• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ৮, ২০১৯, ০৬:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ৮, ২০১৯, ০৬:৪৯ পিএম

মানিক মানবিকের কবিতা

মানিক মানবিকের কবিতা

তোমায় ছাড়া রত্তিও বাঁচবো না

আমি যখন বলছি চলে যাও,
তুমি দ‍্যাখো আমার নিষ্ঠুরতা;
আমার কান্না তোমার চোখে নাও,
তোমার বুকে আমার আকুলতা।

আমি তো চাই; কেউ তো বসে থাকুক,
গা লাগিয়ে; আমার পায়ে পা,
এই দুপুরে একটি ঘুঘু ডাকুক,
একটি চুমু ঠোঁট মাড়িয়ে যা!

একটি দোয়েল শিস দিয়ে যাক বনে,
একটি গোলাপ ফুটুক তোমার বুকে,
চাঁপাকলি চাপুক আলিঙ্গনে;
যৌথখামার কর্ষিত হোক সুখে।

কর্ষিত সুখ ছড়িয়ে দিলো মায়া
দয়ায়-মায়ায় তুমি মায়াবতী;
মায়াবতীর সমর্থিত জায়া,
অসহায় ভ্রূণ পেয়েছে সম্মতি।

ভ্রূণ পেয়েছে তোমার ভালোবাসা,
জননীরূপ জায়ার আবিষ্কারে;
জনক হবার স্বপ্ন বিভোর চাষা,
বৈধ কিংবা অবৈধ ফুৎকারে।

কথার কথা; যাওনা চলে যাও,
হৃদয় কথা; কোত্থাও যাবেনা,
হারান মাঝির ময়ূরপঙ্খী নাও,
তোমায় ছাড়া, রত্তিও বাঁচবো না।

 ছোটো-বড়ো

আমি বড়ো হতে চাই; অনেক বড়ো,
‌অনেক অনেক বড়ো
‌ফুটে গজে, পদে হস্তে;
‌দৈর্ঘ্য প্রস্থে, সূর্যে অস্তে-
‌সেটা পাহাড়ের সমান হতে পারে।

‌যদি আমি কট্টর জাতীয়তাবাদী হই;
‌তাহলে কেওকারাডং হবো।
‌আর যদি বিশ্ব নাগরিক হই; ‌হবো হিমালয়-
‌মানুষ-জমি-মরুভূমি ছাড়িয়ে আকাশময়।


‌‌কিংবা সাগর হতে পারি; বঙ্গোপসাগর
‌অথবা মহাসাগর; আটলান্টিকের মতো বড়
‌যেখানে অনায়াসে টাইটানিক হারিয়ে যায়;
‌সাবমেরিনরা যুদ্ধে মাতে দিনের পর দিন; 
‌বিশ্ব অর্বাচীন।

‌চেষ্টা করলে আকাশ হতে পারি; মহাকাশ
‌গ্ৰহ-তারা-নক্ষত্র আর গিজগিজে ছায়াপথ 
‌লক্ষলক্ষ হাজার কোটি আলোকবর্ষ গুনবে; 
‌চাইলেই মহাবিশ্ব হবো; ভূত-ভগবান খুঁজবে।

‌কিন্তু জগদ্দল মন আমার 
কিছুতেই বড়ো হতে চায় না;
‌কারোর কোন ছলেবলে; যেনতেন ফোকর গলে
‌কারণ আমি বড়ো হলে; ইট্টুখানি বড়ো হলে
‌পা-গোড়ালিও বড়ো হবে
‌আমার জুতো ছোটো হবে
‌আড়ালে সাক্ষাতে !

 

গুপ্তপ্রণয়

আমি ছোট নদী হবো
নদীর জলে  নাচছে কচুরিফুল;
ফুলের নিচে তাকিয়ে থাকা মৎস হবো
মাৎসর্যে মশগুল।

শীতের ভোরে শিশির হবো
ঘাসের গায়ে টলটলে এক সিন্ধু;
জারুল ডালের শান্তপুকুর আমি
দুপুর বিন্দুবিন্দু।

মাছরাঙার একবিকেল আমি
জলের চোখে চোখ রেখেছি জল;
মৎস শিকার অনভিপ্রেত
দৃষ্টি বিহ্বল।

দূর আকাশের তারা আমি
তারায় তারায় রটিয়ে দেয়া প্রেম;
ভালোবাসায় আস্থা রেখো
গুপ্তপ্রণয় তোমাতে রাখলেম।


