• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৯, ২০১৯, ০৩:২৪ পিএম

‘মমতাজ উদদীন বেঁচে থাকবেন তার কর্মে ও সৃষ্টিতে’

‘মমতাজ উদদীন বেঁচে থাকবেন তার কর্মে ও সৃষ্টিতে’

‘একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। জীবনযাপনে সাধারণ এই অসাধারণ মানুষটি  বেঁচে থাকবেন তার কর্মে, সৃষ্টিতে, মানুষের হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়।  দারুণ রসবোধ ছিলো তার।  তিনি নিজেই কেবল হাসতেন না, অন্যদের হাসাতেনও৷ রসবোধ হলো একজন মানুষের জীবনীশক্তি ৷ যে মানুষ সৃজনশীল, তার মধ্যে রসবোধ থাকবে এটাই স্বাভাবিক ।’ মমতাজউদদীন আহমদ ছিলেন ঠিক তেমনই একজন বহুমাত্রিক সৃজনশীল ব্যক্তি ৷ তিনি সারাজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন।

তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও অভিনেতা। প্রিয় শিক্ষক ও নাট্যকারকে এভাবেই স্মরণ করলেন তার শুভকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও সংস্কৃতিকর্মীরা।  মমতাজ উদদীন আহমদকে নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা  বলেন, অধ্যাপক মমতাজ উদদীন আহমদ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন শিক্ষক, অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও সুবক্তা। তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন একেবারে শুরু থেকে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ স্মরণে এক নাগরিক সভার আয়োজন করা হয়। বাংলাএকাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে যৌথভাবে এ আয়োজন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলা একাডেমি। মাত্র পাঁচ মাস আগে একই মঞ্চে নিজের ৮৫তম জন্মদিনে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। সেই মঞ্চেই তাকে নিয়ে আয়োজিত হয়েছিলো নাগরিক  স্মরণসভা।

 ফেরদৌসী মজুমদারের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিজিএমইএ’র সভাপতি রুবানা হক, নাট্যজন ড. ইনামুল হক, সাংবাদিক আবেদ খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নাট্যজন গোলাম রব্বানী, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি ঝুনা চৌধুরী, এটিএন বাংলার অনুষ্ঠান (উপদেষ্টা) নওয়াজিশ আলী খান, অভিনেতা কেরামত মাওলা, অভিনেত্রী আফরোজা বানু, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, কবি আসাদ মান্নান, অভিনেতা আহসানুল হক মিনু, রেজাউল একরাম রাজু, আরমান পারভেজ মুরাদ, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান প্রমুখ। মমতাজ উদদীন আহমদ ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও অভিনেতা। প্রিয় শিক্ষক ও নাট্যকারকে এভাবেই স্মরণ করলেন তার শুভকাঙ্ক্ষী, বন্ধু ও সংস্কৃতিকর্মীরা। অনুষ্ঠানে মমতাজ উদদীন আহমদের প্রিয় নজরুলগীতি ‘আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দিব না ভুলিতে’ গানটি গেয়ে শোনান শিল্পী ফেরদৌস আরা।

অনুষ্ঠানে রুবানা হক বলেন, মমতাজ উদদীন আহমদ স্যারের বাসায় প্রায় প্রতি রাতেই আমি আর আনিসুল হক যেতাম। মন খারাপ হলেই যেতাম। যেতাম হাসি, আনন্দ ও মজায় মাততে। মমতাজ উদদীন আহমদ একেবারে পরিপূর্ণ জীবন কাটিয়ে গেছেন। বেঁচে থাকলে প্রিয়জন বিয়োগ হবেই। আনিসকে হারিয়েছি, মমতাজ স্যারও চলে গেলেন। কিন্তু আমি মনে করি, আনিস, মমতাজ স্যার বেঁচে আছেন এবং থাকবেন আমাদের জীবনে, স্মৃতিতে।

গোলাম কুদ্দুছ বলেন, সংস্কৃতি জগতের এই উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব আমাদের নাটক ও চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন বাঙালি, স্বাধীনতা সংগ্রামী অসাম্প্রদায়িক মানুষ।

নওয়াজিশ আলী খান বলেন, মমতাজ উদদীন আহমদের সংস্কৃতির প্রায় সকল ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণ ছিল। শিক্ষকতা, নাটক রচনা, মঞ্চ ও টিভি এবং চলচ্চিত্রে অভিনয় সব বিভাগেই খুব সাবলীল বিচরণ ছিল তার।

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, বাংলা একাডেমির উচিৎ হবে মমতাজ উদদীন আহমদের রচনা সমগ্র একসাথে প্রকাশ করা। সেইসঙ্গে নাট্যকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তার কাজ ও স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।

কেরামত মাওলা বলেন, মৃত্যু মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। যেদিন মমতাজ উদদীন মারা যান সেদিন থেকে কর্ম থাকে না। আর যে মানুষ জীবনে অনেক কাজ করে যান, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যান কর্মের নিদর্শন- তার মৃত্যু নেই। সমাজ তাকে মনে রাখে, স্মরণ করে। মমতাজ উদদীন আহমদকেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার কাজ বেঁচে থাকবে সবার হৃদয়ে।

আফরোজা বানু বলেন, থিয়েটারের সব সদস্যের ‘স্যার’ এর সঙ্গে খুব সুন্দর সুন্দর স্মৃতি রয়েছে। স্যার নেই কিন্ত তিনি না থেকেও আমাদের মাঝে আছেন। তিনি তার সৃষ্টি দিয়ে আমাদের মাঝে বিরাজ করবেন চিরকাল।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর মমতাজ উদদীন আহমদ গত ২ জুন রাজধানীর এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন তাকে সমাহিত করা হয় তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে।