
বাড়ি’ও বলে। বুড়ো ঠাকুর বাড়িতে চৈত্র সংক্রান্তির দশ বারোদিন আগে থেকেই শুরু হয় উৎসবের পর্ব। চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে শুরু হয়  
নানান অনুষ্ঠান ও লোকাচার। এসবের মধ্যে রয়েছে অষ্টক গান, গিরিসন্ন্যাস , বাসুর মরন, পাট চালান, পাটপূজা, খেজুর ভাঙ্গা, পূন্যস্নান।
এর মধ্য দিয়ে মেলা ও পয়লা বোশেখের হালখাতা উৎসব শুরু হলেও এগুলো শিব পূজার সাথে যুক্ত নয়। 
 ভুমি কেন্দ্রিক সভ্যতার এই দেশে ফসলকে মূল উপজীব্য করে শুরু হয় উৎসব। ফসলের সঙ্গে উর্বরতা একটা বড় বিষয়।
 
এ উর্বরতা প্রাচীন কাল থেকেই দেখা হতো ভুমি ও নারীর মধ্যে। যে কারনে চড়ক মেলায় চড়কে ঘোরার সাথে যৌন জীবন, উর্বরতার মতো
সৌর বছরের বা চান্দ্র মাসের মিল আছে । অন্যদিকে চড়কের গাছের নীচের ভাগটা ও যেখানে গর্ত খুড়ে  পুঁতে ফেলা হয় তার মধ্যে যৌন
জীবনের উর্বরতার প্রকাশ মেলে। চড়কের নীচের ভাগটা পুরুষাঙ্গের আকৃতি বিবেচনা করা হয়, এবং বাকি বিভিন্ন বিষয় নারীর কথা ভেবেই
করা হয়।

এ জন্য চড়ক গাছ যেদিন পুকুর থেকে উঠানো হয় সেদিন যেসব নারীদের সন্তান হয় না তাদের ওই পুকুরে ­স্নান করানো হয় সন্তান হওয়ার
প্রত্যাশায়। তার আগে আরেকটা বিষয় আছে। একজন সন্ন্যাসী যাকে ‘বালা’ বলা হয় তিনি একটা আম গাছে উঠে আম ছিড়ে শিবের ধ্বনি
দিয়ে আম পূজারিদের উদ্দেশে ছোড়া হয়। নিঃসন্তান নারী-যারা সন্তান প্রত্যাশা করে তারা ওই আম নিয়ে চড়ক পুকুরে পূন্য স্নান করে।  
স্নানের সময়ে জল ডুব দেয়ার আগে সবাই নাভী জলে নেমে তার সংগ্রহকৃত শিবের আশীর্বাদবহ আমটি কাচা চিবিয়ে গিলে খায়। পুজারীদের
বিশ্বাস এতে নিঃসন্তানের সন্তান হয়। 

 

পূজার যত আনুষ্ঠানিকতা সবই শিবের নামে করা হয় বলে যেকান কাজের শেষে ধ্বনি দিয়ে বলা হয়, জয় বাবা শিবশংকর , এইবার উদ্ধার
কর। শত কণ্ঠের এই ধ্বনি চড়ক পূজাকে উৎসব মুখর করে তোলে। প্রাচীন বাংলার মানুষ চাঁদ ও সূর্যকে ‘বুড়াবুড়ি’ নামে অভিহিত করেছে
এবং এর ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয়েছে ‘বুড়াবুড়ির মেলা’। উল্লেখ্য বুড়াবুড়ির মেলা পরবর্তীতে সূর্যমেলা, সূর্য ঠাকুরের ব্রত, চৈত্রসংক্রান্তি—  
ব্রতের মেলা, চড়কমেলা ও শিবের গাজন মেলায় রূপ নিয়েছে।

