• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০১৯, ০৫:৪০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ১৯, ২০১৯, ১২:০১ এএম

গল্প

অধিকার

অধিকার

                                     

    চার বছরের রিপা বড় কষ্টে মায়ের ভাগ রাহুলকে ছেড়ে দিয়েছে। দিয়েছে আবার দেয়নি। রাহুলের জন্মের সময় খুব আনন্দেই নিয়েছিল সে সংবাদটা। একটা ছোট পুতুলের মতো শিশু খেলার উপকরণ হবে, এই ভেবে সে পুলকিত হয়েছিল। কিন্তু পুতুলটি মাকে দখল করে রেখে দেবে, এটি চার বছরের রিপা ভাবতে পারেনি। প্রতিরাতেই তো সে মায়ের কাছেই ঘুমায়, মাকে জড়িয়ে ধরে একেবারে বুকের সাথে মিশে থাকে। রাহুলের জন্মের কয়েকদিন আগেই মা চলে গেল ক্লিনিকে, তখন থেকেই মাকে হাতছাড়া হবার সময় গণনা শুরু। রাতে ওর ঘুমই আসে না। বাবার পাশে শুয়ে থাকলে কি মায়ের অভাব মেটে! যদিও রিপা মা বাবার মাঝখানে শুতো, কিন্তু জড়িয়ে ধরে রাখত মাকেই। মা-ও ওকে জড়িয়ে থাকত। ক্লিনিকে যাবার পর ঘুমের মধ্যে খুঁজতে গিয়ে মায়ের কোমলতার বদলে বাবার বুকের লোমশ সমতলতা ওকে ঘুম এনে দিতে অসমর্থ। একটু পরপর কেঁদে কেঁদে ওঠেছে রিপা।

    মা ক্লিনিক থেকে ফেরার পর একটা ছোট্ট শিশু ওকে মা কাছে না থাকার কষ্ট পুষিয়ে দেয়, তবে তা কিছুক্ষণের জন্য। রাতে যখন মায়ের কাছে ঘুমুতে গেল, তখনই বিপত্তি। মা তো ছোট্ট পুতুলের দিকে পাশ ফিরে শোয়া। ওর দিকে ফিরেছিল, কিন্তু একটু সময়ের জন্য। মা কি তাহলে হাতছাড়া! এই বেদনা রিপাকে অনেকদিন কাঁদিয়েছে।

    মায়ের বুকে হাত না রেখে রিপা তো ঘুমাতেই পারত না। এখন রাহুল মায়ের একটা দুধ তো খাবেই, অন্যটাতেও হাত দিয়ে ধরে রাখবে। রিপাকে ধরতে দেবে না। এমনি করে অনেকদিন মায়ের দুধ নিয়ে ভাগাভাগির লড়াই চলেছে রিপা রাহুলের মধ্যে। সে লড়াই এখনো অব্যাহত আছে। মা বলে তুমি না বড়, ওতো ছোট।
এখন রাহুল মায়ের একপাশে একটা দুধ ধরে থাকবে, অন্য পাশে রিপা অন্যটা। সেই রকম একটা ফয়সালা অলিখিতভাবেই করে নিয়েছে এরা।

 

    আজকেও তো এরকমই হবার কথা। রিপা বামপাশে, এরপর মা, এরপর রাহুল, তারপর বাবা। গভীর ঘুমে। কিন্তু না, সবাই গভীর ঘুমে না। মারুফ সাহেব ঘুমিয়ে নেই। অপেক্ষা করছেন কখন বাচ্চারা ঘুমিয়ে যায়। তাঁর তো ঘুম আসছে না। যখন দেখলেন পুতুল দুটো গভীর ঘুমে, তখন আস্তে আস্তে স্ত্রীর শরীর থেকে রিপার হাতটা সরালেন। কোলে করে একটু দূরে নিয়ে রাখলেন। রিপা একটু নড়েচড়ে উঠল। পিঠ চাপড়ে ওর দুপায়ের ফাঁকে কোলবালিশ দিয়ে আবার ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। এবার রাহুলের কাছে এলেন। ঘুমিয়ে আছে ছেলেটা। পরনে কিছু নেই, একেবারে নেংটা। ঘুমের মধ্যে অবশ্য হিসু করে দেয় না, মাঝরাতে উঠে একবার বাথরুম করালেই চলে। মুখ থেকে লালা গড়িয়ে পড়েছে বালিশে। একটা টিস্যু পেপার নিলেন, মুছে দিলেন মুখটা। গালে একটা চুমু খেয়ে আস্তে আস্তে স্ত্রীর ডান স্তন থেকে ছেলের হাতটা সরালেন। বাম পা মায়ের ওপর তুলে কোলবালিশ বানিয়ে শুয়ে আছে। পা-টাও সরালেন। উহু, করে শব্দ করে উঠল রাহুল। পিঠে চাপড় দিতে থাকলেন মারুফ সাহেব। আবার ঘুমিয়ে পড়ল সে। এবার ওকেও কোলে করে একটু দূরে নিয়ে রাখলেন। কোনো ঝামেলা করল না। এবারে ডলিকে জাগালেন। জড়িয়ে ধরে আদর করতে যাবেন, রাহুল দিল এক চিৎকার, মা কান্না জুড়ে দিল। কান্না শুনে রিপাও উঠে বসল। দু ভাই-বোন মিলে উঠে এলো বাবার কাছে। বাবার পিঠে, হাতে কিল, ঘুষি, থাপ্পড় দিতে থাকল, আর সেই সাথে কান্না, চিৎকার। রাহুল দিল বাবার হাত কামড়ে। 

মারুফ সাহেব আর কী করবেন, একটু দূরে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লেন। বাচ্চা দুটো আবার মায়ের স্তনে হাত রাখল। আরো জোরে আঁকড়ে ধরল মাকে। তাদের অধিকার কাউকে ছেড়ে দেবে কেন!
মারুফ সাহেব অপেক্ষা করছেন, আবার চেষ্টা করবেন দুটো ঘুমিয়ে গেলে।