• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ২৯, ২০১৯, ০৯:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৯, ২০১৯, ০৯:১৪ পিএম

সমর চক্রবর্তীর কবিতা

সমর চক্রবর্তীর  কবিতা


নিঃসঙ্গ শৈল সমুদ্রে

অস্থির জলতরঙ্গও স্থির হয় একদিন 
নদী জানে বুক থেকে কত জল নেমে গেলে
                      হৃদয়ে জমা হয় বালুকাময় হাহাকার

কত  স্রোত বদলে উজানে জেগে ওঠে নির্জন দ্বীপ
সহাস্য শরীরে কল্লোল তুলে সে উন্মুখর অস্থির 


  
বোবা মাছ ডুবে থাকে জলে
জোছনায় বিচ্ছুরিত ফেনিল তরঙ্গে ভাসে
                   থরোথরো কম্পমান যোনি
আগ্নেয় লাভাস্রোতে বদলে যায় নক্ষত্রের কক্ষপথ

তবে কে সে জড়ো করেছে বুকে এমন পাথর প্রবাল?
রেখেছে নিজেকে নিমজ্জিত সমুদ্রের অতল জলে
গম্ভীর সেই প্রহরে আমার নেই কিছু অধিকার     
রাত্রির আকাশে যা কিছু উত্তুঙ্গ নক্ষত্র হয়ে জ্বলে 

জানি না মহিমা তবু আধিপত্য হোক অফুরান  
বাজুক শরীরে মন্দিরের ঘণ্টা মাধুর্যে বিহব্বল
ঋতুভাষা ভুলে যাবো, ভুলে যাবো বীজ বপনের আশা 
ভেনাসের জন্ম হোক তবু - নিঃসঙ্গ শৈল সমুদ্রে

আয়নার ভেতরে

 ড্রেসিংটেবিলের সামনে পোশাক বদলের মতো 
                          সময় বদল করছ মেয়ে 
আয়নার ভেতরে উড়ছে গ্রীষ্মের তপ্ত হাহাকার
যেন সে এক রূপকথার বৃক্ষ
ঝরাপাতার আগুন জ্বেলে বিদীর্ণ করে শোভিত বাগান

পাতা ঝরে স্বপ্ন পোড়ে
কে যেন একাকী নদীর জলে ভাসায় নৌকা 
                                   গম্ভীর প্রহরে

কে হাসে কে কাঁদে 
সকল মানুষের ভেতরে আছে এক মগ্ন জলাশয়
আবছা আলোয় দূর গ্রামে যেন দীপালোক জ্বলে
টের পাই আমি আসন্ন হাওয়ায় বার্তা - তুফানের
বয়ে যাক ঝড় উথাল পাথাল দুর্বার উৎসাহে

অলব্ধ সংগীতের মতো পড়ে থাক হৃদয় নিভৃতে নির্জনে


একটি ফুৎকার

একটি ফুৎকারেই নিভে গেলো মোমবাতি
আর কোনো স্বপ্নই জ্বালবো না আকাশে-
রৌদ্রের  পোড়াদাগ নিয়ে একফালি সবুজ
                              শুয়ে থাক ঘাসের অন্তরে

পুরুষ চোখের পিপাসা বাতাসে ওড়ে
          তীর্যক সে ভাষা নারীমুখে ফেলে যায় ছায়া
আকাশ নীলের মতো হৃদয় বিস্ময় - তার
ছিপ হাতে তবু  রোমাঞ্চিত বালকের বেদনা বসে থাকে
                     মেঘের অর্গল খুলে চুপে চুপে নির্জন একা
                                                    স্বপ্নের ঘাটে

উচাটন মন তার  খোদিত হয় জলের প্রস্তরে
অজ্ঞাত বাগানে ছুরি হাতে ঘোরে অন্ধ বালক তবে কার খোঁজে
যেন সে নিজেই তরবারি এক নিজেরই পশ্চাতে

স্মৃতি-বিস্মৃতি যেন অপসৃয়মান এক ছায়া চন্দ্রগ্রহণে

বামুনের মেয়ে

স্বপ্নের ছায়া নিয়ে ঘুরি ফিরি তোমার চারিপাশ 
রটে যায় একদা সে গুজব রাতের আঁধারে
শূদ্রের ছেলে লিখেছে এক প্রেমপত্র বামুনের মেয়েকে
ছলাকলা অজুহাতে রোজ নাকি কাছে ডাকে তাকে

অর্মাজনীয়  অপরাধে গুরুদণ্ড তার
শ্বাস - প্রশ্বাস ঘিরে ঘোরে তার জল্লাদের তরবারি

দরোজার ওপাশে দীর্ঘশ্বাস ফেলে যায় সঙ্গম-উতলা নারী
শীৎকারের ভেতর থেকে কেন কান্না ভেসে আসে তার?
ভূমিকম্পে ছিটকে পড়া সে কঙ্কাল জড়ো করি ঘুমঘোরে
সাজিয়ে রাখি সারি সারি স্বপ্নের উলঙ্গ কন্দরে।

সীমান্তের এপারে নিমজ্জিত জাহাজের মতো ডুবে থাকি আমি
কোথায়, কোথায় তুমি বামুনের মেয়ে?
নদীর জলে বুদ্বুদ রেখায় লিখে যাও তোমার ছদ্মনাম
অস্পৃশ্য আমি ছোঁব না তোমাকে - আমি শূদ্রের ছেলে।

দহন
কাক্সক্ষার আগুন জ্বেলে উসকে দিচ্ছ বারবার লেলিহান
দহনে দহনে সপ্রতিভ আমি নিয়তই অঙ্গার।

যেন অচেনা এক প্রবাল দ্বীপে-তার নির্জন সৈকতে
ভাঙে ঢেউ জলরাশি আঘাতে আঘাতে-
তবু বুক পেতে আছে সকরুণ এক মরুভূমি অতলে তার 
                                            জলের সংসার
কী বেদনা আর নুড়ি পাথরের এ বালুকাবেলায়?
উসকে দেওয়া কামনার বহ্নি হরিৎ অরণ্য পোড়ায়!


/ডিজি