চন্দ্র প্রভায় বৃষ্টি উপাখ্যান
মন ভালো না থাকার এই আজ
পুষ্প শরীরে বর্ষার নিপুন কারুকাজ
কতোটা নিদারুণ হয়েছে চিরতরুন
মন ভালো না থাকার এই আজ
চিরতরে কিছুটা অবসাদ মুছে যাক
জলমগ্ন সারাটাদিন ও পাঁচিলের ধারে
ফোঁটার বিন্ধু জড়ো হয় পুরনো ইটের বাড়িঘরে
মন ভালো না থাকার এই আজ
শহর জুড়ে নেই ব্যাস্ততার ধাঁচ
পাশবালিশে মুখ গুঁজে স্বপ্নের সাগরে
নয়তো যা কাওকে না বলার মত
তাই মনে করে দুঃখ বিলাস করে
মন ভালো না থাকার আজ
গুনগুনিয়ে আনা সুরটাও বেসুরো শোনায়
বর্ষা কবিতায় মন বসানো দায়
ছন্দবদ্ধ শব্দ প্রতিবার গরমিল পায়
মন ভালো না থাকার এই আজ
বাগান বৃক্ষে এক হাঁটু গল্প জমেছে
কার্নিশ ছাড়া ছাঁদটায় স্বল্প পায়চারিতে
হঠাৎ আসা তীব্র দক্ষিণের বাতাসের হীমতায়
পাঞ্জাবিটা ভিজে যায় কান্নার ছিটে ফোঁটায়
মন ভালো না থাকার এই আজ
বিষণ্ণতার পাথর আটকিয়েছে পড়েছে বাজ
সমস্তটাই কেন বারবার পিছু ডাকে
এইতো সেদিনও ফিরে আশা হলে
একবারও নাম ধরে বলে নি
"এইভাবে বুঝি যেতে আছে একা
ঝরা বাদলার দিনে ও পথ যে ভীষণ ফাঁকা"
দুই.
মন ভালো না থাকার এই আজ
আকাশ পাখিও পুরোটাই লোপ পাক
কুঁড়িয়ে কুড়িয়ে মর্মর মূর্তির রূপ দেহে
ঘুম পাড়ানি গুলো অবেলায় যায় মরে
মন ভালো না থাকার এই আজ
আনমনের হাজার বছরের পুঁথি পাঠ
প্রলম্বিত ঠোঁট হাস্যদোল কে দিয়েছে বিদায়
ঢেউ তোলা রাজহংসেরা ফিরেছে কি কাদায়
মন ভালো না থাকার এই আজ
নান্দনিকতা পায় না আষাঢ়ের খাঁজ
তপোবন শালবন উজার হয়েছে সবই
কোথায় সেই জুড়ে দেওয়া হাতদুটি
এতোটাই নিষ্প্রভ কি করে
ভালোবাসা এই তো তবুও অঙ্গারে
মধুকুলে রোদ্দুর নেয় মিত্র সদলবল
মিছিলে বন্ধ নয় মুলসড়কের পারাপার
একেক গন্তব্য থিতু হয়ে যায়
এই অজুত শতক অলিগলির
চেনা রোড সেই একটাই
গোলাপ চেরি আর কবিতার বই
কগজ কলমের কিছু টিপ সই
মন ভালো না থাকার এই আজ
নিষেধের অগন্তি টুকরো কাঁচ
চোখ নিভিয়েই অজ্ঞতা মারিয়ে যাওয়া
বাইরের কেও নেইটুকু তে দৃষ্টির ছোঁয়া
বেথা বেড়ে উঠে তীব্র অসহ্য এক যন্ত্রণা
বেদনার পাখাখানি থেমেছে এখন
আর দূর হবার নেই যখন
কোনখানে কিছুই থাকবে না
মন ভালো না থাকার এই আজে
মন আলো না থাকার সেই লণ্ঠনে
তার কিছুই মনে পরেনা
বয়সের ভার দুয়ারে খিল দেয়না
কড়া নাড়িয়ে কবিতার নারী বলবেনা...
"অসীম অশ্রুর বান ...!
থামাতে এসেছি
চন্দ্রপ্রভায় বৃষ্টি উপাখ্যান !...
বৃষ্টি জলে কেঁদেছ কি ?
প্রভাত থেকেই ঘনিয়েছে দীঘল মেঘমালা...