 চৈত্র সংক্রান্তি—  শেষে বর্ষবরণ উৎসবও এখন নিয়ম হয়ে গেছে। চৈত্রসংক্রান্তির সাথে নববর্ষ উদযাপনের এই মহোৎসব দিনে দিনে বৃদ্ধি
পেলেও এর শুরু খুব বেশিদিন আগে থেকে নয়।  যতোটা জানা যায় এর শুরু ১৯১৭ সাল থেকে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা
করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে নববর্ষ আর মকর সংক্রান্তি— বা চৈত্রসংক্রান্তি—
মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। চৈত্রসংক্রান্তি— উপলক্ষ করে গ্রামে-গঞ্জে আয়োজিত হয় নীল পূজা বা চড়ক পূজা। কেউবা বলে শিবের
গাজন। চড়ক মেলায় বান-বড়শি ফুঁড়ে মানত পূর্ণ করে এক দল বিশ্বাসী মানুষ। চড়ক মেলার মধ্যেই বিশাল মেলার আয়োজন হয় দেশের
বিভিন্ন স্থানে। এ সময়ের লোকাচারগুলোও উপভোগ্য।

 এ সময় চোখে পড়ে গ্রামের পথে হর-পার্বতী বা শিব-দুর্গা সেজে দুজন লোক গান গেয়ে গেয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। সঙ্গে থাকে ভরা
চৈত্রের রোদ পোড়া একদল দুরন্ত— কিশোর যুবা। দলে থাকে একজন শিব ও  একজন পার্বতী ও দু’জন সখী। সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর।
তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল। সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে নাচে। এদেরকে নীল পাগলের দলও বলা হয় আবার
অষ্টকের দলও বলা হয়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় এবং নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায়
তা দিয়ে হয় পূজা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা ‘চড়ক সংক্রান্তির মেলা’ নামে অভিহিত। চড়ক পূজার ১০-১২
দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারিদের মধ্যে ৪০-৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত
করে মাগন করেন।
 
চড়ক পূজা পর্যন্ত— তারা পবিত্রতার সঙ্গে সন্যাসব্রত পালন করে ও আমিষ খাদ্য গ্রহণ করে না। সারা দিন উপবাস পালন করে। পূজার
সংস্কৃতি বা নিয়ম কানুন সব তারাই করে।  চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক পূজা মূলত গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়ক পূজারই রকমফের। আধি
পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা দশরথের এক কন্যা ছিল চিত্রা । চিত্রার নামানুসারে এক নক্ষত্রের নাম করা হয় চিত্রা। চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র
মাসের নামকরণ। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আধি পুরানের মতানুযায়ী চৈত্র মাসের শেষ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে বিধাতাকে তুষ্ট করার
নানান আয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে অভিনব ও প্রাচীন আয়োজন চৈত্র সংক্রান্তি— এবং তার জন্য ধর্মীয় আয়োজন চড়ক পূজা। চড়ক পূজা
চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনে পালিত হয়।  চৈত্র সংক্রান্তির এই দীর্ঘকলীন উৎসব আবর্তিত হয় পাট পুজার মধ্য দিয়ে। এই
পাটই শিব পাটই সব।

 

 

 ‘পাট’  খুবই জাঁক-জমক সহকারে করা হয়। চড়ক পূজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘পাট নাচানি’। চড়ক দেবের প্রতিকৃতির নাম ‘পাট’।
কাঠের পাটের মধ্যে থাকে শিবলিঙ্গ। রাতে গুরু সন্যাসী সেটি নদীতে নিয়ে যান। এ সময় আয়োজকরা সং সেজে অর্থাৎ ভুত- প্রেত-
দৈত্য-দানবের মুখোশ পড়ে সন্যাসীকে বাধা দেয়। সন্যাসী তান্ত্রিক ক্ষতায় সব বাধা উপেক্ষা করে পাট চালান করিয়ে  তেল-সিঁদুর-চন্দন
মেখে দেন।  রাতে পাটকে  স্নানের পর অজস্র পুজারীদের সামনে পাটকে মাঝখানে রাখা হয় তার পরে নাচ গানের মধ্য দিয়ে বালারা ধুপ
পোড়ায় ও পাটকে লাল সালু দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। 

