• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১০, ২০১৯, ০৬:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১০, ২০১৯, ০৬:৫৮ পিএম

এ সপ্তাহের গল্প

স্বীকারোক্তি

স্বীকারোক্তি

পর্ব ১

এহ্ এতো ঘিন ঘিনে সত্য কথা শোনার মতো মনের জোড় আছেতো আপনার? এই যে আপনাকে বলছি, নইলে দূরে সরে যান। হয়তো সহ্য হবেনা, পারবেন না কদর্যে ভরা কথাগুলো পাঠ করতে। জীবন সুন্দর এটা যেমন সত্য, জীবন কুৎসিত এটাও সত্য।

আনন্দ, ঐশ্বর্য আবার সবার জীবনে আসে না। কারো কারো আসে এবং আমার জীবনেও এসেছে। আমি একই সঙ্গে সৌভাগ্যবান আবার দুর্ভাগা। আমি আযহার শামস্ পনির, আদর করে বাড়ীর সবাই আমাকে পনির নামে ডাকে কেননা আমি বাড়ীর ছোট ছেলে।

অনেক ভেবে চিন্তে ঠিক করেছি আমার কথাগুলো বলেই ফেলবো। সময়ের অলি গলি পেরোতে পেরোতে আমি  জেনেছি ভয়ংকর কিছু সত্য, দেখেছি মিথ্যের প্রসাধনে সত্যের পোশাকী রুপ। আমার মতো করে কেউ কেউ হয়তো জেনেছে রুঢ় বাস্তবতাকে। জানতে চান? আপনি প্রস্তুত তো?

পর্ব ২ 

হু আমি আযহার শামস্ পনির একজন দেহ ব্যবসায়ী, আমি গতর বেঁচে খাই। আপনার শুনতে ভালো লাগছে না তো? পুরুষ আবার বেশ্যা হয় কি করে, তাই না? হয় সত্যিই হয়।আমি আযহার শামস্ পনির তার প্রমান। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমি ক্যামন করে এ কাজে জড়ালাম তাই তো? এ পেশা আমি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছি।

প্রথম যখন আমি আমার ভার্জিনিটি হারাই তখন আমাকে প্ররোচিত করা হয়েছিলো। ইংরেজীতে একটা শব্দ আছে না সিডিউস করা সে রকম আর কি। আমরা তখন একটা তিনতলা বাড়ীর নীচ তলায় ভাড়া থাকতাম। দোতালার ভাবী আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে এক প্রকার জোড় করে বিছানায় যেতে বাধ্য করেন। তখন আমার বয়স মাত্র তেরো। কিইবা বুঝতাম ? ওনার স্বামী বিদেশ থাকতো, ওনার শরীরের ক্ষুধা মেটাতে আমাকে ব্যবহার করেছিলেন সেদিন। তখন বিষয়টা রোমাঞ্চকর মনে হতো কিন্তু এখন ভাবলে অস্বস্তি হয়।

তবে সত্য হচ্ছে মহিলা বা পুরুষ যে কারোই শরীরের ক্ষুধা বা  চাওয়া একরকম শুধু প্রকাশটা ভিন্ন। আমাদের এখানে মেয়েরা যেহেতু শত শত বছর ধরে নিয়ন্ত্রনের শিক্ষা পেয়ে আসছে তাই ওরা ভেবেই নেয় ওদের চাওয়া সীমিত। যা হোক আমি দেখতে সুন্দর, লম্বা এবং গায়ের রং উজ্জল শ্যাম বর্নের, চোখ দুটোও খুব আকর্ষনীয় এ কারনেই কিনা ছোটবেলা থেকে নানারকম অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি।

পর্ব ৩

মানুষ মাত্রই সুন্দরের পূজারী কিন্তু সকলেই তো আর সুন্দর হয়না অন্তত বাহ্যিক দিক দিয়ে। রুপের ঘাটতি যাদের থাকে সে মানুষেরা হয়তো গুন কিংবা মেধার সৌন্দর্যে অন্যকে আকৃষ্ট করে। আমি আমার রূপসী মায়ের মুখের গড়নটা পেয়েছি এবং সঙ্গে পুরুষালী সৌন্দর্য মিশে অন্যরকম মাত্রা যোগ হয়েছে, আমি হয়ে গেছি ভীষন যৌন আবেদনময়। আমার রুপটাই হয়তো আমার কাল হয়েছে। আমি অতি রুপবান না হয়ে যদি দেখতে সাধারন হতাম তবে হয়তো জীবনটা অন্যরকম হতো। তবে আমার কোনো আফসোস নেই তাতে। 

