• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০১৯, ০৬:৩৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৩, ২০১৯, ০৭:৫৪ পিএম

মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের ছড়া

মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের ছড়া

শাসন

: বউকে আমি তিনবেলা দেই খাবার,
রাতের বেলা বেডরুমে দেই শুতে,
ইদে - শাড়ি বোশেখ এলে আবার,
ঘুরিয়ে আনি পার্কে এবং জু-তে।
নিজের বউকে দিচ্ছি খেতে নিজে,
দেখছে সবাই, বলছে না কেউ দারুন।
- আমি জানি কাজটা জটিল কী যে
ওটা তবে আমার উপর ছাড়ু–ন।

প্রেম

পথ চলতে মাড়িয়ে গেলাম
বুনো লতা কতো,
আমার পথে পড়ল কেন
বেয়াকুবের মতো?

সুস্থ মতো থাকতে পারে
একটি কোণে খাড়া-
তার বেলা নেই - শুধু শুধু
গড়িয়ে বেড়ায় পাড়া।

বয়েই গেছে মাড়িয়ে ওদের
মনের মজা পেতে,
ওরাও তো সব পায়ে পড়ে
পায়ের পাড়া খেতে।

কদিন বাদে বাগানপথে
চোখ মেলে চাই, আর,
দেখি ওরা সবাই রাস্তা
হয়ে গেছে পার।

ওই পাড়ে এক বেড়া আছে
রোদের মিঠাই খেয়ে,
লতাগুলো উঠেছে ওই
বেড়া বেয়ে বেয়ে।

আমায় দেখে পুব বাতাসে
উঠল বেড়া দুলে,
উঠল হেসে বুনো লতা
হাজার ফুলে ফুল

হৃদয় দিয়ে বোঝা

১ ২ ৩ রোল নম্বর- ওরাই পড়ে একা?
বই যা আছে মনে হচ্ছে ওদের জন্য লেখা।
১২ ১৩ ২৭ ২৮- আছে এমন রোলও,
ওদের জন্য এই বই কি কাজের কিছু হলো?
এই ছেলেরা! মিটমিটিয়ে দিচ্ছ কেন হাসি?
-“স্যার, আমাদের রোলনম্বর ৮০ ৭৯।”

ক্রিয়াপদের সংজ্ঞা পড়ে বোঝ ক্রিয়াপদ?
না বুঝলে ছাত্র খারাপ, তুমি বদের বদ।
যোগ বিয়োগে গুন করলে বিয়োগ হবে-বোঝ?
বুঝলে বোঝ, না বুঝলে টিচার গিয়ে খোঁজো।
ডেবিট হবে খরচ হলে ক্রেডিট হবে আয়ে,
আয় বোঝ না? শাস্তি হবে আয় না বোঝার দায়ে।

বই মানে তো বুঝিয়ে বলা- নিজে আগে বোঝা।
কী বুঝবেন?- প্রশ্ন কঠিন, উত্তরটা সোজা-
সবচে’ খারাপ ছাত্র যেটা - গোবরগনেশ বলদ,
বইয়ের কথায় পায় যে খুঁজে গলদ এবং গলদ।
চারিপাশের জগৎ বোঝার কায়দা ওরও আছে,
ব্যাখ্যা আছে সেই জগতের পষ্ট নিজের কাছে,
বুঝতে গিয়ে নিয়মকানুন দাঁড়া করায় ও যা-
বোঝা মানে ওর সে নিয়ম হৃদয় দিয়ে বোঝা।

গাছ লাগাই না

গাছ লাগাই না। গাছ লাগানোর জায়গা কোথায় পাব?
পরের জায়গায় গাছ লাগাব—কেমন করে ভাব?
দু‘দিন পরে গাছ তুলবে কানে ধরে টেনে,
গাছ লাগানো ছুটিয়ে দেবে মকদ্দমা এনে।
ভাড়া-বাসায় ঢাকায় থাকি হাত-পা করে জড়ো,
বাসা মানে পায়রার খোপ—তার চে' একটু বড়ো।

স্বপ্ন দেখি বাসায় আমার গাছ থাকবে কিছু,
জাম জামরুল আম কাঁঠাল নিম মেহগনি লিচু।
বাসা থাকবে শ্যাম-সুশীতল ঘেরা গাছে গাছে,
স্বপ্ন আমার টবের ভেতর বন্দি হয়ে আছে—
আদা মরিচ পাতাবাহার তুলসি গাঁদা টবে,
আমি যে এক বৃক্ষপ্রেমিক—ওইটুকুতে হবে?
বুদ্ধি এলো মাথায় একটা, অমনি তুড়ি মারি—
গাছ না লাগাই, গাছ কাটা তো বন্ধ করতে পারি। 
গাছখেকোদের ডেকে আমি আদর করে বলি—
গাছ কেটো না, ফুল কেটো না, কিংবা ফুলের কলি।
আমার কথা শুনে,


একশ হাজার প্রশ্ন ক‘রে দিল ধুনে ধুনে।
: প্রয়োজনে কাটব না গাছ, ওরে আমার সোনা!
গাছ লাগিয়ে বসে বসে করব আরাধোনা?  
পাগল যে কী বলে?
— তবে কাটো, গাছ না কেটে নাইবা যদি চলে।
গাছও কাটো, ডালও কাটো, পাতাও কাটো, তবে
জরিমানা-টরিমানা—একটা কিছু হবে।
: জরিমানা! সে কী!
বুঝলাম না তোমার কথা, বুঝিয়ে বলো দেখি। 
— বলছি তবে শোনো,
গাছ কাটলে মুক্ত বাতাস আর পাবে না কোনো।
কথাটা কী মানো?
মরবে তুমি, তোমার সাথে তোমার পোলাপানও।
বাতাস ছাড়া প্রাণ বাঁচে না সবার এটি জানা,
তাই তো জরিমানা।  
: জরিমানা-টরিমানা—কতো টাকা শুনি? 
— টাকা দিয়ে যায় না কেনা গাছের কোনো গুণই।
গাছের কাজ আর কেউ পারে না, কেবল পারে গাছই,
গাছের বদলা গাছ লাগালে আমরা জানে বাঁচি।
একটা বড়ো গাছ কতটা বাতাস ছাড়ে, ভাবো,
কয়টা চারায় সেই পরিমাণ বাতাস আমরা পাব?
শোনো বলি তবে,
একটা কাটলে পনেরোটা গাছ লাগাতে হবে।
: একটা কাটলে পনেরোটা!—পাগল নাকি, আরে!
— পনেরোটা চারা যে সেই বাতাস দিতে পারে।
গাছও কাটো, ডালও কাটো, পাতাও কাটো, তবে,
শর্ত এটা শিরোধার্য—মানতে তোমার হবে।

/ডিজি