এসময় সমস্বরে‘ জয় বাবা শিব শংকরো, এইবার উদ্ধার করো’ বলে ধ্বণি দেয়া হয়। সংগে সঙ্গে একখানা সজ্জিত কাঠ দেবতা হয়ে ওঠে।
তাতে লালসালু প্যাঁচিয়ে দেয়া হয়। সিঁদুরে মাখানো হয় মাথার দিকটা। তারপর একজন সুঠাম দেহী পাট চালানে নেয় এবং ঘোরাতে
ঘোরাতে মাথায় তুলে দেয় ছুট। মন্দিরের কাছে গিয়ে সে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে যায়। তাকে সুস্থ করা হয় মাথায় জল দিয়ে। তারপর দিন
থেকে বাড়ি বাড়ি ঘোরা হয় পাট নিয়ে। খর রোদে পাটের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত— হয় অজস্র কিশোর যুবা। 

সাথে বাজে ঢাক ,কাসি-বাঁশি আরো কতোকি। এই পাট একজন মাথায় নেয় আর বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এই পাটের সামনে কোন
গর্ভবতী মহিলা পড়লে তার বিপদের আশঙ্কা থাকে বলে মনে করা হয়। এসব পূজার মূলে রয়েছে ভুতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস।
এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজেও পালন করা হতো।   যে কারনে দেখা যায় পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ
বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে জিভে বান ও পিঠে বড়শী ফোড়া খুবই অমানবিক দৃশ্যের অবতারনা করলেও এখানে যারা আসে তারা
স্বেচ্ছায়ই আসে।

গিরি সন্ন্যাসের দিনে সন্ন্যাসী বা বালারা ভিন্ন তালে নেচে নেচে গায়- আমরা শিবের নামে আছি/ শিবের নামে বাঁচি। গোঁসাই শিবের নামে
আছি/ বাঁচি রে--পাট বাড়ি বাড়ি গেলে খেজুর ভাঙা উৎসব হয়। একজন বালা খেজুর গাছ ধরে খেজুরের কাটা উপেক্ষা করে একদম, গাছের
মাথা উঠে যায়খেজুর ছুঁড়ে দেয় সবার দিকে। ওই খেজুর ঘরের দুয়ারে বেধে রাখা হয় আপদ বিপদ তাতে  দূরে থাকে বলে মানুষের বিশ্বাস।
এর পর পাট সামনে রেখে বালারা নানা রকম খেলা দেখান শারিরীক কসরত করে এটাকে অনেক অঞ্চলে ‘পাট নাচানি’ বলে। 
 
‘চড়ক ঘুরানো’  চৈত্র সংক্রান্তির দার্শনিক উৎসব বলা যায়। কারন এটাই হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি যে দেবতার নামে করা হয় তাকে খুশী করার
আনুষ্ঠানিকতা। চড়ক পূজার মূল এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব এটি। ২৫-৩০ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো সোজা একটি বৃ¶ খন্ডকে বলা
হয় ‘চড়ক গাছ’ বা বুড়ো ঠাকুর। কদম গাছের মূল কাণ্ড দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। সারা বছর গাছটি জলে ডুবানো থাকে। কথিত আছে  চৈত্র
সংক্রান্তির দিনে মন্দিরের ঢোলের উল্টোফিঠে বদ্যবাজাতে শুরু করলে চড়ক গাছ বা বুড়ো ঠাকুর পুকুরে আসেন। তারপর তাকে খোঁজা হয়।
তবে সাবধানে কারন এ গাছে পা লাগলে অকল্যানতো হবেই পা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চড়ক গাছ পাওয়া গেলে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে  
উঠানো হয়। 