আমি বড় হতে হতে ভীষন কিছু মন্দ কাজ করেছি ভাবলে এখন খারাপ লাগে, যেমন আমাদের বাড়ীতে কোনো কাজের মেয়ে বেশিদিন থাকতে পারতো না আমার যন্ত্রনায়। যেহেতু কাজের লোক তাই বাইরের বারান্দায় ঘুমোতো দেয়া হতো, আমি গভীর রাতে জেগে উঠে ওদের বুকে কিংবা গোপনাঙ্গে হাত বুলাতাম। ঘুমন্ত মানুষটা হুড়মুড় করে উঠে পড়লে আমি চোখের নিমিষে নিজেকে আড়াল করে ফেলতাম।

 আমি তখন কিশোর, নারী দেহ নিয়ে আমার অপার আগ্রহ কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় যেহেতু যৌনতা বিষয়ে কোনো শিক্ষাই দেয়া হয় না তাই বয়োসন্ধিকালের আমি এ বিষযটাকে উপভোগের মনে করতাম অারেকজনকে কষ্ট দিয়ে। অন্যদিকে আমিও নিগ্রহের স্বীকার হয়েছি প্রথম যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। তখনো আমাদের গ্রামে ইলেকট্রিসিটি ছিলো না, এক সন্ধ্যায় আমার আপন মামী আমাকে অন্ধকার একটা ঘরে টেনে নিয়ে নিপল চুষতে দিয়েছিলো। আমি ভাবলে এখনো হতবাক হই, কাউকে বলিনি রখনো সে কথা, তবে নারী বা পুরুষ যে কেউই আসলে বিকৃত যৌনরুচির হতে পারে।

পর্ব ৪ 

ইয়ে মানে অস্বত্বি হচ্ছে বলতে তবু বলছি আমি কলেজে পড়ার সময় কিন্তু আমার আপন খালাতো বোনটাকে প্রায়ই
যৌন ক্ষুধা নিবৃত করার জন্য ব্যবহার করতাম। প্রথমে ভুলিয়ে ভালিয়ে ওকে ওদের ছাদের চিলেকোঠায় নিয়ে যেতাম তারপর পটানোর পর্ব শেষে কাজ হাসিল করতাম। মেয়েটা কাঁদতো তবু আমার মায়া হতো না, আমি এমনই নিষ্ঠুর প্রকৃতির। বীর্যস্খলন শেষে বিজয়ের হাসি হেসে ঝটপট নীচে এসে খালার আদর যত্ন গ্রহন করতাম।
বোনটা আমার চেয়ে তিন বছরের ছোট ছিলো। ও জানতো আমাদের মধ্যে প্রেম তাই এমন করত হয়, কিন্তু আমি তো তাৎক্ষনিক প্রয়োজনে ওকে ব্যবহার করতাম শুধু। খুব একটা রুঢ় কিন্তু সত্য একটা কথা জেনে রাখুন মেয়েরা কারো কাছেই নিরাপদ নয়। আপন বাবাও যেখানে নিজের কন্যাদের যৌন সম্ভোগের দাসী বানিয়ে রাখে এমন ঘটনা খুব বিরল নয়। 

তবে বয়োসন্ধিকাল পেরিয়ে আমি যখন তরুন তখন থেকে বুঝেছিলাম আমার ক্ষুধাটা বেশি তাই প্রেমের সম্পর্কে জড়াইনি আর। খালাতো বোনটাকে বুঝিয়ে মানিয়ে অন্যত্র বিয়ে করতে রাজি করাতে পেরেছিলাম। ও ভালোই আছে এখন, তবু পাগলামী করতে চায় বলে আমাকে নাকি এখনো ভালোবাসে কিন্তু আমিতো  ওকে ভালোবাসিনি কোনোদিনও।

পর্ব ৫ 

নিজে প্রেমে পতিত হইনি কিন্তু প্রেমের ফাঁদে ফেলেছি বেশ কয়েকজন মেয়েকে। আমার চতুর মগজ, কিছু সূত্রমতো এগোতো এবং লক্ষ্য ধরাশায়ী হয়ে একেবারে আমার সীমানায় পৌঁছে যেতো। নিজের পারঙ্গমতায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে যেতাম। সুন্দরী এবং আবেগী বোকা মেয়ের দল কত টাকাই না খরচ করতো আমার জন্য। আমি নিজের ভেতরে কুৎসিত উল্লাস বোধ করতাম ওদের নিশ্চিত পরাজয়ে।

সূত্রগুলো শুনুন, জেনে রাখুন

এক. ধনী পরিবারের রুপসী মেয়ে।
দুই. সে আমার একটিমাত্র সাধনা এটা প্রমান করা।
তিন. আমার জীবন দুখে ভরা এবং আমি সৎ এই বিষয়টা প্রতিষ্ঠা করা।

