• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০১৯, ০৭:১৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৬, ২০১৯, ০৭:২৫ পিএম

কাজী নুসরাত শরমীনের কবিতা

কাজী নুসরাত শরমীনের কবিতা

উড়ে যায় কর্পূরের ঘ্রাণ

শহরের ট্রাফিক কখনো তোমার আমার
যাত্রাবিঘ্ন করেনি,
দীর্ঘ যানজটেই জমে উঠে গল্প
আমরা তো গল্প করতেই বেরিয়েছি!
সময়কে বেড়ি পরাইনি কখনো
ওই জামাটাই কিনতে হবে
ওখানটাতেই যেতে হবে
অমন করেই চলতে হবে
এমন নানাবিধ হওয়া না হওয়ার
বাধ্যবাধকতায় অতিষ্ঠ হই,
জীবনকে এমন প্রশ্রয় দেইনি তো!
তবু দীর্ঘ পথ যেতে যেতে
রাস্তার নুলো ভিখিরিও
‘কোন স্বপ্নে প্রতিদিন ঘুম থেকে জাগে’
সেটাই তোমার আমার গুরুত্বপূর্ণ গল্প।

হাওয়াই মিঠাইঅলা রোজ কতো কাঠি
মিঠাই বিক্রি করে,
আর তাতে কতো টাকা আয় হয়,
তার বাড়ি ভাড়া কতো,
গলায় ঝোলানো রঙিন মাফলারের মতো
তার ঘরে কোন রঙিলা 
অপেক্ষার প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে,
এমন নানাবিধ ‘জটিল’ বিষয়ে
তোমার আমার কী তুমুল তর্ক!
জীবন কী হাওয়াই মিঠাই?
নইলে এতো দ্রুতো ফুরায় কেনো?
বড় বিচিত্র আমাদের জীবনাচরণ
হাসপাতালের লবি এখন ড্রইং রুম
লোকাল বাসে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি
রাত জেগে সময়কে পাহারা দেয়া
‘লাশবাহী’ ফ্রিজিং গাড়িতে মৈনট ঘাট
যেতে যেতে , এ গাড়িতে যাত্রা কতটা আরামদায়ক
তা জেনে বুঝে নেয়া.......

জীবনের এতো কলরব
সব তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ে
তোমার আগ্রাসন,
চক বাজারের ভেলভেট টিপও
তোমার তত্ত্বাবধান
প্রাণের এতো প্রাচুর্য, প্রিয় পথ, লাল শাড়ি
দীর্ঘ যানজট, তবুও প্রেমের তুমুল তাণ্ডব
মিঠাইঅলার রঙিন মাফলার,
জীবনের এতো এতো অয়োজন
একদিন দপ করে নিভে যাবে !
সেদিনও কি তোমার গল্পে আমি অনিবার্য হবো ?
নাকি কর্পূরের ঘ্রাণ তোমার অসহ্য বলে
মাটিচাপা দেবে আমার অধ্যায় ।
হায় তারার কবি !
‘জীবন এতো ছোট কেনে’

মৌনতা


শব্দের এমন কী শক্তি
আমাদের মাঝখানে সেতু হয়,
মৌনতা তার চেয়ে ঢের ভালো
এসো আজ করি তার চর্চা।

এক কথা বকি যদি রোজ রোজ
একই চিঠি ফেলি ইনবক্সে,
অপেক্ষা হবে জেনো চুরচুর
একঘেয়ে মেনিমুখো শব্দে।

তার চেয়ে শান দেই দু'চোখে
দৃষ্টির বাণে হও জেরবার,
ঝর্ণার নামতায় খিলখিল
প্রেমের প্রপাতে ভাসি আরবার! 

মনে ভাবি দেখা আর নাই হোক
অভিমানও জমা হোক পরাণে,
তোমার পরাণ যদি নাই ছোঁয়
দুর্বল  এ প্রেমের কী মানে ?