এরপর মন্দিরের কাছে কোন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চড়ক পূজা। মূল সন্যাসী পূজার পৌরহিত্য করেন। এ সময় অনেকে পাঁঠা বলি দেয় পূর্ব মানত
অনুসারে। বিকালের দিকে চড়ক গাছটি সোজা করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। গাছের আগায় আনুভুমিকভাবে বেঁধে দেওয়া হয় কাঠ। বালারা
স্নান করে নতুন ধুতি পরে । এবং মূল সন্যাসীর কাছে মন্ত্র নেন। তন্ত্র-মন্ত্র শেষ হলে তাদের পিঠে লোহার ধারালো বড়শি গেঁথে দেওয়া হয়।
এরপর সে অবস্থায় তাকে আনুভ‚মিকভাবে বেঁধে রাখা কাঠের দুই প্রান্তে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ঘুরানোর মধ্যে চান্দ্র মাসের
হিসেবে বর্ষ গণণার  বিষয়টি উঠে আসে। 

 

শিবের নাম নিয়ে পিঠে বড়শি গাঁথা লোকটি শূন্যে চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। এ সময় নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তরা তার দিকে ফুল, বাতাসা
ছুঁড়ে দেন। তিনি তার হাতে থাকা প্রসাদ অযুত দর্শনার্থী/পুজারীদের উদেশ্যে ছুঁড়ে দেন। জিভে যারা বান ফোড়েন তাদেরেও জিভে ধারালো
লোহার শলাকা জিভে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে মানত থাকে কে কত হাত বনফুঁড়বেন। বান ফুড়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষায় নামে সন্যাসীরা।
চৈত্র সংক্রান্তির সর্বশেষ অনুষ্ঠান হাল খাতা। পয়লা বৈশাখে দোকানিরা লালসালু মোড়ানো খাতা নিয়ে সারা বছরের হিসাব নিকেশ করতেন।
এসময় দোকানের মালিকরা  দোকানের খদ্দেরদেরদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়নকরতেন। এবং সারা বছরের দেনা-পাওনা বুঝে নিতেন। 

এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিলো। বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার  এ প্রক্রিয়া এখন
গ্রামে-গঞ্জে টিকে থাকলেও সেভাবে আর নেই। চৈত্র সংক্রান্তির মতো চড়ক পূজা আবহমান বাংলার লোকায়ত উৎসবের একটি। দেশের খুব
কম এলাকায় চড়ক পূজা হয়।

তবে গোলগঞ্জের কোটালীপাড়ার সিদ্ধান্ত বাড়ির পূজার ভ্রাপ্তি এত বড় যা ভাবনার বাইরে। উৎসবের অনেক বিষয়ে বদল আসলেও এগুলো
টিকে থাকা উচিৎ কারন সংস্কৃতি না থাকলে সংস্কার হয় না। মানুষ মানুষ থাকে না। অমানবিক সমাজ, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ জঙ্গীবাদ ও
ধর্মান্ধতার জন্ম দেয় । যে সমাজে কোন মতেই মানুষের বাসযোগ্য থাকে না। 

 চৈত্রসংক্রান্তির সংস্কৃতি 
 দীপংকর গৌতম

  চৈত্রের ঢাকের শব্দে উড়ে যায়, শিমুলের ষোড়শী তুলো। চৈত্র সংক্রান্তির পালনকারী মানুষের বিশ্বাস এটা। তাই সংক্রান্তির আগেই শিমুল
তুলো গাছের তুলো পেড়ে ফেলা হয়। মানুষের বিশ্বাস এটা করা না হলে চৈত্র সংক্রান্তির ঢাকের শব্দ বাজলেই তুলো উড়ে যাবে । সবলোক
সংস্কৃতির এ বিষয়টার মধ্যেই লোকাচারের যে উপাদান আছে  তা একাভাবেই লক্ষ্যনীয়।
 চৈত্র সংক্রান্তির উৎসব আসলে গ্রামীন ঐতিহ্যের বড় ধরনের একটি পর্ব। 

চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব আকারে দেশের যেসব অঞ্চলে পালিত হয় তার সবখানেই আদিদেবতা শিবের মন্দিরকে ঘিরে চলে উৎসব। শিবকে
বুড়ো ঠাকুরও বলা হয়। যেসব বাড়িতে  শিব মন্দির  আছে এবং যারা চৈত্র সংক্রান্তির পূজা করে এমন বাড়িগুলোকে গ্রাম বাংলায় ‘বুড়োঠাকুর
বাড়ি’ও বলে। বুড়ো ঠাকুর বাড়িতে চৈত্র সংক্রান্তির দশ বারোদিন আগে থেকেই শুরু হয় উৎসবের পর্ব। চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে শুরু হয়  
নানান অনুষ্ঠান ও লোকাচার। এসবের মধ্যে রয়েছে অষ্টক গান, গিরিসন্ন্যাস , বাসুর মরন, পাট চালান, পাটপূজা, খেজুর ভাঙ্গা, পূন্যস্নান।
এর মধ্য দিয়ে মেলা ও পয়লা বোশেখের হালখাতা উৎসব শুরু হলেও এগুলো শিব পূজার সাথে যুক্ত নয়। 
 ভুমি কেন্দ্রিক সভ্যতার এই দেশে ফসলকে মূল উপজীব্য করে শুরু হয় উৎসব। ফসলের সঙ্গে উর্বরতা একটা বড় বিষয়।
 
এ উর্বরতা প্রাচীন কাল থেকেই দেখা হতো ভুমি ও নারীর মধ্যে। যে কারনে চড়ক মেলায় চড়কে ঘোরার সাথে যৌন জীবন, উর্বরতার মতো
সৌর বছরের বা চান্দ্র মাসের মিল আছে । অন্যদিকে চড়কের গাছের নীচের ভাগটা ও যেখানে গর্ত খুড়ে  পুঁতে ফেলা হয় তার মধ্যে যৌন
জীবনের উর্বরতার প্রকাশ মেলে। চড়কের নীচের ভাগটা পুরুষাঙ্গের আকৃতি বিবেচনা করা হয়, এবং বাকি বিভিন্ন বিষয় নারীর কথা ভেবেই
করা হয়।

এ জন্য চড়ক গাছ যেদিন পুকুর থেকে উঠানো হয় সেদিন যেসব নারীদের সন্তান হয় না তাদের ওই পুকুরে ­স্নান করানো হয় সন্তান হওয়ার
প্রত্যাশায়। তার আগে আরেকটা বিষয় আছে। একজন সন্ন্যাসী যাকে ‘বালা’ বলা হয় তিনি একটা আম গাছে উঠে আম ছিড়ে শিবের ধ্বনি
দিয়ে আম পূজারিদের উদ্দেশে ছোড়া হয়। নিঃসন্তান নারী-যারা সন্তান প্রত্যাশা করে তারা ওই আম নিয়ে চড়ক পুকুরে পূন্য স্নান করে।  
স্নানের সময়ে জল ডুব দেয়ার আগে সবাই নাভী জলে নেমে তার সংগ্রহকৃত শিবের আশীর্বাদবহ আমটি কাচা চিবিয়ে গিলে খায়। পুজারীদের
বিশ্বাস এতে নিঃসন্তানের সন্তান হয়। 

পূজার যত আনুষ্ঠানিকতা সবই শিবের নামে করা হয় বলে যেকান কাজের শেষে ধ্বনি দিয়ে বলা হয়, জয় বাবা শিবশংকর , এইবার উদ্ধার
কর। শত কণ্ঠের এই ধ্বনি চড়ক পূজাকে উৎসব মুখর করে তোলে। প্রাচীন বাংলার মানুষ চাঁদ ও সূর্যকে ‘বুড়াবুড়ি’ নামে অভিহিত করেছে
এবং এর ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয়েছে ‘বুড়াবুড়ির মেলা’। উল্লেখ্য বুড়াবুড়ির মেলা পরবর্তীতে সূর্যমেলা, সূর্য ঠাকুরের ব্রত, চৈত্রসংক্রান্তি—  
ব্রতের মেলা, চড়কমেলা ও শিবের গাজন মেলায় রূপ নিয়েছে।

 চৈত্র সংক্রান্তি—  শেষে বর্ষবরণ উৎসবও এখন নিয়ম হয়ে গেছে। চৈত্রসংক্রান্তির সাথে নববর্ষ উদযাপনের এই মহোৎসব দিনে দিনে বৃদ্ধি
পেলেও এর শুরু খুব বেশিদিন আগে থেকে নয়।  যতোটা জানা যায় এর শুরু ১৯১৭ সাল থেকে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা
করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে নববর্ষ আর মকর সংক্রান্তি— বা চৈত্রসংক্রান্তি—
মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। চৈত্রসংক্রান্তি— উপলক্ষ করে গ্রামে-গঞ্জে আয়োজিত হয় নীল পূজা বা চড়ক পূজা। কেউবা বলে শিবের
গাজন। চড়ক মেলায় বান-বড়শি ফুঁড়ে মানত পূর্ণ করে এক দল বিশ্বাসী মানুষ। চড়ক মেলার মধ্যেই বিশাল মেলার আয়োজন হয় দেশের
বিভিন্ন স্থানে। এ সময়ের লোকাচারগুলোও উপভোগ্য।

 এ সময় চোখে পড়ে গ্রামের পথে হর-পার্বতী বা শিব-দুর্গা সেজে দুজন লোক গান গেয়ে গেয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। সঙ্গে থাকে ভরা
চৈত্রের রোদ পোড়া একদল দুরন্ত— কিশোর যুবা। দলে থাকে একজন শিব ও  একজন পার্বতী ও দু’জন সখী। সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর।
তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল। সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে নাচে। এদেরকে নীল পাগলের দলও বলা হয় আবার
অষ্টকের দলও বলা হয়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় এবং নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায়
তা দিয়ে হয় পূজা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা ‘চড়ক সংক্রান্তির মেলা’ নামে অভিহিত। চড়ক পূজার ১০-১২
দিন আগে থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারিদের মধ্যে ৪০-৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত
করে মাগন করেন।
 
চড়ক পূজা পর্যন্ত— তারা পবিত্রতার সঙ্গে সন্যাসব্রত পালন করে ও আমিষ খাদ্য গ্রহণ করে না। সারা দিন উপবাস পালন করে। পূজার
সংস্কৃতি বা নিয়ম কানুন সব তারাই করে।  চৈত্র সংক্রান্তির চড়ক পূজা মূলত গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়ক পূজারই রকমফের। আধি
পুরাণে বর্ণিত আছে, রাজা দশরথের এক কন্যা ছিল চিত্রা । চিত্রার নামানুসারে এক নক্ষত্রের নাম করা হয় চিত্রা। চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র
মাসের নামকরণ। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আধি পুরানের মতানুযায়ী চৈত্র মাসের শেষ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে বিধাতাকে তুষ্ট করার
নানান আয়োজন। এর মধ্যে সবচেয়ে অভিনব ও প্রাচীন আয়োজন চৈত্র সংক্রান্তি— এবং তার জন্য ধর্মীয় আয়োজন চড়ক পূজা। চড়ক পূজা
চৈত্রসংক্রান্তিতে অর্থাৎ চৈত্র মাসের শেষ দিনে পালিত হয়।  চৈত্র সংক্রান্তির এই দীর্ঘকলীন উৎসব আবর্তিত হয় পাট পুজার মধ্য দিয়ে। এই
পাটই শিব পাটই সব।

