• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ৮, ২০১৯, ০৪:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০১৯, ০১:৫২ এএম

তিথি আফরোজের কবিতা

তিথি আফরোজের কবিতা


ফাগুণ 
হলুদ আঁচলে শরীর ঢাকিনি —
ও প্রিয় ফাল্গুন: ঢেকেছি বসন্ত, 
যে গেছো চলে—
বাগিচার পথে পথে ধূলির রেখায় রেখে
যাওয়া শিউলি, বকুল সুরভি সুর তোলে
নদীকূলে ফেপে উঠে ঢেউ…

ফাগুন এসে গেছে, এসে গেছে ফাগুন আবার
ওরে তোরা কে আছিস, দেখে যা দেখে যা
আঁচলে হাসনাহেনা, জু্ঁই, চাঁপায় লেগেছে আগুণ

ফুলের কাঁথা ফুলের বিছানায় এসো গন্ধক
গন্ধমের তলে: ফুলের মালা গেঁথে পড়াবো
যে আছে আমার প্রাণের কাছে;
আমার মতন ফাগুণবতী আর কে আছে!
চলে আয় চলে আয় গঙ্গা যমুনার ত্টে
মাখবো গায়ে বসন্তরেণু ছুটে আয় ছুটে আয়
ও সখি ফাগুণ বেলা চলে যায়…

 


বোধিবৃক্ষ

প্রেম অপ্রেমের দোলাচলে বোধিবৃক্ষের মৃদুমন্দ হাওয়া…

দেখা যায় না যায় না ছোঁয়া। হাওয়া দোলা দেয় , বৌদ্ধপূর্ণিমার রাতে
মুখরিত আলোয় মাখামাখি জোছনা নাচে, শিরশিরিয়ে নেমে যায় পদচারণা।

সিসার কলকের মতো লম্বা টানের মিষ্টি ধোঁয়া সুড়সুড়ি জমা করে 
বাম অলিন্দে। সোনার কাছাকাছি ; একটা তামাটে হাসি চোখে ঝিলিক দিলে
সূর্য ডুবে যায়।অন্ধকার হয়ে গেলে: 
আমরা ওলকচুর পাতা বিছিয়ে বিশাল আকাশে জায়গা খুঁজি
একটু জায়গা মিললেই ফুলে ফলে ভরে যেতো বন
হাড়িতে জিইয়ে রাখা মন মিঠাপানিতে 
দে দোল দে দোল…

ঝড়ের সময় আম কুড়োবো

কী করম?
দেশ দেশ কওয়া ছাড়া
আমার করণের আর কোন কাম নাই


জরিনারা গার্মেন্সে কাম করে
সেলাই মেশিনের খটখট শব্দে
ওদের বুক কাপে: যে কোনদিন
যে কোন দল এসে তাদের নিচতলায়
মিছিল করবে আর ভ্যাঙ্গা পড়বে
তাদের ছাদ


তারপর জরিনা আপনাগো
গোরস্থানের মাটির নিচে বসে
দেশ দেশ করবে।
ততক্ষণ সবুর করেন-
আইতেছে জড়িনা 
আপনাদের মরামরি খেলায়
শরিক হবার জন্যে:
জানেন না, সবুরে মেওয়া ফলে !


হাত ধরণের কাম কী?
মনে মনে কলা খাই;
বামে গেলে নাস্তিক
ডানে গেলে শিবির
এর চেয়ে মগডালে থাইকা
ঝুললু দিই: কী বলেন!
একপাশে অভাবী আমজনতা
অন্যপাশে দাঁতকেলানো চেহারা
মাঝখানে ত্রাণ, চাল, ডাল।
হাত তো ধরলাম না, কিন্তু 
কাম যা হওনের হইলোই 
হাত ধরে কী হয়?