চকবাজার

চকবাজারের টিপের দোকান
ফিকে লাগছে আজ,
গলিটাও যেনো অচিন,
মিনু বসাকের পান খাওয়া ঠোঁটে
রঙ নেই আর,
খিলখিল হাসি তার দ্যুতি হারিয়েছে,
কি এক হাহাকার 
টানিয়েছে দখলদারিত্বের পতাকা।
জগতে শূন্যস্থান আর শূন্য থেকেছে কবে ?
শোকের আয়ু কমছে দিনকে দিন....
এমন নানাবিধ প্রতিষ্ঠিত বাক্যালাপে
মুখরিত যখন চারপাশ,
তোমার না থাকা জুড়ে
থাকাটুকু হাতড়ে বেড়াই শুধু।
চক বাজারের অলিগলি
টিপের দরদাম, মাপ উনিশ কি আঠারো
তর্কটুকুই সার,
শূন্য ভালে টিপও ওঠে না আর
শুধু যাওয়া আসাটুকু সম্বল করে বাঁচি।

জলে ডোবা প্রেম

বাতাসে তোমার কথা ভাসে
গা ঘেঁষে বসে থাকো দিনমান,
করি উষ্ণতা ভাগাভাগি।

শীতের  চাদরে চুপিচুপি হাতে হাত
তাক করা চোখে ধুলো দিয়ে
অকারণ অট্টহাসি,
নির্ভরতার সূত্র মেনে গলেগলে পড়ি।

এই বুঝি প্রেম?
বিনাশীর রূপে, তুচ্ছ করে নামধাম
যাবতীয় সামাজিক চল
এসো বাঁচি,
ভেঙে ফেলি জীবনের জরাজীর্ণ ব্যাকরণ
তোমাকেই ভালোবাসি।

সময় অসময়

কষ্টগুলো তেমনি আছে
যেমন আছে শাড়ির বুনন,
সূক্ষ্ম কাজে রঙিন সুতোয়
জমকালো তার পাড়খানি
জমিনজুড়ে নীলচে আকাশ
পেজা তুলোর ওড়াউড়ি ।
রূপারঙা আঁচল যেনো
ঘাস ফড়িংয়ের চঞ্চলতা,
নেপথলিনের বর্ম গায়ে
কয়েকমুঠো বিষন্নতায়
ভাঁজে ভাঁজে ঠাঁই পেলো আজ
মনখারাপের আলমারিতে।

গাঁদাফুলের হলদে আগুন
বিশেষ দিনের ভালোবাসা,
আকাশটাকে বসন করে 
খালি পায়ে প্রভাতফেরি।
তেমনি আছে বসন্তটা
পোড়ায় ভীষণ হাহাকারে,
সবই ছিলো, তুমিই কেবল
হারিয়ে গেলে অচিনপুরে।

 

ট্রাজেডি চকবাজার

চুড়িহাট্টার বিষন্ন বাতাসে
আমি আগুনে পোড়া ছাই,
নাম পরিচয় নাই
তোমার লোভী লকলকে জিহ্বা
আঁকাবাঁকা সর্পিল নদীর মতো
তাড়িয়ে আনে লেলিহান শিখা।

মাখোমাখো প্রেমে যে শিশু জঠরে
পুড়ে খাঁক হলো,
কচিকাঁচা হাত বাবার আঙুল ধরে 
হেঁটে যাবে বহুদূর,
এমন অলিখিত প্রতিজ্ঞায়
সহমরণের হাত ধরে।
এমন করেই ১,২,৩,৪........৭৮
এরা কোনো সংখ্যা নয়!
জীবন! কতোশত নাম !
প্রিয় হাতে সমাহিত হবে বলে
অনন্ত অপেক্ষায়,
মায়ার সংসার আজ হিমঘরে পড়ে আছে একা !

কেমিক্যাল,
সিলিন্ডার,
গলিঘুঁপচি,
ব্রিফিং, টকশোসহ
যাবতীয় কুতর্ক শেষে ক্লান্ত বিবেক
বিমর্ষ পায়চারী করে ঢামেকের বারান্দায়
কোমল শিশুটি তবু বারেবারে জেদ ধরে, 
মাকে নিয়েই ঘরে ফিরবো আজ।