বুড়ি চাঁদও তরুণী হয়

ভুল রেখে গেলাম ধরার অপেক্ষায়;
ভুল ধরলে ভূলুণ্ঠিত হ‌য়না চাঁদ
থামেনা ঝর্ণাধারা, থামেনা প্রপাত
কলঙ্কের এই চাঁদমালা বুঝি; 
শুধু চাঁদকেই মানায়।

কেননা এইসব টিপিক্যাল ভুল চাঁদকে জানায়
ভুল-নির্ভুল খেলা সব; বোঝা না বোঝায়
ছিদ্রান্বেষণ একটি শব্দ মাত্র; জব্দ ঘরানায়
অত‌এব 'ভুল' রেখে যাই; ওহে শোন অসহায়-
তোমার ধরার অবলম্বন এই 'ভুল' তোমাকেই মানায়।

নির্ভুল চাঁদ ওঠেনি কোনদিন; কোন জানালায়
ঝুলে থাকা অমাবস্যা; ভুলের খতিয়ান জানায়
সংশোধনের তাড়া নেই কোন;
বুড়ি চাঁদ‌ও তরুণী হয়‌ একদিন; 
সময় বহিয়া যায় অবিরাম; সময়ের পথ পরিক্রমায়।


 আলো আঁধার

আলোটুকু তোমায় দিলাম
অন্ধকারের অশেষ আমার কাছে।
যে আঁধারে ডুবছে অন্ধকার
পতিত আলো কোমল গান্ধার।

সুখের অসুখ অশিক্ষিত অভ্যাস
এসব অনেক পুরোনো আর প্রাচীন;
অভ্যস্ত দায় একাকীত্বে ভোগে
তবু দায়ী জোগায় অনুপ্রাস।

তুমিই আলো পতঙ্গকুল জানে
কীটপতঙ্গের শানিত সম্ভোগ;
মানুষ কি আর শকুনের সংজ্ঞায়
নিজেই নিজের কাছে ফিরতে পারে?

তথাকথিত আলো অন্ধকারের
পরিসংখ্যান এবং ভালো মন্দ;
কি এসে যায় তুমিই গনিতবিদ
দৃষ্টিভঙ্গির বাহাস অফুরন্ত।

তারচেয়ে বরং অন্ধকার‌ই ভালো
আলোটুকু তোমার কাছেই থাক;
আলো আঁধার দাঁড়িয়ে পৌনঃপুনিক
অশেষ আঁধার আয়নাতে নির্বাক।


হিসেবে নিকেশ

আমি অনেক হিসেব করি; 
হিসেব করে তুলে রাখি
জমা রাখি; জমিয়ে রাখি
বুকের গোপন টালিখাতায়-
অবহেলা, হেলাফেলা,
তুচ্ছ করা, ঘেন্না করা; 
অপমানে অপমানে; অবিরত ছোট করা
হিসেবে করে লিখে রাখি; 
জমা-খরচ-ইজা খাতায়
জল টলমল চোখের পাতায়;
আমি অনেক হিসেবী তাই
বুকের ক্ষরণ, বুকেই রাখি।

জানি তুমি বেহিসেবি
অত কী আর মনে থাকে;
কতশত  প্রত্যাখ্যান আর কত ভরি ঘৃণা দিলে!
এড়িয়ে যাওয়া, বেরিয়ে যাওয়া
উড়িয়ে দেয়া, ফুরিয়ে দেয়া;
এসব শুধুই তোমায় মানায়-
আমি অধম আঁস্তাকুড়ে; অবনত; বিরহীত
তোমায় দেখি; তোমায় দেখি
প্রগলভ  অহংকারী, নিস্পলকে তোমায় দেখি
জমা-খরচ-ইজা খাতায়
নিজের পতন টুকে রাখি
আমি অনেক হিসেবী তাই
বুকের ক্ষরণ বুকেই রাখি।

শীতের সকাল, উষ্ণ দুপুর, 
বুকের সমান পদ্মপুকুর
আনন্দচোখ; ছলছল
কত্তকিছু তোমার ছিলো...
আজো আছে; আজো আছে
আগের যত; আগের মত
তুমি শুধু বদলে গেছো; বন্টনে আর উৎপাদনে
ব্যক্তিগত এখন তুমি সাম্যবাদী; সাম্যবাদী
আমার সত্ত্বা; আমার সাম্য; লুটায় ধুলায়
অবহেলায় অবহেলায়...
খেলারামরা যাচ্ছে খেলে; 
ভূতের মত আমায় দেখায়
আমি অনেক হিসেবী তাই
আমার হিসেবে কলম খাতায়;
চোখের জমি মরুভূমি
বুকের রক্ত চোখের পাতায়।