 ‘পাট’  খুবই জাঁক-জমক সহকারে করা হয়। চড়ক পূজার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ‘পাট নাচানি’। চড়ক দেবের প্রতিকৃতির নাম ‘পাট’।
কাঠের পাটের মধ্যে থাকে শিবলিঙ্গ। রাতে গুরু সন্যাসী সেটি নদীতে নিয়ে যান। এ সময় আয়োজকরা সং সেজে অর্থাৎ ভুত- প্রেত-
দৈত্য-দানবের মুখোশ পড়ে সন্যাসীকে বাধা দেয়। সন্যাসী তান্ত্রিক ক্ষতায় সব বাধা উপেক্ষা করে পাট চালান করিয়ে  তেল-সিঁদুর-চন্দন
মেখে দেন।  রাতে পাটকে  স্নানের পর অজস্র পুজারীদের সামনে পাটকে মাঝখানে রাখা হয় তার পরে নাচ গানের মধ্য দিয়ে বালারা ধুপ
পোড়ায় ও পাটকে লাল সালু দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। 

এসময় সমস্বরে‘ জয় বাবা শিব শংকরো, এইবার উদ্ধার করো’ বলে ধ্বণি দেয়া হয়। সংগে সঙ্গে একখানা সজ্জিত কাঠ দেবতা হয়ে ওঠে।
তাতে লালসালু প্যাঁচিয়ে দেয়া হয়। সিঁদুরে মাখানো হয় মাথার দিকটা। তারপর একজন সুঠাম দেহী পাট চালানে নেয় এবং ঘোরাতে
ঘোরাতে মাথায় তুলে দেয় ছুট। মন্দিরের কাছে গিয়ে সে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে যায়। তাকে সুস্থ করা হয় মাথায় জল দিয়ে। তারপর দিন
থেকে বাড়ি বাড়ি ঘোরা হয় পাট নিয়ে। খর রোদে পাটের পেছনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত— হয় অজস্র কিশোর যুবা। 

সাথে বাজে ঢাক ,কাসি-বাঁশি আরো কতোকি। এই পাট একজন মাথায় নেয় আর বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এই পাটের সামনে কোন
গর্ভবতী মহিলা পড়লে তার বিপদের আশঙ্কা থাকে বলে মনে করা হয়। এসব পূজার মূলে রয়েছে ভুতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস।
এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজেও পালন করা হতো।   যে কারনে দেখা যায় পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ
বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে জিভে বান ও পিঠে বড়শী ফোড়া খুবই অমানবিক দৃশ্যের অবতারনা করলেও এখানে যারা আসে তারা
স্বেচ্ছায়ই আসে।

গিরি সন্ন্যাসের দিনে সন্ন্যাসী বা বালারা ভিন্ন তালে নেচে নেচে গায়- আমরা শিবের নামে আছি/ শিবের নামে বাঁচি। গোঁসাই শিবের নামে
আছি/ বাঁচি রে--পাট বাড়ি বাড়ি গেলে খেজুর ভাঙা উৎসব হয়। একজন বালা খেজুর গাছ ধরে খেজুরের কাটা উপেক্ষা করে একদম, গাছের
মাথা উঠে যায়খেজুর ছুঁড়ে দেয় সবার দিকে। ওই খেজুর ঘরের দুয়ারে বেধে রাখা হয় আপদ বিপদ তাতে  দূরে থাকে বলে মানুষের বিশ্বাস।
এর পর পাট সামনে রেখে বালারা নানা রকম খেলা দেখান শারিরীক কসরত করে এটাকে অনেক অঞ্চলে ‘পাট নাচানি’ বলে। 
 
