• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১২, ২০১৯, ০৮:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১২, ২০১৯, ০৮:৫০ পিএম

‘রবীন্দ্রনাথ তৈরির পেছনে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য’

‘রবীন্দ্রনাথ তৈরির পেছনে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য’
প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ও কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ-ছবি : জাগরণ

রবীন্দ্রনাথ তৈরির পেছনে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)’র উদ্যোগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে  রোববার (১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ মিলনায়তনে বিশেষ বক্তৃতানুষ্ঠানে মূল বক্তার ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের সভাপতিত্বে এবং সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়নের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক, কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন। 

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, দেবেন্দ্রনাথ জমিদারি দেখতে পাঠালেন রবীন্দ্রনাথকে এপারের বাংলায়। একটানা ১১ বছর বাংলাদেশে ছিলেন। এই সময়ে নতুন করে রবীন্দ্রনাথ তৈরির পেছনে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। কৃষকদের কাছে তিনি অনেক প্রিয় হয়ে উঠছিলেন। এ সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ কৃষকদের স্বাক্ষরতা অর্জনের জন্য নৈশ বিদ্যালয় গঠন উন্নয়নের জন্য সমবায় প্রথা চালু করেছিলেন বলে মন্তব্য করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এশিয়ার মধ্যে প্রথম কৃষি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নোবেল পুরস্কারে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তিনি ১৯২০ সালে কৃষি ব্যাংক গড়ে তুলেন। যেই রবীন্দ্রনাথ কৃষকের বন্ধু, সেই রবীন্দ্রনাথ আমাদের এখন দরকার। আরেক রবীন্দ্রনাথ আমাদের বেশি মাত্রায় দরকার, যে অত্যচারী, শোষক, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে। আমাদের সেই রবীন্দ্রনাথ দরকার, যে দেশকে, মাতৃভাষাকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন। প্রচলিত ধর্মের বাইরে গিয়ে মানবধর্মকে বড় করে দেখেছেন।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ মুসলিমদের নিয়ে কম লিখেছে বলে প্রশ্ন হয়। ভারতবর্ষের হিন্দু কেবল ভারতবর্ষের সংস্কৃতির মালিক। জন্মসূত্রে এ অঞ্চলের যা কিছু আছে তার সে মালিক। কিন্তু মুসলিম জন্মসূত্রে সবকিছুর মালিক হলেও ধর্মসূত্রে পশ্চিম এশিয়ার সংস্কৃতির মালিক। তার মানে হিন্দুর চাইতে বাঙালির মুসলিম ঐতিহ্যের ব্যাপকতা অনেক বেশি সমৃদ্ধশালী। যার কারণে নজরুল যা পারেন (মুসলমানদের নিয়ে লেখা) তা রবীন্দ্রনাথ পারেন না। এটা বাস্তবতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধিতা করার প্রশ্নে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে স্বাভাবিকভাবে দেখেননি কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু এলিটরা। ব্রিটিশ উপনেবিশক শক্তি বুঝেছে, কলকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু রক্ষণশীলরা তাদের বিরুদ্ধে এক হওয়া শুরু করেছে। সুতরাং ভারতবর্ষে আরও কয়েক বছর টিকে থাকার লক্ষ্যে মুসলমানদের ‘পেট্রোনাইজের’ অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদালয় প্রতিষ্ঠা পায়। ১৯১২ সালের ২৭ মার্চ কলাকাতার এক বক্তৃতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন বলে শোনা যায়। কিন্তু কলকাতার ‘রাইটার্স র্আকাইভস’ এ সেই দিনের ফাইলে এই ‘তথাকথিত’ সভার জন্য কোনো অনুমোদন দেয়া হয় নি। অর্থ্যাৎ ২৭ মার্চ কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া ২৭ মার্চ তিনি কলাকাতায় নয়, আমাদের শিয়ালদহে ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করতেন, তাহলে এর প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় তাকে বক্তৃতা দেয়ার জন্য আহ্বান করতেন না। সেই সময় তাকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের আজীবন সদস্য করা হয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সামাদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ তারুণ্যের কবি, তিনি সর্বদা তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। ভারতবর্ষের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিক্ষা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ সবসময় চর্চা করতেন। রবীন্দ্রনাথ আমাদের কাছে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক তাই প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি।

তিনি আরও বলেন, রবীন্দ্রনাথের জীবনাদর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাব, এই হোক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকীতে আমাদের সকলের অঙ্গীকার।

অনুষ্ঠানে ডাকসু ও বিভিন্ন হল সংসদের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমআইআর/এসএমএম