বিশ্বাস করুন এই সূত্রে আমি সকল মেয়েকেই ঘায়েল করতে পেরেছি যাদেরকেই চেয়েছি। মেয়েদের মন কোমল হয়, ওরা অন্যের কষ্টে ব্যথিত হয় সহজেই। আমার এসব জয় নিয়ে 
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো ভালোই কাটছিলো। হঠাৎ এদের মধ্যেই একজন আমার অভিনয় বুঝতে পারে এবং ভীষন অভিমানে আত্মহত্যা করে। আমি বেঁচে যাই সে যাত্রায় কিন্তু এরপর আর থেকে এমন প্রহসন করিনি। তার বদলে বেশ্যাবৃত্তির পথ খুঁজে নিতে শুরু করি।
পর্ব ৬
আমার এক আত্মীয়র বিয়েতে গিয়ে পরিচিত হই মিসেস আদনান এর সঙ্গে। মহিলা সুন্দরী কিন্তু নিঃসঙ্গ, ব্যস্ত স্বামী এবং সন্তানরাও বড় হয়ে গেছে তাই ঘরেও বিশেষ কাজ নেই।পার্টি করতে করতে ক্লান্ত বোধ করেন, জীবনে কোনও রোমাঞ্চ নেই।এমন অবস্থা আঁচ করতে পেরে আমি তার রূপ নিয়ে প্রশংসা শুরু করি, জানতে চাই তার রূপ লাবণ্যের রহস্য। আলাপচারিতার গভীরে যেতে যেতে একটা নিমন্ত্রন আদায় করে নেই।

মিসেস আদনান আমার প্রথম খদ্দের হলেন, আমি প্রচুর টাকা পেতাম তার কাছ থেকে, আমি ভাবতাম টাকার বিনিময়ে আমি তার শয্যাসঙ্গী হয়েছি। সমস্যা বেধে গেলো যখন মহিলা আমার প্রতি অনুরাগ বোধ করা শুরু করলেন, বিয়েও করতে চাইলেন। কি বিপদ ! মেয়েরা সবসময় কেনো আকঁডে ধরতে চায় সবকিছু। নিরুপায় আমি তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হলাম। তবু থেমে থাকেনি আমার পথ চলা।

নতুন নতুন সূত্র তৈরি করে আমি এগোতে থাকলাম আমার পথে। ভালো এবং মন্দ সব মিলিয়ে আমার দেহ ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করলো। শয্যায় একজন নারীকে পরিতৃপ্ত করতে কি ছলা কলার প্রয়োজন সব কিছু রপ্ত করতে শুরু করলাম।কাজ করতে করতে আমি জেনেছি আমার খদ্দেরদের আক্ষেপ, তাদের স্বামীরা রতিক্রিয়ায় কতোটা অপারগ কিংবা স্বার্থপর। আমি আরো ভালো পারফর্ম করার জন্য বই পড়তাম , মুভি দেখতাম, এমনি করে আমার কাজে আমি সেরা হয়ে গেলাম। অনেক বেশি টাকা নিয়ে তবেই বায়না নিতে লাগলাম।

পর্ব ৭ 
আযহার শামস্ পনির আমার নাম এবং আমার এই জীবনের অনেক কথাই ব্যক্ত করলাম আপনাদের কাছে।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবনাগুলোও পরিনত হয় তাই জানি ও মানি কতো পাপে তাপে পূর্ন একটা প্রাণ আমি। মানুষের কতো ক্ষতি করেছি আবার কিছু মানুষকে আনন্দও দিয়েছি। অনেক আগেই বুঝেছিলাম এক শরীরে আমার জৈবিক ক্ষুধা নিবৃত হবে না তাই সম্ভোগের পথ খুঁজে নিয়েছি। বিয়ে করিনি কারন এটাও আমি জানতাম বন্ধন আমার জন্যে নয়।

মানুষ কি সত্যি বহুগামী নয়? নইলে আড়ালে আবডালে মানুষ কেনো এতে সুযোগ করে নেয়, অন্যত্র সম্পর্ক স্থাপন করে? সমাজ সংসার আমাদের শেখায় নৈতিক হতে, মনেগ্যামী হতে, এটাই জীবনের আদর্শ ধরে নিতে। আমি দার্শনিক নই তবে এই ভাবনাগুলো আমার হয়। নিজের অধিকতর যৌনক্ষুধা কোনো মানসিক রোগ কিনা তাও ভেবেছি কিন্তু কারো কাছে পরামর্শের জন্য যাইনি কখনো।

শুধু সৌন্দর্য দিয়ে মানুষকে বিচার করা ভুল, আমার রুপে মুগ্ধ হয়ে কতো মেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি একজন আপাদমস্তক স্বার্থপর, ভোগবাদী জেনেও আমার দুইজন খদ্দের আমাকে ভালোবেসে সন্তানও নিয়েছেন স্বেচ্ছায়। জানি না মানুষের মন বড় অদ্ভুত এবং জটিল। আমি অর্থে বিত্তে সত্যি অনেক মানুষের চেয়ে ভাগ্যবান। একি শুধু আমার রুপের কারনে? এটা আমার জীবনের অমিমাংসিত প্রশ্ন। তবে সত্যি হচ্ছে আমি ভীষন মন্দ এবং তা স্বীকার করি অকপটে এটাই আমাকে ভেতরে শান্ত রাখে।