• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২৫, ২০১৯, ০৫:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২৫, ২০১৯, ০৮:১৯ পিএম

সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহনে উদযাপিত নজরুল জয়ন্তী

সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহনে উদযাপিত নজরুল জয়ন্তী
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, হল সংসদ, শিক্ষক সমিতিসহ ছাত্রছাত্রীরা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান -ছবি : জাগরণ

সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহন আর অসাম্প্রদায়িক সাম্যবাদী মানবতার বাণী উচ্চারণের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সাম্য, প্রেম আর অবিনাশী দ্রোহী চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। 

শনিবার (২৫ মে) নজরুল জয়ন্তীতে সরকারি আয়োজনের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যাপক বর্ণিল আয়োজন ছিল এবারও। জাতীয় পর্যায়ে নজরুল জয়ন্তী প্রধান আয়োজন ছিল স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহের ত্রিশাল, দরিরামপুর, কুমিল্লা, দৌলতপুর ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন।

ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় কবির সমাধি 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে কবির সমাধিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। একটানা পাঁচ ঘন্টাব্যাপী শ্রদ্ধার্ঘে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় জাতীয় কবির সমাধি।

কবির ১২০তম জয়ন্তীর দিনে (শনিবার) সকাল সাড়ে সাতটায় সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে রাজধানীতে কবির জন্মবার্ষিকী পালনের সূচনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ জাতীয় কবির সমাধিতে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে সকাল সোয়া সাতটায় পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জমানসহ শিক্ষক ও কর্মচারীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, হল সংসদ, শিক্ষক সমিতিসহ ছাত্রছাত্রীরা কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

পরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করে কবির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। একটানা দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কবির সমাধিতে জন্মবার্ষিকীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের উদ্যোগে সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিতত্ব করেন ঢাবি উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

সমাধিতে অন্যান্য যে সব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়, সেগুলো হচ্ছে- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আওয়ামী লীগ, মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুব লীগ, ছাত্রলীগ, বাংলাদেশের কমিউিনিষ্ট পার্টি, বাসদ, বিএনপি, জাসদ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, জাতীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর , নজরুল ইন্সটিটিউট, নজরুল একাডেমি, মানিকগঞ্জ সমিতি-ঢাকা, ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্র , জাতীয় কবিতা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু কবিতা পরিষদ, কবি সুফিয়া কামাল হল, সূর্যসেন হল, রোকেয়া হল ছাত্রী সংসদ, ডাকসু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদ, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সংসদ, এফ রহমান হল ও ঋষিজ।

নজরুল চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘নজরুল চেতনায় বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’

সকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শোভাযাত্রাসহকারে কবির সমাধিতে যান এবং কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উপাচার্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার, সম্প্রীতির, সাম্যের ও মানবতার কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তিনি সবসময় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ও অসাম্যের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদী ছিলেন। তার লেখা গান, কবিতা, গল্প ও উপন্যাস আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সকলকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন এবং ঢাবি নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল।

অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ এনামউজ্জামান। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী), খায়রুল আনাম শাকিলসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

ছায়ানট 

রাজধানীর ধানমণ্ডির ছায়ানট ভবন মিলনায়তনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্রে ছিল ছায়ানটের উদ্যোগে নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সম্মেলক গানের মধ্য দিয়ে। ছায়ানটের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘জাগো অমৃত পিয়াসী চিত’। এরপর নজরুল কথনে অংশ নেন ছায়ানটের সহ-সভাপতি খায়রুল আনাম শাকিল।

এরপর শুরু হয় একক গান ও আবৃত্তির পালা। শুরুতেই একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন সুপ্তিকা মণ্ডল। তিনি গেয়ে শোনান, ‘আকাশে ভোরের তারা’। এরপর মণীষ সরকার শোনান ‘ওগো অন্তর্যামী, ভক্তের তব শোন’। মোহিত খান শোনান ‘তুমি যতই দহনা দুখের অনলে’, ঐশ্বর্য সমদ্দার ‘খেলে নন্দের আঙিনায় আনন্দ দুলাল’, লায়েকা বশির ‘অন্তরে তুমি আছো চিরদিন’, তানভীর আহমেদ ‘কাল্‌মা শাহাদতে আছে খোদার জ্যোতি’, শ্রাবন্তী ধর ‘ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায়’, বিটু কুমার শীল গেয়ে শোনান  ‘স্বদেশ আমার! জানি না তোমার’। নজরুলের রচনাবলী থেকে পাঠ করেন সুমনা বিশ্বাস ও জয়ন্ত রায়।

আওয়ামী লীগ

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের অবদান সকলেই মনে রাখবে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম সব সময় তার লেখনির মধ্যদিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিয়েছে। তিনি সব সময় কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতার বিরূদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলামের চেতনাকে ধারণ করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়েছি। 

সকালে জাতীয় কবির ১২০তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবি সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মোহাম্মদ আবু কাওছার, ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর জিএস গোলাম রব্বানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হানিফ বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। তিনি সব সময়ই তার লেখনি গল্প-কবিতা মধ্যদিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার বার্তা দিয়েছেন। তিনি সব সময় কুসংস্কার এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ছিলেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই চেতনাকে ধারণ করেই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গড়ে তুলেছি। এবং সেটাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।

তিনি আরও বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলকাতা থেকে বাংলাদেশের নিয়ে এসেছিলেন ১৯৭২ সালে এবং জাতীয় কবি হিসেবে তাকে মর্যাদা দিয়েছিলেন।

অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে কবির অবদান স্মরণ করে হানিফ আরও বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের সকল মানুষের কাছে স্মরণীয়-বরণীয় এবং অনুকরণীয় হয়ে থাকবেন। অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে তার এ অবদান সকলেই মনে রাখবে।

এসএমএম