ওপাশের আকাশে কালো পাথরের খেলা
চিবুকে হাত যায় আপনাতে ওই সেই চিঠিতে
বেশিদিন নয় মাসখানেক পুরনো হয়েছে
লেখার শেষটা জুড়ে একটাই জিজ্ঞাসা
এই বৃষ্টি জলে যায় কাঁদা ...?
আজ বুঝি অবিরত ধারায় সারাটাদিন
বর্ষা সেতারা বাঁজায় বিরতিহীন
দীঘির সিঁড়ি ঘাটে আধকাঁচা কাপড়ে
বাদল তার নিঃসঙ্গ গীত গাইবে
এপাশের ঝোপে বুনোহাঁস নিঃশব্দে
রক্তিম পদ্মের দোলাচল দেখবে
বিরাট শিমুলের শিকড় নিঙরে
এলোমেলো হয়ে অনেক জমে
এইসব বর্ষা এলেই কেন দেখায়
এই বৃষ্টি জলে কাঁদাও যায়?
ঘরময় সন্ধ্যে বাতি নিভিয়ে দিতেই
খিড়কি পাশে দূরদৃষ্টিতে দাড়িয়ে
করুণ আহ্বান কাঁপা গলাময়
দুই
"এই যে শুনছো?
হিমালয় গলে ঝর্ণা নিরবধি
এই যে শুনছো?
বৃষ্টি জলে কেঁদেছ কি? ..."
ঝুম হয়ে আরও আসে ঝাপসা জলে
পথজলে কাঁদা হুরমুরিয়ে পড়ে
প্রচণ্ড জলের ছটা মুখচোখে নামে
কান্নায় একা নয় আকাশ কেঁদে
আমার অন্তরেও আকুতি ভরে
তখনি কাজল লেপটে যায়
নয়নের অন্তরালে অন্তিম দীর্ঘশ্বাসে
তখনি আবছায়া লাগে ভীষণ
ক'ফোটা গাল বেয়ে নামে...!
স্মৃতির রঙ পেন্সিলে এঁকে
তৈলচিত্র ঠিক তোমার অবয়বে
এ'বুকে অঝর বৃষ্টি আসে
শুকনো এক কদম বনে
এই আমিই কেঁদে ফেলি
তখনো সেই কিঙ্কর রিনিঝিনি
এই যে শুনছো?
বৃষ্টি জলে কেঁদেছ কি?
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
শহরের কতোখানি ঘরের পরে
সেই দালানের ঠিকানা পাবো
তারাটুকু দেখিয়ে বলব।
কতরাত চশমার দাগে জর্জড়িত চোখে
নিরব ভাষাগুলো পাতাজুড়ে তুলেছি
তারাটুকু দেখেছি বলব
সময়ের ফেরিওয়ালাতে বারেবারে এনেছি
যখনি দুচোখ ভরে কেদেছি
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
চেয়ারের গদি অনেকটা ঢেবে গেছে
জানলা খুলে প্রহসন পাগলামিতে
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
উওরের হাওয়া রুক্ষ বয়েছে পর্দা সড়িয়ে
হাতের ছাপটুকু ভেজানো পাচঁ আঙ্গুলে
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
ইচ্ছের প্রবল অন্তরীক্ষ বাংলা সনের বছরে
হেমন্ত বেলা রৃপোলি ছায়ায় মাতে
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
মনের ভেতর জ্বালিয়ে মোমের মতন
আভা ছড়িয়েছে এক আকাশে তখন
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
এই মেঘ এই রোদ্দুর এখন তখন
স্পর্শে সুহাস বিপুল পাবার আয়োজন
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
বাগান কবিতায় রকমারি ঋতুর আন্দোলনে
জলছবির পত্রের ধূসর স্লোগানে স্লোগানে
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
দূরের অরণ্য করুণ গীতিতে সুরে অম্লান
কেমন যেন গম্ভীর স্রোতে বালিও ম্লান
তারাটুকু দেখিয়ে বলব
"নেভা নেভা অসীম ছায়াপথ ধরে নামে
সুবিশালে কি একা মিটিমিটি করে ফিরে
কোন বিনিময়তা নয়
ভালোবেসে ছড়ালেই হয় ..."
তারাটুকু দেখিয়েই তখন বলব...
"সেই বাড়ির উঠোনের ল্যাম্পপোষ্টে
একা জোনাকটি এখনো উড়াউড়ি করে!