‘চড়ক ঘুরানো’  চৈত্র সংক্রান্তির দার্শনিক উৎসব বলা যায়। কারন এটাই হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি যে দেবতার নামে করা হয় তাকে খুশী করার
আনুষ্ঠানিকতা। চড়ক পূজার মূল এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব এটি। ২৫-৩০ ফুট উঁচু বৈদ্যুতিক খুঁটির মতো সোজা একটি বৃ¶ খন্ডকে বলা
হয় ‘চড়ক গাছ’ বা বুড়ো ঠাকুর। কদম গাছের মূল কাণ্ড দিয়ে তৈরি করা হয় এটি। সারা বছর গাছটি জলে ডুবানো থাকে। কথিত আছে  চৈত্র
সংক্রান্তির দিনে মন্দিরের ঢোলের উল্টোফিঠে বদ্যবাজাতে শুরু করলে চড়ক গাছ বা বুড়ো ঠাকুর পুকুরে আসেন। তারপর তাকে খোঁজা হয়।
তবে সাবধানে কারন এ গাছে পা লাগলে অকল্যানতো হবেই পা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চড়ক গাছ পাওয়া গেলে ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে  
উঠানো হয়। 

এরপর মন্দিরের কাছে কোন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় চড়ক পূজা। মূল সন্যাসী পূজার পৌরহিত্য করেন। এ সময় অনেকে পাঁঠা বলি দেয় পূর্ব মানত
অনুসারে। বিকালের দিকে চড়ক গাছটি সোজা করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়। গাছের আগায় আনুভুমিকভাবে বেঁধে দেওয়া হয় কাঠ। বালারা
স্নান করে নতুন ধুতি পরে । এবং মূল সন্যাসীর কাছে মন্ত্র নেন। তন্ত্র-মন্ত্র শেষ হলে তাদের পিঠে লোহার ধারালো বড়শি গেঁথে দেওয়া হয়।
এরপর সে অবস্থায় তাকে আনুভ‚মিকভাবে বেঁধে রাখা কাঠের দুই প্রান্তে দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এই ঘুরানোর মধ্যে চান্দ্র মাসের
হিসেবে বর্ষ গণণার  বিষয়টি উঠে আসে। 

শিবের নাম নিয়ে পিঠে বড়শি গাঁথা লোকটি শূন্যে চারপাশে ঘুরতে শুরু করে। এ সময় নিচে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তরা তার দিকে ফুল, বাতাসা
ছুঁড়ে দেন। তিনি তার হাতে থাকা প্রসাদ অযুত দর্শনার্থী/পুজারীদের উদেশ্যে ছুঁড়ে দেন। জিভে যারা বান ফোড়েন তাদেরেও জিভে ধারালো
লোহার শলাকা জিভে ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে মানত থাকে কে কত হাত বনফুঁড়বেন। বান ফুড়ে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষায় নামে সন্যাসীরা।
চৈত্র সংক্রান্তির সর্বশেষ অনুষ্ঠান হাল খাতা। পয়লা বৈশাখে দোকানিরা লালসালু মোড়ানো খাতা নিয়ে সারা বছরের হিসাব নিকেশ করতেন।
এসময় দোকানের মালিকরা  দোকানের খদ্দেরদেরদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়নকরতেন। এবং সারা বছরের দেনা-পাওনা বুঝে নিতেন। 

এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ছিলো। বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার  এ প্রক্রিয়া এখন
গ্রামে-গঞ্জে টিকে থাকলেও সেভাবে আর নেই। চৈত্র সংক্রান্তির মতো চড়ক পূজা আবহমান বাংলার লোকায়ত উৎসবের একটি। দেশের খুব
কম এলাকায় চড়ক পূজা হয়।

তবে গোলগঞ্জের কোটালীপাড়ার সিদ্ধান্ত বাড়ির পূজার ভ্রাপ্তি এত বড় যা ভাবনার বাইরে। উৎসবের অনেক বিষয়ে বদল আসলেও এগুলো
টিকে থাকা উচিৎ কারন সংস্কৃতি না থাকলে সংস্কার হয় না। মানুষ মানুষ থাকে না। অমানবিক সমাজ, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদ জঙ্গীবাদ ও
ধর্মান্ধতার জন্ম দেয় । যে সমাজে কোন মতেই মানুষের বাসযোগ্য থাকে না।