দেশ ছাড়ন যাইবো না
বাপ দাদার ভিটা;
ধর্মকর্মও ছাড়ন যাইবো না;
ক্ষমতায় যাওনের আগে
দোয়া দরুদ পড়ে লই।


আপনারা বুদ্ধিজীবী বুদ্ধি বেঁচে খান
আর আয়েশাবিবির ধর্ষণ দৃশ্য দ্যাখেন
ডিজিট্যাল দেশ, দেখবেন না কী করবেন?
দেখা আর কর'বার সব দায়-ই আপনাগো।


আমরা হুদায় দেশ দেশ করি না-
আর বাজারের চেঁচামেচিও শুনি, 
গনিমতের মাল দরিয়ামে ঢাল:
দরিয়ামে ঢাললেই কুড়িয়ে আনবো
ঝড়ের সময় আম কুড়োবো না?


শুনতে হবে আর দেখতে হবে,
মাগার কথা বলা যাবে না;
বাব দাদার দেশ তো
দেশ দেশ কওয়া যাবে:
কী করম?
দেশ দেশ কওয়া ছাড়া
আমার তো কোন কাম নাই...


টং ঘর

টং ঘরে:
অজস্র লজ্জার সাথে দ্বিধা লেপটে থাকে
শোন, সেখানে কবুতর বাকবাকুম করে 
লোভাতুর রাতের বুকে নীল সমুদ্র জল
চাঁদের আলো পাহারায় থেকে হাই তোলে
অথচ পত্র-পল্লবের ঘ্রাণ ঘুমায় না, জেগে
থাকে কুসুম কুসুম প্রেম । লাল বালিশ 
নীল বালিশের গল্প শোনে সাথে জাগে
শিহরণ । আরও লোমশ কালো ভয়:
এক মরুভূমিতে রোমিওর রক্ত; কাটা মস্তকে
আফ্রোদিতির পেলব ছোঁয়া। 
জুলেখার উৎকন্ঠায় এজিদের চিৎকার শুনে
উড়ে যায় চোখের অশ্রু।

আরও একবার ব্যাবিলনের উদ্যান পুড়ে যাক
ধ্বংস হোক পম্পাই নগরী; 
এসো, আমরা আবার বৃষ্টিতে ভিজি।

তোমার বুকের মধ্যে যেখানে মন আছে
তার ভেতর  খড়কুটোর একটা টংঘর
এত যত্নে লুকিয়ে রেখেছো যে চড়ুই
সেও শুধু তোমাকেই খোঁজে
যেভাবে নিজের চোখ দেখা যায় না নিজে। 

আবার একটা ঝড় আসুক
নার্গিস অথবা  আইলা । 
জলোচ্ছ্বাস ডুবে ডুবে ঠিকই 
ঘুমিয়ে যাবো তোমার মনের টংঘরে।
তুমি বেশ ভালোই জানো:
অনন্ত ঘুমের নামই প্রেম।

#মনের ভেতর চুমু # এক #

হৃদয়ে চুমুর গন্ধ মেখে ঘুমিয়ে গেছে বিকেল
সমস্ত অন্ধকার জেগে আছে শেফালির ডালে।
এতসব বিস্মৃতি ফাগুন রঙে
জানে না তৃণলতাদের মিছিল।
প্রেইরি বনের বাতাসের রিনিঝিনি ছোঁয় না বিকেলি 
সুবাসে জেগে থাকে রাত, জেগে থাকে দিন 
শেফালি ফুলের বুকের ভেতর শুভ্র প্রেম
রাতের বাতাসে তার সুঘ্রাণ, 
সুঘ্রাণে বয় চুমু...
বুকের ভেতর চুমু দিয়ে যায় যে সব বাতাস,
তারা জানে—কতটা আগুনে কৃষ্ণচূড়া লাল হয়।
দ্বীপের অন্তরে কতোটা জল!
সময় পেরলে ঝরে যেতে হয়, শেফালি জানে; 
তবু জমা রাখে মধু 
উড়িয়ে দেয় বুকের ভেতর চুমু
যার নামে উদয় হয় তার সূর্য
তার তরে।